পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা (Dearness Allowance) বা ডিএ মামলা সুপ্রিম কোর্টে (DA Case in Supreme Cout) নতুন দিশা পেয়েছে। আর শেষ বেলায় সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ রাজ্য সরকারের সেই বিষয় সামনে তুলে ধরলো। ইতিমধ্যেই মামলাকারীদের তরফে জমা দেওয়া একটি লিখিত আবেদন এখন সকলের নজর কেড়েছে। এই আবেদনে এমন কিছু শক্তিশালী যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে যা রাজ্য সরকারের আগের হলফনামাকে দুর্বল করে দিতে এবং রাজ্য সরকারী কর্মীদের জয় এনে দিতে যথেষ্ট ভুমিকা পালন করতে পারে।
West Bengal Dearness Allowance Case
পুজোর আগেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ মামলার শুনানি সমাপ্ত হয়েছে। মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court of India) নির্দেশ মতো রাজ্য সরকার ও তার সমাপনি বক্তব্য লিখিত আকারে জমা দিয়েছে। তবে সেই হলফনামায় রাজ্য সরকার যে সমস্ত তথ্য দিয়েছে, তার কাউন্টারে রাজ্য সরকারি কর্মীরাও লিখিত নথি জমা দিয়েছে। আর তাতেই রাজ্য সরকারের তথ্যের কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। আর কর্মীদের দাবি সত্যি হলে, এই মামলার রায়ে তা প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এতে কর্মচারীদের পক্ষে রায় আসার সম্ভাবনা অনেকটা বেড়েছে। মামলাটি এখন “শুনানি সম্পন্ন এবং রায় সংরক্ষিত” অবস্থায় রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সকলে অপেক্ষায় রয়েছেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য।
ডিএ মামলার নতুন মোড় এবং সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের ভূমিকা
কনফেডারেশন যেমন ২০১৬ সাল থেকে এই ডিএ মামলা চালিয়ে নিয়ে আসছে, ঠিক তেমনি সংগ্রামী যৌথ মঞ্চও এই মামলায় পার্টি হিসাবে যুক্ত হবার পর, পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের অধিকার রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে। তাদের লিখিত আবেদনটি সুপ্রিম কোর্টে জমা পড়ার পর মামলাটি এক নতুন মোড় নিয়েছে। এতে ডিএ-কে কর্মচারীদের মৌলিক অধিকার হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
কলকাতা হাইকোর্ট যে “ডিএ কর্মীদের অধিকার” মান্যতা দিয়েছিলো, তা উল্লেখ করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে যে আর্থিক অসুবিধার যুক্তি দেওয়া হয়েছে, তা খণ্ডন করতে তথ্যসমৃদ্ধ প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে। এই আবেদনটি কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের লড়াইকে নতুন উদ্যম দিয়েছে। ফলে, West Bengal DA Case-এ জয়ের আশা এখন আরও প্রবল হয়ে উঠেছে।
আবেদনে জোর দেওয়া হয়েছে যে ডিএ হলো সরকারি কর্মচারীদের আইনসম্মত দাবি, কোনো দান বা অনুগ্রহ নয়। অল ইন্ডিয়া কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স বা AICPI-এর ভিত্তিতে মুদ্রাস্ফীতির সাথে মিলিয়ে ডিএ (Dearness Allowance) দিতে সরকার বাধ্য। পশ্চিমবঙ্গের ROPA 2009 নিয়ম অনুসারে এই ভাতা নির্ধারণ হওয়ার কথা, কিন্তু সরকার তা লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। এতে আইনি যুক্তি দিয়ে দেখানো হয়েছে যে রাজ্যের আর্থিক অবস্থা আসলে অন্য রাজ্যের তুলনায় স্থিতিশীল। কর্মচারীরা এই লঙ্ঘনের ফলে অসুবিধায় পড়ছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। Dearness Allowance West Bengal-এর এই আপডেটটি কর্মচারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।
অন্যান্য রাজ্যের সাথে তুলনা এবং আর্থিক যুক্তির খণ্ডন
