জরুরি খরচ, বাড়ির সংস্কার, ছুটির প্ল্যান বা পড়াশোনার খরচ—এসবের জন্য পার্সোনাল লোন (Personal Loan) বা ব্যক্তিগত ঋণ অনেকের প্রথম পছন্দ। এই ঋণ পেতে কাগজপত্র কম লাগে, ব্যাংক একাউন্ট থাকলে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই টাকা পাওয়া যায়, এবং বাড়ি বসে মোবাইলের মাধ্যমে, অনলাইনেও আবেদন করা যায়। এই সুবিধাগুলোর জন্যই পার্সোনাল লোন সকলের কাছে জনপ্রিয়। কিন্তু অনেকেই দেখেন, আবেদন করার পরেও লোন পাচ্ছেন না। শুধু ব্যাংক লোনই নয়, কয়েকটি ভুল করলে যেকোনো সরকারি প্রকল্পের টাকা ও পাওয়া যায় না। কারণটা কী?
Top 5 reasons your Personal Loan Application might be rejected
হটাত টাকার প্রয়োজনে অনেকেই ব্যাংকের থেকে ব্যক্তিগত ঋণের জন্য আবেদন করেন। তবে অনেক সময়ে ব্যাংক বা লেন্ডাররা কিছু নির্দিষ্ট বিষয় দেখে আবেদন বাতিল করতে পারে। এর ফলে আপনার ক্রেডিট স্কোরে যেমন প্রভাব পড়ে, তার সাথে ব্যাংক ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও একটি খারাপ রেপুটেশন তৈরি হয়। আর এই বদনামের ফলে অন্যান্য সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতেও সমস্যা হতে পারে। তাই কিভাবে সহজে লোন পাবেন, বা আপনার ক্রেডিট স্কোর বা অর্থনৈতিক লেনদেন এর রেকর্ড ভালো রাখা যায়, এই প্রতিবেদনে সেই সংক্রান্ত পাঁচটি প্রধান কারণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। যদি আপনি লোন নেওয়ার পরিকল্পনা করেন, তাহলে এই ভুলগুলো এড়িয়ে চলুন।
CIBIL Score বা ক্রেডিট স্কোর ও আয়ের সমস্যা
ক্রেডিট স্কোর (CIBIL Score) হলো আপনার আর্থিক বিশ্বাসযোগ্যতার মাপকাঠি। বেশিরভাগ ব্যাংক ৭৫০ বা তার বেশি স্কোর দেখতে চায়। যদি আপনার স্কোর কম হয়, তাহলে আবেদন বাতিল (Personal Loan Application) হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অনেকেই খুব সমস্যা না থাকলেও ইচ্ছে করেই, বিভিন্ন বিল, কিস্তি বা EMI দিতে দেরি করেন, বা পরবর্তী কিস্তি এলেও আগের কিস্তি দেওয়া হয় না। তারা মনে করেন, কয়েকটা বিল বা EMI মিস করলে কিছু হয় না— এটা একদম ভুল ভাবনা। কারণ এতে সাথে সাথে ক্রেডিট স্কোর কমিয়ে দেয়। এছাড়া আয়ের একটা ন্যূনতম সীমা থাকে, যেমন মাসে ২৫,০০০ বা ৩০,০০০ টাকা। এই মানদণ্ড পূরণ না করলে লোন পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
চাকরির স্থায়িত্ব ও ঋণের বোঝা
ঘন ঘন চাকরি বদল করলে ব্যাংক আপনাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে। যদি আপনার চাকরির মেয়াদ কম হয় বা বার বার মাঝপথে চাকরি ছাড়েন, বা একটানা কর্মরত না থাকেন তাহলে আপনার পার্সোনাল লোন (Personal Loan) ও যেকোনো লোনের আবেদন খারিজ হতে পারে। অনেকে আবার একসঙ্গে একাধিক লোন বা ক্রেডিট কার্ডের কিস্তি দেন। এতে ঋণ-আয়ের অনুপাত বেড়ে যায়। ব্যাংক মনে করে, আপনি নতুন লোনের কিস্তি দিতে পারবেন না। তাই আগের ঋণগুলো কমিয়ে আনা জরুরি।
কাগজপত্র ও আবেদনের ভুল
অনেকের একেক ডকুমেন্টে একেক নাম। যেমন প্যান কার্ডে এক বানান, আধার কার্ডে আরেক বানান। বা প্যান বা আধার নম্বরে গড়মিল—এই ছোট ভুলগুলোই আবেদন বাতিলের কারণ হয়। অনেকে একসঙ্গে একাধিক ব্যাংকে আবেদন করেন। প্রতিটি আবেদনের জন্য ক্রেডিট রিপোর্ট চেক হয়, যাকে বলে হার্ড ইনকোয়ারি। এতে স্কোর কমে যায় এবং ব্যাংক আপনাকে অস্থির মনে করে। কাগজপত্র পুরোপুরি সঠিক এবং সম্পূর্ণ রাখুন। একসাথে একাধিক ব্যাংকে আবেদন না করাই ভালো। আগে সমস্ত ব্যাংক থেকে নিয়ম, সুদের হার জেনে নিন। যেখানে ভালো মনে হবে, সেখানে আবেদন করুন।
বয়স ও যোগ্যতার সীমাবদ্ধতা
ব্যাংকের নির্দিষ্ট বয়সের সীমা থাকে, যেমন ২১ থেকে ৬০ বছর। এর বাইরে গেলে আবেদন গ্রহণযোগ্য হয় না। কিছু ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব বা আবাসস্থলের শর্তও থাকে। অনেকে এই বিষয়গুলো জানেন না বলে আবেদন করেন। ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল (Personal Loan Application) হয়ে যায়। আবেদনের আগে ব্যাংকের ওয়েবসাইটে যোগ্যতা চেক করুন।
ক্রেডিট ইতিহাসের অভাব
যাদের কোনো ক্রেডিট কার্ড বা লোনের ইতিহাস নেই, তাদের পক্ষে বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করা কঠিন। ব্যাংক চায় আপনার পুরোনো আর্থিক আচরণ দেখতে। ক্রেডিট ইতিহাস না থাকলে আবেদন খারিজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেক তরুণ বা নতুন চাকরিজীবী এই সমস্যায় পড়েন। প্রথমে ছোট ক্রেডিট কার্ড নিয়ে কিছু লেনদেন করুন। সময়মতো বিল দিলে স্কোর বাড়বে এবং লোন পাওয়া সহজ হবে।
আরও পড়ুন, ঘরে বসে এই কাজ করে প্রতি মাসে প্রচুর টাকা রোজগার করুন। সম্পূর্ণ পদ্ধতি দেখে নিন
পার্সোনাল লোনের আবেদন বাতিল এড়াতে কি করবেন?
- ভালো ক্রেডিট স্কোর রাখতে প্রতি মাসে বিল সময়মতো দিন।
- একাধিক লোন থাকলে আগে পুরোনো কিস্তি শেষ করুন।
- চাকরি বদলের আগে অন্তত ৬ মাস স্থায়িত্ব দেখান।
- কাগজপত্র দুবার চেক করে আবেদন করুন। একসঙ্গে অনেক ব্যাংকে আবেদন করবেন না।
- এই সাধারণ নিয়মগুলো মানলে লোন পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
লোন নেওয়ার আগে সতর্কতা
পার্সোনাল লোন বা ব্যক্তিগত ঋণ নেওয়া সহজ, কিন্তু ফেরত দেওয়া কঠিন হতে পারে। অতিরিক্ত ঋণ নিলে আর্থিক চাপ বাড়ে। ক্রেডিট স্কোর নষ্ট হলে ভবিষ্যতে বড় লোন পাওয়া কঠিন হয়। যদি সম্পত্তি বন্ধক রাখেন, তাহলে হারানোর ঝুঁকি থাকে। আইনি জটিলতাও হতে পারে। তাই প্রয়োজনের বেশি লোন নেবেন না।
এই পাঁচটি কারণ জেনে রাখলে আপনি আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে পারবেন। ক্রেডিট স্কোর, চাকরির স্থায়িত্ব, কাগজপত্র—সবকিছু ঠিক রাখুন। লোন নেওয়ার আগে বাজেট দেখে নিন। প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। এই সতর্কতাগুলো আপনার আর্থিক জীবনকে সুরক্ষিত রাখবে। সঠিক পরিকল্পনায় লোন আপনার সঙ্গী হবে, বোঝা নয়। মনে রাখবেন বার বার ঋণ খেলাপি হলে ভবিষ্যতে বিনামূল্যে পাওয়া সরকারি সুবিধা পেতেও সমস্যা হতে পারে।
