ঋণ নিয়েও মিললো না বকেয়া ডিএ, আরো ৬ মাসের অপেক্ষা। রাজ্যের মুখ্য ও অর্থ সচিবকে আইনী নোটিশ

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিরাট ধাক্কা! সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ (Supreme Court Judgement) মেনে আজ বকেয়া ডিএ মেটানোর কথা থাকলেও, সেই কাঙ্ক্ষিত মহার্ঘ ভাতা (Dearness Allowance) পাচ্ছেন না কেউই। রাজ্য সরকারের তরফে বকেয়া ডিএ মেটানোর জন্য ঋণ নেওয়ার কথা শোনা গেলেও (Loan) নেওয়া হলেও পাবেন না মহার্ঘ ভাতা। বকেয়া মেটাতে রাজ্য সরকার আদালতের কাছে সময় চাইলো আরও ৬ মাস। বকেয়া DA এর টাকা এখনই দেওয়া সম্ভব নয়, তা আজকের সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। অপরদিকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ না মানের জন্য আইনি নোটিস পৌঁছল মুখ্যসচিব ও অর্থসচিব এর কাছে। তাহলে কবে মিলবে বকেয়া ডিএ? আবার কি সময় বাড়ালো শীর্ষ আদালত? জানুন বিস্তারিত।

পশ্চিমবঙ্গের বকেয়া ডিএ অধরা

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মীদের (WB Government Employees) বকেয়া ডিএ মামলা দীর্ঘদিন ধরেই আদালতে বিচারাধীন। দেশের শীর্ষ আদালত (Supreme Court) নির্দেশ দিয়েছিল, ২৭ জুনের মধ্যে রাজ্য সরকারকে কর্মীদের মহার্ঘ ভাতার ২৫ শতাংশ দিতে হবে। কিন্তু ডিএ বিজ্ঞপ্তি জারি না হওয়ায় ধন্দে ছিলেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা। বকেয়া না পেলে আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তাঁরা। তবে আজ সেই সময়সীমা পার হলেও ডিএ না মিটিয়ে রাজ্য সরকার বরং আরও ৬ মাসের সময় চেয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ

গত ১৬ মে আদালতের নির্দেশ ছিল, ২০০৯ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত রাজ্য সরকারি কর্মীদের প্রাপ্ত ডিএ বকেয়া (Arrear DA) এর ২৫ শতাংশ রাজ্য সরকারকে মিটিয়ে দিতে হবে। যার সময়সীমা বেঁধে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ২৭ জুন সেই সময়সীমা হয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে আজ ২৭ শে জুন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের ব্যাংকে ঢুকে যাওয়ার কথা বকেয়া ডিএ। কিন্তু তাও এক টাকাও পেলেন না সরকারি চাকরিজীবীরা।

এই ঘটনার পরই রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্মেন্ট এমপ্লয়িজ এর পক্ষ থেকে সরাসরি আইনি চিঠি পাঠানো হল মুখ্যসচিব ও অর্থসচিব এর কাছে। অবিলম্বে বকেয়া DA মেটানোর দাবিতে আবারও সরব রাজ্যের কর্মচারীরা। বকেয়া ডিএ না মিটলে আবার আন্দোলন শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে। আইনি যুদ্ধেরও প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন রাজ্যের কর্মচারীরা।

ঋণ সত্ত্বেও টাকা মিলছে না কেন?

কিছুদিন আগেই বিভিন্ন সংবাদপত্র মারফত জানা গিয়েছিল, রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের (WB Government Employees) বকেয়া ডিএ (Dearness Allowance) মেটানোর জন্য নাকি বিশাল ঋণ গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু তার পরেও তাহলে কেন মিটছে না কর্মীদের বকেয়া? এই প্রশ্ন সামনে আসতেই জন্য যাচ্ছে, ওই ঋণ বকেয়া মেটানোর জন্য নেওয়া হয়নি। বরং রাজ্যের বাংলার বাড়ি (Banglar Bari) প্রকল্পের দ্বিতীয় কিস্তির টাকা মেটানোর জন্যই সেই ঋণের ব্যবস্থা।

