পেনশন কি এবার তাহলে বন্ধ হয়ে যাবে? Pension নিয়ে এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছে এখন রাজ্য সরকারি কর্মী ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের মধ্যে। কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক বঞ্চনার প্রতিবাদে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২ দিনের ধর্না কর্মসূচিতে কলকাতায় অবস্থান করেন। সেই কর্মসূচি থেকেই মুখ্যমন্ত্রী সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন। মমতা বলেন, এবার কি তাহলে একটু পেনশন নিয়ে নাড়াচাড়া করব? কি বলছেন? বন্ধ করে দেব পেনশন?
পেনশন নিয়ে কি বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী?
তবে ডিএ আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে ইতিবাচক বার্তা ও দেন, তিনি বলেন, ঠিক আছে, যখন দাবি করছেন তখন বিষয়টা দেখে নেওয়া যাবে। তবে সমস্ত অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীর ক্ষেত্রে নয়। আর মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য থেকেই বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করেছে। আশঙ্কা তৈরি হয়ে গিয়েছে রাজ্য সরকারি কর্মচারী ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের মধ্যে। তাহলে কি এবার মাসের শেষে যে পেনশন (Pension) তারা এতদিন নিয়মিত ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করতেন, তবে কি পেনশন সত্যি সত্যি বন্ধ হয়ে যেতে চলেছে? কারন এর আগে একাধিক বার একি প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় হারে DA বৃদ্ধির দাবিতে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশের সংগঠন যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের তরফে কলকাতার শহীদ মিনার চত্বরে দীর্ঘদিন ধরে লাগাতার অবস্থান বিক্ষোভ ধর্না কর্মসূচি চালানো হচ্ছে। সেখান থেকে রাজ্য সরকারকে চাপে ফেলার কৌশল হিসেবে কখনো পেনডাউন, কখনো কর্মবিরতি, কখনো ধর্মঘট, কখনো ডিজিটাল স্ট্রাইক, কখনো গণছুটির মতো একাধিক কর্মসূচি বারে বারে ঘোষণা করা হচ্ছে। এই আন্দোলনের মধ্যেই রাজ্য সরকার সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৩ শতাংশ DA রাজ্য বাজেটে (State Budget) ঘোষণা করে। সেই DA মার্চ মাস থেকেই লাগু হয়ে গিয়েছে।
তবুও কার্যত রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা খুশি হতে পারেননি। অনেকে এই ৩% কে ভিক্ষা হিসেবে দেখছেন। তাদের ওই একই আবদার, কেন্দ্রীয় হারে DA দিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টে বকেয়া ডিএ মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। এখনো পর্যন্ত সেখানে শুনানি শুরু হয়নি। কিন্তু রাস্তায় নেমে সরকারি কাজকর্ম বন্ধ করে দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন DA আন্দোলনকারীরা। তবে এই আবহের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য অ্যাডহক বোনাস এবং ফেস্টিভ্যাল অ্যাডভান্স এর পরিমাণ বৃদ্ধি করেছেন। তবুও রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশের মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার বিরোধী মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের আর্থিক বরাদ্দ বন্ধ করে রেখেছে। যার ফলে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বহু প্রকল্প সঠিক সময়ে রূপায়িত করতে পারছে না। কেন্দ্রের এই আর্থিক বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে কলকাতায় ২ দিনের ধর্না কর্মসূচিতে বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই ধর্না মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যে স্কুলের কথাই বলুন, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, প্রাথমিক, সমস্ত স্কুল সহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ক্ষেত্রেই সিপিআইএমের আমলে কারো মাথায় কোঅর্ডিনেশন কমিটির হাত থাকলেই আর কোনো সমস্যা ছিল না। দুর্নীতি করে চাকরিতে নিয়োগ হয়ে যেত।
এখন যত ফাইল পাওয়া যাচ্ছে, সবটাই ওই কোঅর্ডিনেশন কমিটির লোকেরা করছে। বাম জমানার কোনো ফাইল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ২০০১ সালের ফাইল খুঁজুন, পাবেন না, ২০০২ সালের ফাইল খুঁজুন, পাবেন না, ২০০৩, ২০০৪, ২০০৫, ২০০৮, ২০০৯ কোনো সালের ফাইল খুঁজলেই পাওয়া যাবে না। ফাইল সরিয়ে দিয়েছে, না হয় পুড়িয়ে দিয়েছে, নয়তো ফাইল নষ্ট করে দিয়েছে।
সম্প্রতি তৃণমূল সরকারের শিক্ষা দপ্তরের একাধিক প্রাক্তন আধিকারিক থেকে শুরু করে প্রাক্তন মন্ত্রীসহ রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী জেলবন্দি রয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিকে কেন্দ্র করে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। সেই সমস্ত অভিযোগের তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। প্রায় প্রতিদিনই কলকাতা হাইকোর্টের তরফে একাধিক নতুন নতুন নির্দেশ আসছে। যার ফলে কিছুটা হলেও চাপে তৃণমূল সরকার। আর এবার দেখা যাচ্ছে, পাল্টা সিপিআইএমের জমানায় যে সমস্ত চাকরিতে নিয়োগ দুর্নীতি হয়েছে, সেই তথ্যও ধীরে ধীরে ফাঁস হচ্ছে।
রমজান উপলক্ষ্যে এপ্রিল মাসে কোন রেশন কার্ডে কি কি মাল পাবেন, লিস্ট দেখে নিন।
তৃণমূলের তরফে একাধিক অভিযোগ বাম জমানার দুর্নীতি নিয়ে তোলা হচ্ছে। ধর্না মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কি এবার খাতাটা খুলবো? পেনশনটা নিয়ে তাহলে একটু নাড়াচাড়া করি? কেউ ৫৫ হাজার টাকা পায়, কেউ ৬০০০০ টাকা পায়। তাও ১ তারিখে পেনশন পায় সকলে। ১ তারিখে মাইনেও হয়। সিপিএমের আমলে বহু নিয়োগ দুর্নীতি হয়েছে। ওরা চাকরি খেতে পারে। তবে আমরা চাকরি খাব না। চাকরি দেবো। আইন মেনেই চাকরি দেবো। এরপরেই মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমবেত মানুষের উদ্দেশ্যে বলেন, এবার কি পেনশনটা বন্ধ করব? ঠিক আছে, আমরা দেখে নেব। তবে সব অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীর নয়।
ডিএ আন্দোলনের মাঝেই সরকারি কর্মীদের জন্য নতুন নির্দেশিকা, নবান্নের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত।
কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক বঞ্চনার প্রতিবাদে ধর্না মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাম আমলের নিয়োগ দুর্নীতির প্রশ্নে চড়া আক্রমণ করেন। তার কথায়, বাম জমানায় বহু নিয়োগ দুর্নীতি হয়েছে। তাদের চাকরি বাতিল করা হয়নি। অথচ ওরা একাংশের চাকরি বাতিলের জন্য দাবি করছে। ওরা আবার বড় বড় কথা বলছে। ফলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাজ্য রাজনীতি ফের সরগরম হয়ে উঠেছে।
Written by Rajib Ghosh.