কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে অষ্টম বেতন কমিশন (8th Pay Commission for Central Government Employees) নিয়ে উত্তেজনা চরমে। সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত অনুসারে, এই কমিশন ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হতে পারে। এতে প্রায় ৫০ লক্ষ কর্মী এবং ৬৯ লক্ষ পেনশনার উপকৃত হবেন। সরকারি ঘোষণার আগেই বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সম্ভাব্য বেতন বৃদ্ধির হিসাব (8th Pay Sommission Salary Calculation) ফাঁস হয়েছে। আর সেই অনুমান সঠিক হলে নুন্যতম মূল বেতন ১৮,০০০ টাকা থেকে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৮৬ বেতন বেড়ে হবে প্রায় ৫১,৪৮০ টাকা! যা হিসাব করলে প্রায় তিনগুণ। এই যে বেতন বৃদ্ধির কথা শোনা যাচ্ছে, তা কি আদৌ বাস্তবে হবে? এই প্রতিবেদনে বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনার মাধ্যমে বেতন বৃদ্ধির সেই সম্ভাব্য হিসাব নিয়ে নিয়ে আলোচনা করা হবে।
History of Central Government Employees Pay Commission
স্বাধীনতার ঠিক আগে ১৯৪৭ সালের ১ জুলাই থেকে কেন্দ্রে প্রথম পে কমিশন শুরু হয়, যা কর্মীদের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্য নিয়ে গড়ে ওঠে। দ্বিতীয় কমিশন ১৯৫৯ সালে চালু হয়, যা বেতন কাঠামোকে আরও সুসংহত করে। তৃতীয়টি ১৯৭৩ সালে আসে, যখন মুদ্রাস্ফীতির চাপ বাড়ছিল। চতুর্থ কমিশন ১৯৮৬ সালে কার্যকর হয়, যা বেতন স্কেলকে আধুনিক করে তোলে। পঞ্চম কমিশন ১৯৯৬ সালে ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে গঠিত হয়। ষষ্ঠ কমিশন ২০০৬ সালে ‘সম কাজে সম বেতন’ নীতি প্রতিষ্ঠা করে বিভিন্ন সেক্টরের একই গ্রেডের কর্মীদের একই রকম বেতন দেওয়ার পদ্ধতি চালু করে। আর ২০১৬ সালে চালু হওয়া সপ্তম বেতন কমিশন আরও আধুনিক হয়। আর ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হতে পারে অষ্টম বেতন কমিশন (8th Pay Commission).
আগের বেতন কমিশন বনাম অষ্টম বেতন কমিশন
প্রতিটি কমিশন মূলত বেতন এবং ভাতা বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছে, কিন্তু অর্থনৈতিক ভারসাম্যকেও বিবেচনা করেছে। সপ্তম কমিশনে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৫৭ ছিল, যা ন্যূনতম বেতনকে ৭,০০০ থেকে ১৮,০০০ টাকায় নিয়ে যায়। এতে কর্মীদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, কিন্তু সরকারের খরচও বাড়ে। ষষ্ঠ কমিশন সমানতার নীতি প্রয়োগ করে সকল স্তরের কর্মীকে উপকৃত করে। অষ্টম কমিশনে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৮ হতে পারে। আর তাতে প্রায় ৩ গুন বেসিক বেতন বেড়ে যেতে পারে।
ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরের গুরুত্ব এবং গণনা পদ্ধতি
ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর হলো পুরানো বেতনকে গুণ করে নতুন বেতন নির্ধারণের চাবিকাঠি। সপ্তম কমিশনে এটি ২.৫৭ ছিল, যা বেতনকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায়। অষ্টম কমিশনে এর অনুমান ২.২৮ থেকে ২.৮৬, এমনকি ৩ পর্যন্ত যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ১৮,০০০ টাকা মূল বেতন ২.৮৬ ফ্যাক্টরে গুণ করলে হয় ৫১,৪৮০ টাকা।
এর সাথে DA, HRA এবং TA যোগ হলে মোট বেতন ৭০,০০০ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে প্রাক্তন অর্থসচিবের মতে, ১.৯২ ফ্যাক্টরে ন্যূনতম বেতন ৩৪,৫৬০ টাকা হবে। এই গণনা কর্মীদের প্রত্যাশা এবং সরকারের বাস্তবতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে।
আদৌ কি ৩ গুন বেতন বাড়বে?
