পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা লিমিটেড (WBSEDCL) তাদের গ্রাহকদের জন্য Electricity Bill Payment বা বিদ্যুৎ বিল পেমেন্টের পদ্ধতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। এতদিন গ্রাহকরা প্রতি মাসের বকেয়া বিল দেখে সুবিধামতো পেমেন্ট করতে পারতেন। এছাড়া অনেকেই Phonepe, Google Pay এর মধ্যমে কারেন্ট বিল দিতেন। কিন্তু নতুন নিয়মে এই সমস্ত সুবিধা বন্ধ হয়ে গেছে। এই পরিবর্তনের ফলে কিছু নতুন সুবিধা এলেও, বেশ কিছু সমস্যা ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। গ্রাহকরা এখন নতুন এই পদ্ধতি নিয়ে দ্বিধায় পড়েছেন। এই প্রতিবেদনে আমরা নতুন পদ্ধতির বিস্তারি এবং এর সুবিধা ও অসুবিধাগুলো নিয়ে আলোচনা করব।
Guide to WBSEDCL and Online Electricity Bill Payments
সম্প্রতি রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা লিমিটেড তথা WBSEDCL Electricity Bill Payment এর যে নতুন পদ্ধতি চালু করেছে, তাতে কয়েকটি নতুন অপশন যুক্ত হয়েছে। তার পাশাপাশি কয়েকটি সুবিধা ও তুলে দেওয়া হয়েছে। যার জেরে কারেন্ট বিল দেওয়ার আগে এই বিধয় গুলো জেনে নেওয়া উচিৎ।
নতুন পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার নিয়ম
WBSEDCL এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বিল পেমেন্টের প্রক্রিয়া এখন অনেকটাই আলাদা। প্রথমে আপনাকে তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে ‘Online Payment’ অপশনে ক্লিক করতে হবে। এরপর ‘Quick Pay’ নির্বাচন করলে একটি নতুন ইন্টারফেস খুলবে। সেখান থেকে ‘Postpaid Energy Bill’ নির্বাচন করে সাধারণ বাড়ির ত্রৈমাসিক বিল জমা দেওয়া যাবে। এরপর কনজিউমার নম্বর ও ক্যাপচা কোড দিয়ে ভেরিফাই করতে হবে। ভেরিফিকেশনের পর ‘Proceed’ বাটনে ক্লিক করে পেমেন্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
পেমেন্টের নতুন নিয়ম
নতুন এই সিস্টেমে পেমেন্টের জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম চালু করা হয়েছে। সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে পেমেন্ট শুরু করা যাবে। একবারে সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জমা দেওয়া সম্ভব। গ্রাহকরা এখন তাদের ইচ্ছামতো আংশিক পেমেন্ট করতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ, ১০০০ টাকা বকেয়া থাকলে ৫০০ টাকা জমা দিয়ে বাকিটা পরে মেটানো যাবে। পেমেন্ট সফল হলে Billdesk-এর মাধ্যমে UPI বা QR কোড ব্যবহার করে রসিদ পাওয়া যাবে।
নতুন সিস্টেমের প্রধান পরিবর্তন
আগে গ্রাহকরা ওয়েবসাইটে মাসিক বিলের বিস্তারিত ব্রেকআপ দেখতে পেতেন।অর্থাৎ ৩ মাসের বিলে কোন মাসে কতটা বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়েছে, এবং তার জন্য কত চার্জ, সেটা উল্লেখ থাকতো। এরপর গ্রাহক চাইলে ১ মাসের বিল অথবা ২ ও ৩ মাসের বিল একসাথে পরিশোধ করতে পারতেন। অথবা তারা নির্দিষ্ট মাসের বিল বা মোট বকেয়া একসঙ্গে পরিশোধ করতে পারতেন। কিন্তু এখন বিলের কোনো বিস্তারিত তথ্য দেখানো হয় না।
গ্রাহকদের সরাসরি একটি টাকার পরিমাণ লিখে পেমেন্ট করতে বলা হচ্ছে। অর্থাৎ আপনার যা বিল হয়েছে তারচেয়ে কম টাকা দিলে সেটা একাউন্তে জমা হবে, এবং বকেয়া টাকা পরের বিলে যোগ হবে, এবং বেশি টাকা জমা দিলে পরের বিল থেকে এই টাকা বিয়োগ হবে। এই পরিবর্তন গ্রাহকদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। অনেকে বুঝতে পারছেন না তাদের মোট বকেয়া কত।
আরও পড়ুন, এই ৫টি কাজ করলে কোনও সরকারি প্রকল্পের টাকা চাইলেও পাবেন না।
নতুন পদ্ধতির সুবিধা
নতুন সিস্টেমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো আংশিক পেমেন্টের সুযোগ। গ্রাহকরা এখন তাদের সুবিধামতো অল্প অল্প করে বিল পরিশোধ করতে পারেন। এটি বিশেষ করে সেই সব গ্রাহকদের জন্য উপকারী, যাদের একসঙ্গে বড় অঙ্কের টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। এই সুবিধা আগে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে পাওয়া যেত। এখন অনলাইনেই এই সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। ফলে সময় ও পরিশ্রম দুই-ই বাঁচছে।
আরও পড়ুন, বাবল ফটাস। ঝপ করে কমে গেল সোনার দাম। এইমাসে যারা সোনা কিনেছেন, তাদের মাথায় হাত।
নতুন পদ্ধতির সমস্যা
নতুন সিস্টেমে বিলের বিস্তারিত তথ্য না থাকায় গ্রাহকরা বুঝতে পারছেন না তাদের মোট বকেয়া কত। লেট ফাইনের পরিমাণও ওয়েবসাইটে দেখানো হচ্ছে না। ফলে গ্রাহকদের আন্দাজ করে পেমেন্ট করতে হচ্ছে। অতিরিক্ত টাকা জমা পড়লে তা পরবর্তী বিলে কীভাবে সমন্বয় হবে, তা নিয়ে কোনো স্পষ্ট নির্দেশ নেই। এছাড়া PhonePe, Google Pay-এর মতো থার্ড-পার্টি অ্যাপে বিল পেমেন্ট সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। এই সমস্যাগুলো গ্রাহকদের জন্য বড় অসুবিধা তৈরি করছে।
উপসংহার
WBSEDCL Bill payment এর নতুন পদ্ধতি গ্রাহকদের জন্য আংশিক পেমেন্টের মতো কিছু সুবিধা এনেছে। তবে কারেন্ট বিলের বিস্তারিত তথ্য ও লেট ফাইনের পরিমাণ উল্লেখ না থাকায় গ্রাহকেরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। যাদের টেকনিক্যাল জ্ঞান নেই, তারা সমস্যায় পড়বেন। আশা করা যায়, WBSEDCL কর্তৃপক্ষ দ্রুত এই সমস্যাগুলোর সমাধান করবে। এই নতুন নিয়ম সম্পর্কে আরও জানতে তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে চোখ রাখুন। গ্রাহকদের সুবিধার জন্য স্বচ্ছ ও সহজ পদ্ধতি প্রয়োজন।