শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে টেট যোগ্যতা নিয়ে একটি মামলায় (Compulsory TET Case) বড় বিতর্ক উঠেছিল যা সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) পর্যন্ত গড়িয়েছে। ২০১১ সালের ৩ জুলাই একটি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়, যার আবেদনের শেষ তারিখ ছিল ১৬ জুলাই। নির্বাচিত প্রার্থীরা ২০১২ সালের ১৩ মার্চ নিয়োগপত্র পান এবং ১৭ মার্চ চাকরিতে যোগ দেন। তবে নিয়োগের সময় কোনো শিক্ষকের কাছে টেট সার্টিফিকেট (TET Certificate) ছিল না। একজন শিক্ষক ২০১১ সালের ২৫ নভেম্বর এবং অন্যজন ২০১৪ সালের ২৪ মে টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এই যোগ্যতার অভাবের কারণে তাদের চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
Compulsory TET Case মামলায় শিক্ষকদের বরখাস্তের সিদ্ধান্ত
২০০৯ সালের শিক্ষার অধিকার আইনের ২৩(২) ধারা (RTE 2009) অনুসারে, ২০১৫ সালের ৩১ মার্চের আগে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ২০১৯ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। বরখাস্ত শিক্ষকরা দাবি করেন যে, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে তাদের সরানোর আগেই তারা টেট পাস করেছিলেন। কিন্তু এলাহাবাদ হাইকোর্টের একক এবং বিভাগীয় বেঞ্চ এই যুক্তিকে খারিজ করে দেয়। হাইকোর্ট মনে করে যে, নিয়োগের মুহূর্তেই টেট যোগ্যতা থাকা দরকার। এর ফলে ২০১৮ সালের ১২ জুলাইয়ের বরখাস্তের আদেশ বজায় রাখা হয়। এই সিদ্ধান্ত শিক্ষকদের RTI আইনের সময়সীমা মেনে চলার অধিকারকে উপেক্ষা করে।
হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের বিস্তারিত বিশ্লেষণ
এলাহাবাদ হাইকোর্টের একক বেঞ্চ শিক্ষকদের আবেদন খারিজ করে বলে যে, প্রাথমিক যোগ্যতা ছাড়া নিয়োগ অবৈধ। বিভাগীয় বেঞ্চও এই মতামতকে সমর্থন করে এবং বরখাস্তকে সঠিক বলে মনে করে। শিক্ষকরা যুক্তি দেন যে, তারা সময়ের মধ্যে টেট সার্টিফিকেট পেয়েছেন কিন্তু হাইকোর্ট তা গ্রাহ্য করে না। এই রায় ২০২৪ সালের ১ মে জারি হয় যা সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়। হাইকোর্টের দৃষ্টিভঙ্গি শিক্ষার অধিকার আইনের ধারাকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে। ফলে শিক্ষকরা দীর্ঘদিন চাকরিহীন অবস্থায় থাকতে বাধ্য হন।
সুপ্রিম কোর্টের যুগান্তকারী রায়
২০২৫ সালের ৩১ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি বি. আর. গাভাই এবং বিচারপতি কে. বিনোদ চন্দ্রনের বেঞ্চ এই মামলা শোনে। সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের রায়কে ভুল বলে ঘোষণা করে এবং তা বাতিল করে দেয়। আদালত ২০১৮ সালের ১২ জুলাইয়ের বরখাস্তের নির্দেশও রদ করে। অর্থাৎ এই Compulsory TET Case Certificate মামলায় চাকরীচ্যুত সকল শিক্ষকদের কানপুর নগরের জে. পি. জুনিয়র হাই স্কুলে অবিলম্বে পুনর্বহাল করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সাথে চাকরির ধারাবাহিকতা, সিনিয়রিটি এবং অন্যান্য সুবিধা প্রদানের আদেশ জারি হয়। Compulsory TET Case এর এই রায় টেট যোগ্যতা সংক্রান্ত মামলায় নতুন দিশা দেখায়।
মূল পর্যবেক্ষণ এবং আইনি ব্যাখ্যা
সুপ্রিম কোর্ট বলে যে, হাইকোর্ট শিক্ষার অধিকার আইনের ২৩(২) ধারাকে সঠিকভাবে বুঝতে পারেনি। আইন অনুসারে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যোগ্যতা অর্জন করলে চাকরি বাতিল করা যায় না। এই সিদ্ধান্ত শিক্ষক নিয়োগে সময়সীমার গুরুত্ব তুলে ধরে। বিচারপতিরা স্পষ্ট করে যে, প্রাথমিক যোগ্যতার অভাব সত্ত্বেও পরবর্তী অর্জন গ্রাহ্য। এটি দেশব্যাপী শিক্ষকদের জন্য আশার বার্তা নিয়ে আসে। রায়টি আইনি জটিলতা সরিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়।
আরও পড়ুন, পোস্ট অফিস থেকে ব্যাংক একাউন্ট বা ব্যাংক থেকে পোস্ট অফিসে কিভাবে টাকা জমা করবেন?
পশ্চিমবঙ্গেও এই রায় কার্যকর হবে
সংবাদ সূত্রের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গেও প্রায় ৯০০০০ শিক্ষকের টেট পাশ সার্টিফিকেট (TET Certificate) ছাড়া রয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই এই ক্যাটাগরিতে পড়তে পারেন। এই রায় ঘোষণার ফলে তাদের ও চাকরি বাতিল নিয়ে দুশ্চিন্তা কমবে। এবার আদালতের সিদ্ধান্ত ও আইনি ব্যাখ্যা কিভাবে অন্য রাজ্যে প্রতিফিলিত হয়, সেটাও দেখার বিষয়।
আরও পড়ুন, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মীরা আরও ৭.১% করে পাবেন। অর্থ দপ্তরের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
অনুরূপ মামলার প্রভাব এবং ভবিষ্যৎ দিশা
Supreme Court এর এই ঐতিহাসিক রায় Compulsory TET Case এর ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হয়ে উঠবে যা অন্যান্য রাজ্যের শিক্ষকদের প্রভাবিত করবে। আরটিই আইনের অধীনে যোগ্যতা অর্জনের সময়সীমা মেনে চললে বরখাস্ত অবৈধ বলে প্রমাণিত হয়। বহু শিক্ষক যারা একই সমস্যায় ভুগছেন, তারা এখন নতুন করে আশা পাবেন। এই সিদ্ধান্ত শিক্ষা ব্যবস্থায় নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও ন্যায়সঙ্গত করে তুলবে। সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এই নজির অনুসরণ করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে, এটি শিক্ষকদের অধিকার রক্ষায় একটি বড় পদক্ষেপ।