দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মীরা মহার্ঘ ভাতা মামলায় (Dearness Allowanece) সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আপাতত ২৫ শতাংশ বকেয়া ডিএ পাওয়ার আধিকার পেয়েছে। আগামী ২৭ শে জুনের মধ্যে সেই টাকা পাওয়ার কথা। আর সেই নির্দেশ মেনে পদক্ষেপ গ্রহন করেছে রাজ্য সরকার। তবে তার মধ্যে আইনি কৌশল মেনেই এই নির্দেশের মোডিফিকেশন দাবি করেছে। যার ফলে এই আবেদন গৃহীত হলে, আবার ও পিছিয়ে যেতে পারে, এই ২৫ শতাংশ বকেয়া ডিএ পাওয়া। সেই ইংগিত পাচ্ছেন খোদ রাজ্য সরকারি কর্মীরা।
সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতার ভবিষ্যৎ
২০১৬ সাল থেকে চলা এই বকেয়া ডিএ মামলায় প্রতিবারই রাজ্য সরকারি কর্মীদের পক্ষে রাজ্য দিয়েছে স্যাট ও কলকাতা হাইকোর্ট। তবে কর্মীদের অভিযোগ, আদালতের রায় ঘোষণার পরই আইনি কৌশল অবলম্বন করে বার বার মামলার রায় বিবেচনা, পুনঃবিবেচনা প্রভৃতি আবেদন করেছে। আর বার বার শুনানির দিন পিছিয়েছে। কখনও সরকারি আইনজীবী অন্য মামলায় ব্যস্ত, কখনো বা আদালতের দীর্ঘ ছুটি, মহামান্য বিচারপতির বেঞ্চ পরিবর্তন, কখনও পেছনের সারিতে মামলা থাকায় শুনানি হয়নি.. প্রভৃতি কারণে শুনানির দিন পিছিয়েছে।
মোট কথা ২০১৬ সাল থেকে ২০২৫ সালের এই দীর্ঘ সময় লেগেছে, বকেয়া ডিএ কর্মীদের আইনি অধিকার, এবং রাজ্য সরকার কে তা দিতে হবে, এই কথা প্রমাণ করতে। আর রাজ্য সরকার যদি আবার আইনি কৌশল অবলম্বন করে, আর সেই আবেদন যদি গৃহীত হয়, তবে আরও ৬ মাস কাল বিলম্ব হতে পারে, এই ডিএ পেতে। আর ভোট ঘোষণা হয়ে গেলে তো সেই দেরি আরও বাড়বে।
রাজ্য সরকার কি আবেদন করবে, কিম্বা আদালত সেটিকে গ্রহন করবে কিনা, সেটা সময় বলবে। তবে কর্মীদের একাংশের আশংকা, এই বিপুল সংখ্যক বকেয়া ডিএ রাজ্য সরকার পরিশোধের আগে অন্তত আরও একবার চেষ্টা করবে কাল বিলম্বের। অন্যদিকে এই বকেয়া ডিএ মামলা চালাতে রাজ্য সরকারি কর্মীরা হিমসিম খাচ্ছেন।
আরও পড়ুন, ব্যাংক থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দিচ্ছে। এই নিয়ম অনেকেই জানেন না।
অন্যদিকে কর্মচারী সংগঠন, বিশেষত সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের নেতারা বলছেন, আইনি লড়াইয়ে রাজ্য সরকারের প্রায় ২০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হলে এই অর্থ বাঁচত। একদিকে রাজ্যের এই একতরফা পদক্ষেপ সরকারি কোষাগারের উপর চাপ বাড়িয়েছে, অহেতুক খরচ বেড়েছে এবং কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ তীব্র করেছে। অন্যদিকে সরকারি কর্মীদের ও মামলা চালাতে খরচ হয়েছে।
বকেয়া ডিএ পরিশোধের প্রস্তাব
শীর্ষ আদালতের নির্দেশের পরও এখনও ডিএ পরিশোধ না করায় সরকারি কর্মীরা ক্ষুব্ধ। তারা সময়মতো টাকা না পেলে বৃহৎ আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বিভিন্ন কর্মী সংগঠন বাস্তবসম্মত প্রস্তাব দিয়েছিল — এই বকেয়া টাকা কর্মরতদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা এবং অবসরপ্রাপ্তদের জন্য পেনশনের সঙ্গে ১২ কিস্তিতে বকেয়া পরিশোধ। কিন্তু রাজ্য সরকার আলোচনার পরিবর্তে সুপ্রিম কোর্টে রায়ের ব্যাখ্যা চেয়ে সময় নষ্ট করেছে, যা কর্মীদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়েছে। কর্মীদের একাংশের প্রশ্ন, আজ হোক আর কাল এই বকেয়া রাজ্য কে দিতেই হবে, তাহলে কেন মামলার পেছনে এতো সময় ও অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে?
আরও পড়ুন, একের বেশি ব্যাংক একাউন্ট থাকলেই এই কাজ করুন, নইলে ১০০০০ টাকা জরিমানা।
রাজ্য সরকার কি পদক্ষেপ নেয় সেটি জানার জন্য আগামী ২৭ জুন এবং আদালতের গ্রীষ্মবকাশ শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে সরকারি কর্মীরা তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ পরিকল্পনা করেই রেখেছেন। সময়মতো বকেয়া ডিএ না পেলে বৃহৎ আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সরকারি কর্মীদের একাংশ। এবার এটাই দেখার বকেয়া ২৫% মহার্ঘ ভাতা কবে মিলবে। পরবর্তী আপডেট পেতে EK24 News ফলো করুন।