Dearness Allowance: ঋণের টাকা শেষ! পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ পাওয়া অনিশ্চিত, গোপন রিপোর্ট ফাঁস

২০০৯ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ (Dearness Allowance) এর পরিমাণ ৪১ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আপাতত ২৫% বকেয়া DA দিতে প্রয়োজন প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। নবান্নের একটি সুত্র মারফত জানা গেছে এই ২৫% এর ৮০% টাকা একাউন্টে দেওয়া হতে পারে, আর বাকি ২০% প্রভিডেন্ট ফান্ড একাউন্টে ক্রেডিট হতে পারে। আর সেই ৮০% টাকা একাউন্টে দিতেও রাজ্য সরকারের প্রয়োজন অন্তত ৭ হাজার কোটি টাকা।

বকেয়া ডিএ মেটাতে ঋণ – পশ্চিমবঙ্গ সরকার

গত সপ্তাহে রাজ্যের প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী রাজ্য সরকার গত ৩রা জুন রিজার্ভ ব্যাংকের সিক্যুরিটি ফান্ড থেকে ২২ বছরের জন্য ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। আবার ১৭ই জুন রিজার্ভ ব্যাংকের একই নিলাম ফান্ড থেকে ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এবং গতকালের একটি সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী (The Wall & TV9) চলতি মাসেই রাজ্য সরকার আরও ৩৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে।

এই ৩ কিস্তি মিলিয়ে জুন মাসেই ৭৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমান সরকার এই ১৪ বছরের মধ্যে এক মাসে এর আগে এতো টাকা একবারে ঋণ নেয়নি সরকার। এর আগে গত ২০২৪ সালের মার্চ মাসে সর্বোচ্চ ৬০০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলো সরকার।

এই ঋণ নেওয়ার খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হতেই রাজ্য সরকারি কর্মীদের একাংশ মনে করেছিলেন, ২৫% এর ৮০% এর হিসাবে হয় ৭০০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ হয়তো বকেয়া DA মেটাতেই রাজ্য সরকার এই ঋণ নিয়েছে। “ডিএ মেটাতে ৭৫০০ কোটি টাকা ঋণ”। খবর টি ফলাও করে প্রকাশ ও হয়, রাজ্যের একাধিক প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যমে। আর সরকারি কর্মীদের মতো একাধিক সংবাদ মাধ্যম ও সেই সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলো। তবে সেই জল্পনায় কার্যত জল ঢেলে দিয়েছে আরেকটি খবর। যা শুনে নিরাশ হবেন সরকারি কর্মীরাই।

বাংলার বাড়ি প্রকল্প

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘরের টাকা কেন্দ্র সরকার না দেওয়ার অভিযোগে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিজস্ব উদ্যোগে চালু হয়, বাংলার বাড়ি প্রকল্প। যার প্রথম কিস্তির টাকা ইতিমধ্যেই পেয়ে গেছেন গ্রাহকেরা। এবার দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেওয়া শুরু হয়েছে। রাজ্য সরকারের হিসাব বলছে, বাংলার বাড়ি প্রকল্পে ২য় কিস্তির টাকা দিতে রাজ্য সরকারের প্রয়োজন ৭২০০ কোটি টাকা। যা ইতিমধ্যেই সাধারণ মানুষের একাউন্টে পাঠানো শুরু হয়েছে। আর এর পরই প্রশ্ন উঠছে, তবেকি ৭৫০০ কোটি টাকা ঋণ কি বাংলার বাড়ি প্রকল্পের টাকা মেটাতেই নেওয়া হয়েছিলো?

Dearness Allowance Calculation

২৫% বকেয়া ডিএ যে এতো সহজে মিলবে না, তার ইঙ্গিত রয়েছে, এই দুটি খবরে। প্রথমত, যে সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ দেবে রাজ্য সরকার, তাদের আগেকার বেতনের হিসাব ই নাকি নেই রাজ্য সরকারের কাছে। কত টাকা দেওয়া হয়েছে তার হিসাব না থাকলে, কত টাকা বকেয়া আছে, তার হিসাব মিলবে কি করে?

ডিএ এর হিসাব নেই

সংবাদ সুত্র থেকে জানা যাচ্ছে যে ২০১৬ সালে অর্থ দপ্তর যখন হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (HRMS) চালু করে, তখন থেকেই রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতনের হিসেব ডিজিটাল পদ্ধতিতে রাখা শুরু হয়। তাই ২০১৬ সালের আগের কর্মীদের বেতনের হিসেব অফলাইন বা খাতায় লিখে রাখা হতো। তাই এতদিন পর সেই রিপোর্ট নাকি রাজ্যের কাছে নেই। সুতরাং ২০১৫ এর আগে, অর্থাৎ ২০০৯ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৫-১৬ সাল পর্যন্ত কর্মীদের বকেয়া DA এর পরিমাণ কত, সেই হিসাব নির্ভুলভাবে করতে গেলে বছর কেটে যাবে।

আরও পড়ুন, পশ্চিমবঙ্গে মঙ্গল বারে ফের নতুন ছুটি ঘোষণা। কবে ছুটি, কিসের ছুটি?

পে কমিশনেই বঞ্চনা

অন্যদিকে যে পে কমিশনের রিপোর্টের (Pay Commission) উপর ভিত্তি করে রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতন নির্ধারিত হয়। সেই পে কমিশনের রিপোর্টেই (ROPA 2009) নাকি কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার কথা বলা নেই! বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকারের নেতৃত্বে তৈরি এই রিপোর্টের ১২.৪ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, রাজ্য সরকার ডিএ নির্ধারণ বা বৃদ্ধির (DA Hike) জন্য কেন্দ্রীয় মূল্য বৃদ্ধি সূচক বা AICPI অনুসরণ করতে বাধ্য নয়। আর এই সুপারিশটিই রাজ্য সরকারি কর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে, যার ফলে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পাওয়া নিয়েই ফের প্রশ্ন উঠবে। আর শেষ মুহুর্তে এই সমস্ত খবর রাজ্যের কর্মীদের আশাহত করছে। আর এই পয়েন্ট ধরেই রাজ্য সরকার ফের মোডিফিকেশনের আবেদন করে কিনা, সেই প্রশ্ন উঠছে।

সরকারি কর্মীদের প্রতিক্রিয়া

এদিকে কনফেডারেশন, ইউনিটি ফোরাম, সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ, প্রভৃতি কর্মী সংগঠন রাজ্য সরকারের এই মনোভাবের বিরুদ্ধে সকলে একজোট হয়েছে। তারা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এছাড়া আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি নবান্ন অভিযান ও আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন, LPG রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার বুকিং হচ্ছে না। এই কাজ এখুনি করে নিন।

উপসংহার

কেন্দ্রীয় হারে বকেয়া ডিএ দিতে এবং অন্তত ২৫% বকেয়া মেটানোর আজ শেষ দিন। এদিকে বকেয়া মেটানোর কোনও সরকারি পদক্ষেপ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেখা মেলেনি। এবার শেষ মুহূর্তে, অর্থাৎ আজই রাজ্য সরকার কোনও সিদ্ধান্ত নেয় কিনা, সেটা অবশ্যই যেমন দেখার রয়েছে, অন্যদিকে শেষ মুহুর্তে রাজ্য সরকার ফের কোনও আইনি কৌশল নিয়ে আরও কিছুটা সময় অতিক্রান্ত করা যায় কিনা, সেটার সম্ভাবনা ও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এই বিষয়ে সর্বশেষ খবর পেতে, আজ দুপুরে EK24 News ফলো করুন।

শেয়ার করুন: Sharing is Caring!