বকেয়া মেটানোর জন্য অতিরিক্ত সময়ের দাবি

২৭ শে জুনের মধ্যে বকেয়া মেটানোর নির্দেশ সত্ত্বেও রাজ্য সরকারের তরফে কোনো নোটিশ প্রকাশিত হয়নি। এই নিয়ে ইতিমধ্যেই সংশয়ের মধ্যে সরকারি কর্মচারীরা। এর মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবারো অতিরিক্ত সময় চেয়ে আবেদন রাজ্যের। বকেয়া ডিএ (DA) এর টাকা এখনই দেওয়া সম্ভব নয় একথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিল রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার দাবি কখনোই রাজ্যের কর্মচারীরা জানাতে পারেন না এমন মন্তব্যও এসেছে সরকারি তরফে। এর সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতির কথাও।

তাহলে কি আরো ছয় মাসের অপেক্ষা?

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সমস্ত আশায় জল ঢেলে আদালতের কাছে আরও ৬ মাস সময়ের দাবি করেছে রাজ্য সরকার। এই মুহূর্তে রাজ্যের আর্থিক স্থিতি অনুযায়ী কোনোভাবেই বকেয়া মেটানো সম্ভব নয় রাজ্যের, একথা স্পষ্ট করেছেন রাজ্যের আইনি প্রতিনিধি। এখন দেখা যাক আগামী ছয় মাস পর রাজ্য সরকারি কর্মীরা তাঁদের প্রাপ্য ডিএ পান নাকি।

আরও পড়ুন, বকেয়া ডিএ নিয়ে গোপন বৈঠক, সব সেটিং হয়ে গেল।

বকেয়া ডিএ এর ভবিষ্যৎ

রাজ্য সরকার একদিকে ৬ মাসের সময় দাবি করেছে। অন্যদিকে বকেয়া এর টাকা সরকারি কর্মীদের একাউন্টে না দিয়ে বরং আদালতের হেফাজতে রাখার আবেদন ও জানিয়েছেন। রাজ্যের যুক্তি, এই মামলার রায় রাজ্য সরকারের পক্ষে গেলে, এই টাকা আর সরকারি কর্মীদের কাছ থেকে ফেরত পাওয়া সম্ভব হবে না। তাই বকেয়া মেটালেও কর্মীদের একাউন্টে এখনই দিতে নারাজ রাজ্য সরকার। অন্যদিকে আদালত যদি ৬ মাসের আবেদন মঞ্জুর করে তবে আগামী ৬ মাস পর নির্বাচন ঘোষণা হয়ে গেলে, এই ডিএ এর ভবিষ্যৎ কি হবে সেকথা সকলেরই জানা।

আরও পড়ুন, বকেয়া ডিএ না পেলেও, আপনার জন্য এই সুখবর, সান্তনা।

উপসংহার

২৫% বকেয়া ডিএ পাওয়ার আশায় রয়েছেন প্রায় ১০ লক্ষ কর্মী ও পেনশন ভোগী। তবে তাদের আশায় কার্যত জল ঢেলে গেল। একদিকে রাজ্য সরকার ৬ মাসের দাবি করেছে, অন্যদিকে সরকারি কর্মীরা রাজ্যের প্রধান দুই সচিব কে আইনি নোটিশ দিয়েছেন। আবার শুনানি হবে, আবার তারিখ পে তারিখ। কার্যত এই ভাবে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস কেটে যাবে, কিন্তু একাউন্টে আদৌ টাকা ঢুকবে কিনা, সেই উত্তর ২০১৬ সাল থেকে খুঁজে চলেছেন সরকারি কর্মীদের একাংশ। হয়তো আবার বড় কোনও আন্দোলন, আরও ২-১% ডিএ এনে দেবে, আর সেই খুশিতে ব্রেকিং নিউজ ৩ বার ট্রেন্ডিং এ যাবে। আবার আন্দোলন ফিকে পড়ে যাবে। আবার শুনানি আবার চাঁদা তুলে মামলা চালানো, আবার নতুন রায়, আবার পুনঃবিবেচনার আবেদন। এটাই হয়তো এই মামলার ভবিতব্য।

শেয়ার করুন: Sharing is Caring!