যদি ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ৩ হয়, তাহলে বেসিক বেতন তিনগুণ বাড়বে, কিন্তু ডিএ ০ হয়ে যাবে। তাই আপাত দৃষ্টিতে ৩ গুন বেতন বৃদ্ধি মনে হলেও বাস্তবে তা নয়। অর্থনৈতিক চাপ বাড়বে। ২.৪৬ ফ্যাক্টরে লেভেল ১-এর বেতন ৪৪,২৮০ টাকা হয়। এটি মুদ্রাস্ফীতির সাথে তাল মিলিয়ে ক্রয়ক্ষমতা বজায় রাখে। সরকার সতর্কতার সাথে এই সংখ্যা নির্ধারণ করবে।
বিভিন্ন লেভেলে সম্ভাব্য বেতন বৃদ্ধি
অষ্টম কমিশনে লেভেল ১-এর ১৮,০০০ টাকা থেকে বেতন ৪৪,২৮০ টাকায় উন্নীত হতে পারে। লেভেল ২-এর ১৯,৯০০ থেকে ৪৮,৯৭৪ টাকা, এবং লেভেল ৩-এর ২১,৭০০ থেকে ৫৩,৪৬৬ টাকা হবে। লেভেল ৪-এ ২৫,৫০০ টাকা ৬২,৮৫০ টাকায় বাড়বে। লেভেল ৫-এর ২৯,২০০ থেকে ৭১,৯২৩ টাকা, এবং লেভেল ৬-এর ৩৫,৪০০ থেকে ৮৭,৯২৪ টাকা। লেভেল ৭-এ ৪৪,৯০০ টাকা ১,১০,৫৫৪ টাকায় পৌঁছাবে। এই অনুমান ২.৪৬ ফ্যাক্টরের ভিত্তিতে, যা সকল স্তরে ন্যায়সঙ্গত বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। নিচের টেবিল থেকে এটি দেখতে পারেন-
| লেভেল | বর্তমান বেতন (টাকা) | প্রস্তাবিত বেতন (টাকা) | বৃদ্ধির পরিমাণ (টাকা) |
|---|---|---|---|
| ১ | ১৮,০০০ | ৪৪,২৮০ | ২৬,২৮০ |
| ২ | ১৯,৯০০ | ৪৮,৯৭৪ | ২৯,০৭৪ |
| ৩ | ২১,৭০০ | ৫৩,৪৬৬ | ৩১,৭৬৬ |
| ৪ | ২৫,৫০০ | ৬২,৮৫০ | ৩৭,৩৫০ |
| ৫ | ২৯,২০০ | ৭১,৯২৩ | ৪২,৭২৩ |
| ৬ | ৩৫,৪০০ | ৮৭,৯২৪ | ৫২,৫২৪ |
| ৭ | ৪৪,৯০০ | ১,১০,৫৫৪ | ৬৫,৬৫৪ |
বিঃদ্রঃ
• প্রস্তাবিত বেতন = বর্তমান বেতন × ২.৪৬
• সকল স্তরে একই ফ্যাক্টর (২.৪৬) প্রয়োগ করা হয়েছে।
পে কমিশনের শর্তাবলী
অষ্টম বেতন কমিশনের TOR দেশের অর্থনীতি, সরকারি ব্যয় এবং বেসরকারি খাতের বেতনকে বিবেচনা করবে। আগের কমিশনগুলো শুধু বেতন-ভাতায় সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু এবার অর্থনৈতিক ভারসাম্যের উপর জোর। রাজ্য সরকার এবং কর্পোরেট সেক্টরের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে হবে। এটি বেতন বৃদ্ধিকে বাস্তবসম্মত করে তুলবে। বেতন কমিশনের সুপারিশগুলো জানুয়ারি ২০২৬ থেকে কার্যকর হলে কর্মীরা স্বস্তি পাবেন। এই নতুন পদ্ধতি সরকারি চাকরির আকর্ষণ বাড়াবে।
TOR-এর প্রভাবে সরকারি কর্মীদের সুবিধা
TOR অনুসারে, বেতন কমিশন মহার্ঘ ভাতা (Dearness Allowance) এবং HRA-এর হারও (বাড়ি ভাড়া ভাতা) সংশোধন করবে। এতে ছোট শহরের কর্মীরা বেশি উপকৃত হবেন। TA-এর হিসাবও আধুনিক যাতায়াতের সাথে মিলবে। সামগ্রিকভাবে, এটি বেতনের পাশাপাশি জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করবে। পেনশনারদের জন্যও একই সুবিধা প্রযোজ্য। এই পরিবর্তন অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা করবে।
আরও পড়ুন, কাদের SIR করতে হবে না ,দেখুন তালিকা।
আর্থিক চ্যালেঞ্জ এবং সরকারের কৌশল
অষ্টম বেতন কমিশনের (8th Pay Commission) ফলে সরকারের খরচ ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। GST, কর্পোরেট ট্যাক্স এবং বিলগ্নিকরণ থেকে আয় হবে, কিন্তু বোঝা বাড়বে। সপ্তম পে কমিশনে ১ লক্ষ কোটি ছিল, এবার তা আরও বেশি। প্রায় ৫৫-৬০ লক্ষ কর্মী এবং সমান পেনশনার এতে জড়িত। সরকারকে সতর্কতার সাথে পরিকল্পনা করতে হবে। অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে এই খরচ ম্যানেজ করা সম্ভব। এটি কর্মীদের মনোবল বজায় রাখবে এবং অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে।