Gold Price: বাবল ফটাস। ঝপ করে কমে গেল সোনার দাম। মাথায় হাত, এই কদিন যারা সোনা কিনেছেন। কত টাকা কমবে জেনে নিন

গত এক বছরে সোনার দাম (Gold Price) ৭৫০০০ টাকা থেকে ১৩০০০০ টাকায় পৌঁছেছে। এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে, যে সোনার দাম ২০২৫ সালের মধ্যেই ১৫০০০০ তে পৌছবে। যার জেরে ধনতেরাসের আগে কার্যত সোনা কেনার হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। সমস্ত সোনার দোকানে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। যার জেরে ২২ ক্যারেট হলমার্ক গহনা সোনার দাম ১২৫১০০ টাকায় পৌছায় ধনতেরাসের দিন। তবে তার পর দিনই অর্থাৎ ১৯ অক্টোবর ১২২৮৫০ টাকা হয়। এক দিনেই দাম ২২৫০ টাকা কমে যায়। আর গতকাল দাম ছিলো ১১৯৭৫০ টাকা।

Gold Price Prediction Forcast

সোনার দাম হটাত বেড়ে যাওয়ায় একদল বিশেষজ্ঞেরা মনে করেছিলেন, এই দাম ২০২৫ সালেই ১৫০০০০ টাকা ছোঁবে। আবার আরেক দল বিশেষজ্ঞেরা মনে করেছিলেন এটা একটি বাবল বা বুদবুদ (Gold price bubble burst), যেটি ফেটে গেলে দাম ৩০% পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এই প্রতিবেদন আমরা গত ১৫ই অক্টোবর প্রকাশ করেছিলাম। এখানে ক্লিক করে দেখে নিতে পারেন। আর সেই সম্ভাবনাকে সত্যি করে এই কদিনেই প্রায় ৮০০০ টাকা কমেছে সোনার রেট। আর এই দাম কোথায় গিয়ে পৌছবে, আন্তর্জাতিক মার্কেট এর হিসাব দেখলেই বুঝতে পারবেন।

সোনার দাম কি কমবে?

সোনার বর্তমান দাম নিয়ে এখন বাজারে তুমুল আলোচনা চলছে। একদিকে কেউ কেউ বলছেন, দাম আরও বাড়বে, অন্যদিকে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এটি এখন বুদবুদ অঞ্চলে পৌঁছে গেছে এবং শীঘ্রই দাম কমতে পারে। কামাখ্যা জুয়েলসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মনোজ ঝা জানিয়েছেন, সোনার রেটে বড় ধরনের সংশোধনের সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, আগামী কয়েক মাসে প্রতি আউন্সে ৩০০ থেকে ৪০০ ডলার পর্যন্ত দাম কমতে পারে। এই পতন বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে। তবে, এই পরিস্থিতিতে সতর্ক থাকা জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দামের পরিসংখ্যান

আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম সম্প্রতি রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল। স্পট সোনার মূল্য একসময় প্রতি আউন্সে ৪,৩৮১ ডলারে উঠেছিল, কিন্তু এখন তা কমে প্রায় ৪,০৯০ ডলারে নেমে এসেছে। মার্কিন সোনার ফিউচারও ডিসেম্বর ডেলিভারির জন্য ১.৩% বেড়ে ৪,২৬৬.৩০ ডলারে পৌঁছেছিল। তবে, সাম্প্রতিক পতনের ফলে দাম প্রায় ১০% কমেছে। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা সোনার মূল্য বৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু মুনাফা উঠিয়ে নেওয়ার প্রবণতা এখন দাম কমার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভারতীয় বাজারে সোনার দামের ভবিষ্যৎ

ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জে (MCX) সোনার দামও উল্লেখযোগ্যভাবে ওঠানামা করছে। সর্বোচ্চ ১৩২,২৯৪ টাকা প্রতি ১০ গ্রামে পৌঁছানোর পর, দাম কমে ১২২,৩০০ টাকায় নেমে এসেছে। বর্তমানে MCX-এ সোনার দাম ১,৮৫৫ টাকা বেড়ে ১২৩,৭১২ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। রুপোর দামও কমেছে, সর্বোচ্চ ১৭০,৪১৫ টাকা থেকে ১৪৫,৯০০ টাকায় নেমেছে। IBJA-তে ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ১,২৩,৮২৭ টাকা এবং রুপো ১,৫১,২০০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পতন স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদে দাম আবার বাড়তে পারে।

আরও পড়ুন, সোনা বাদ দিয়ে এখানে বিনিয়োগ করুন। চরম লাভ

সোনার দাম ও বুদবুদ

বাজার বিশেষজ্ঞ মনোজ ঝা বলছেন, সোনার মূল্য এখন বুদবুদ অঞ্চলে রয়েছে। অতীতে, ১৯৭৯-৮০ এবং ২০১০-১১ সালে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছানোর পর বড় ধরনের পতন দেখা গিয়েছিল। বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিওতে সোনার অনুপাত ১০-১২% থেকে বেড়ে ১৮-২২% হয়েছে। এই অতিরিক্ত বিনিয়োগের কারণে অনেকে এখন মুনাফা তুলে নিতে চাইছেন। এই প্রবণতা দাম কমার পেছনে বড় ভূমিকা পালন করছে। ঝা মনে করেন, এই সংশোধন বাজারের জন্য স্বাস্থ্যকর হবে।

আরও পড়ুন, লোন নিয়ে সোনা কিনে কোটিপতি হওয়ার সুযোগ। কিভাবে দেখুন।

এখন সোনা কেনা উচিৎ?

সোনা ও রুপোর দামে এই পতন ক্রেতাদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করছে। ঝা পরামর্শ দিয়েছেন, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীরা দাম আরও কিছুটা কমার পর বিনিয়োগ করতে পারেন। ধনতেরসের সময় গয়নার চাহিদা প্রত্যাশার চেয়ে ভালো ছিল, যদিও বিক্রি ১৫-২০% কমেছে। বুলিয়ন বিক্রি গত বছরের তুলনায় ২৫% বেড়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দেখায়। তবে, বর্তমান বাজারে সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করা উচিত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দাম স্থিতিশীল হলে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া ভালো।

আরও পড়ুন, বাড়ি বসে এই কাজ করে ইনকাম করার সুযোগ। দেখুন কিভাবে।

উপসংহার

সোনার বর্তমান দামের ওঠানামা বিনিয়োগকারীদের জন্য চিন্তার বিষয় হলেও, এটি নতুন সম্ভাবনাও তৈরি করছে। আন্তর্জাতিক ও ভারতীয় বাজারে দাম কমার পেছনে মুনাফা তুলে নেওয়া এবং উৎসবের চাহিদা কমে যাওয়া বড় কারণ। দীর্ঘমেয়াদে সোনার চাহিদা ভারতে শক্তিশালী থাকবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে, বিনিয়োগের আগে বাজার ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। সোনা ও রুপোর দামে স্বল্পমেয়াদী পতন সত্ত্বেও, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি ভালো সময় হতে পারে। সতর্কতা এবং সঠিক সময়ে বিনিয়োগই সাফল্যের চাবিকাঠি।

শেয়ার করুন: Sharing is Caring!