আবেদনে কেরালা, মেঘালয় এবং সিকিমের মতো রাজ্যগুলির উদাহরণ দিয়ে তুলনা করা হয়েছে। এই রাজ্যগুলি তার কর্মীদের নিয়মিত কেন্দ্রীয় হারে ডিএ (Dearness Allowance) প্রদান করে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক অবস্থা এদের থেকে খারাপ নয়, বরং কিছু ক্ষেত্রে ভালো বলে তথ্য দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের আর্থিক দুর্বলতার যুক্তি এতে ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে। এই তুলনা কর্মচারীদের দাবিকে আরও মজবুত করে তুলেছে। Supreme Court DA Hearing-এ এই পয়েন্টগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
আরও পড়ুন, প্রধানমন্ত্রীর টাকার দরকার হলেই, এই প্রকল্পে আবেদন করুন।
বৈষম্যের অভিযোগ এবং সংবিধানিক লঙ্ঘন
আবেদনে বলা হয়েছে যে রাজ্য সরকার কর্মচারীদের মধ্যে অসম ব্যবহার করছে। দিল্লির বঙ্গভবন বা চেন্নাইয়ের যুব হোস্টেলে কাজ করা পশ্চিমবঙ্গের কর্মচারীরা কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পান। কিন্তু রাজ্যের ভিতরে থাকা কর্মচারীরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এটি সংবিধানের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে যুক্তি দেওয়া হয়েছে। এই বৈষম্য কর্মচারীদের মনোবল ভেঙে দিচ্ছে। Sangrami Joutha Mancha Submission-হলফনামায়, এই দাবি রাখা হয়েছে। যা রাজ্যের দেওয়া যুক্তিকে খন্ডন করতে পারে।
মামলার পটভূমি এবং হাইকোর্টের পূর্ববর্তী রায়
পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীরা বছরের পর বছর ধরে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ-র (Dearness Allowance) দাবি জানিয়ে আসছেন। কলকাতা হাইকোর্টের বিভিন্ন বেঞ্চে রাজ্য সরকার ছয়বারেরও বেশি হেরেছে। হাইকোর্ট ডিএ-কে কর্মচারীদের আইনি অধিকার বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই রায়গুলিকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গেছে। এই লড়াইয়ের অংশ হিসেবে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আবেদনটি গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন, প্রধানমন্ত্রীর এই প্রকল্পে টাকা দিচ্ছে সরকার, কিভাবে আবেদন করবেন জেনে নিন
সম্ভাব্য রায়ের তারিখ এবং ভবিষ্যৎ প্রভাব
বিভিন্ন মিডিয়া সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে যে ডিএ মামলার রায় (DA Case Judgement) দীপাবলির ছুটির আগে আসতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের দীপাবলি ছুটি ২০ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত। ছুটির আগেই রায় প্রকাশিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। যদিও সেই সম্ভাবনা কম। তবে কিছু কর্মচারী মনে করছেন নভেম্বর বা এই বছরের মধ্যেই সিদ্ধান্ত আসবে। যদিও আদালত থেকে কোনো নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা হয়নি।
সার্বিকভাবে, সুপ্রিম কোর্টের মামলা বর্তমানে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের জন্যই নয়, সারা দেশের রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য একটি মাইলফলক হতে চলেছে। একদিকে কর্মীরা দীর্ঘ অপেক্ষায় রায়েছেন। অন্যদিকে কনফেডারেশন, ইউনিটি ফোরাম, সরকারি কর্মচারী পরিষদ ও সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের প্রচেষ্টা কর্মীদের অধিকার রক্ষায় সাহায্য করছে। রায় যদি কর্মচারীদের পক্ষে যায়, তাহলে ডিএ প্রদানের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে। এতে অন্য রাজ্যের কর্মচারীদেরও প্রভাব পড়তে পারে। সকলে এখন অপেক্ষায় রয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের। এবার মহামান্য আদালত কোন যুক্তি মেনে নেয়, সেটাই এখন দেখার।