দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ মামলার শুনানি সমাপ্ত (DA Case Hearing ended) হলো। এবার সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court of India) রাজ্য সরকারি কর্মী ও রাজ্য সরকারের সমাপনী নথি পেশের পরই রায়দান হবে। আর এরই মধ্যেই আজ কি হলো, এবং বর্তমানে যুক্তি ও কৌশলের দিক দিয়ে কার পাল্লা ভারি, যাদের জয়ের সম্ভাবনা কতটা, দুই পক্ষের বিবৃতি থেকেই একটা স্পষ্ট ধারণা দেওয়া যাক।
West Bengal DA Case Hearing Update: 8th September 2025
আজ সোমবার কিছুক্ষণ আগেই সুপ্রিম কোর্টে ডিএ মামলার শুনানি শেষ হয়েছে। মহামান্য বিচারপতি সঞ্জয় কারোল এবং প্রশান্ত কুমার মিশ্রের বেঞ্চ রায় ঘোষণা স্থগিত রেখেছে। যদি কোনো পক্ষের অতিরিক্ত মতামত থাকে তাহলে লিখিতভাবে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগে আদালত রাজ্যকে বকেয়া ডি এর ২৫ শতাংশ পরিশোধের আদেশ দিয়েছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই সময়সীমায় তা মেটাতে পারেনি এবং আরও সময় চেয়েছে। আর এবার রাজ্য সরকার ও তার শেষ মতামত জানাবে। এবং তার প্রতি উত্তরে সরকারি কর্মীরা কি উত্তর দেয়, সেই বিবৃতি পাওয়ার পরই এই মামলায় রায়দান হবে। আপাতত এই ডিএ মামলার রায়দান স্থগিত থাকছে।
ডিএ মামলার পটভূমি
পশ্চিমবঙ্গ সরকারি কর্মীদের ডিএ (Dearness Allowance) এর দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে আইনি লড়াই। কেন্দ্রীয় সরকারের হারে রাজ্য কর্মচারীদেরও মহার্ঘ ভাতা প্রদানের দাবিতে শুরু হয় এই মামলা। স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল (SAT) থেকে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court) হয়ে বিষয়টি পৌঁছায় সুপ্রিম কোর্টে। ২০২২ সালে হাইকোর্ট কর্মীদের পক্ষে রায় দিয়ে বলে যে ডিএ তাদের মৌলিক অধিকার। রাজ্য সরকার এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায়। এখন সুপ্রিম কোর্ট ডিএ মামলা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।
রাজ্য সরকার ও সরকারি কর্মীদের যুক্তি ও পাল্টা যুক্তি!
একদিকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের যুক্তি হলো যে মহার্ঘ ভাতা (Dearness Allowance) বাধ্যতামূলক নয় এবং এটা কর্মীদের মৌলিক অধিকার নয়। কেন্দ্র এবং রাজ্যের আর্থিক কাঠামো ভিন্ন হওয়ায় তুলনা করা যায় না বলে তারা দাবি করে। অন্যদিকে মামলাকারী কর্মী সংগঠনগুলি বলছে যে ডিএ দেওয়া সরকারের নীতিগত দায়িত্ব। বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুসারে নির্দিষ্ট সময়ে এটা প্রদান করতে হবে। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে বকেয়া কিস্তিতে দেওয়া যেতে পারে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারি কর্মীদের ডিএ দাবি নিয়ে এই যুক্তি-পাল্টা যুক্তি চলেছে দীর্ঘকাল।
শুনানির উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনাক্রম
শুনানি শুরু হতেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে কারণ রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল প্রথমে অনুপস্থিত ছিলেন। বিচারপতিরা তাঁকে কয়েকবার ডেকে পাঠানোর পর মামলাকারী পক্ষের এক মহিলা আইনজীবী বক্তব্য শুরু করেন। তিনি প্রায় ১০-১৫ মিনিট ধরে জোরালো যুক্তি পেশ করেন। এরপর ইউনিটি ফোরামের আইনজীবী করুন নন্দি এবং বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য তাদের মতামত তুলে ধরেন। মাঝপথে কপিল সিব্বল উপস্থিত হয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন যা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। সুপ্রিম কোর্ট ডিএ শুনানির এই ঘটনাক্রম কর্মীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
আদালতের নির্দেশ এবং পরবর্তী ধাপ
সকল পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আদালত রাজ্য সরকারকে এক সপ্তাহের মধ্যে অতিরিক্ত লিখিত মতামত জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। মামলাকারী সংগঠনগুলিকেও পরবর্তী এক সপ্তাহে প্রতিক্রিয়া জমা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়া শেষ হলে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হবে। আর কোনো মৌখিক শুনানি (DA Case Hearing) হবে না বলে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ডিএ মামলার এই নির্দেশ আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে রাজ্যকে চাপে ফেলেছে। কর্মীরা এখন রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে যা তাদের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলবে।
কর্মীদের আশা এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
ডিএ এর শুনানি শেষ হওয়ায় (DA Case Hearing) পশ্চিমবঙ্গ সরকারি কর্মীদের (Government Employees) মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। দীর্ঘ আইনি সংগ্রামের পর তারা একটা ইতিবাচক সিদ্ধান্তের প্রত্যাশা করছেন। এই মামলা তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সুপ্রিম কোর্টের রায় (Supreme Court) যদি কর্মীদের পক্ষে যায় তাহলে লক্ষ লক্ষ মানুষের মুখে হাসি ফুটবে। কিন্তু রাজ্যের আর্থিক সঙ্কটের কারণে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারি কর্মীদের ডিএ দাবি এখনও অমীমাংসিত থেকে তাদের ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করছে।
মামলার প্রভাব এবং সমাজের প্রতিক্রিয়া
এই ডিএ মামলা (DA Case Hearing) পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। কর্মী সংগঠনগুলি রায়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। যদি রায় কর্মীদের পক্ষে যায় তাহলে রাজ্যের বাজেটে অতিরিক্ত চাপ পড়বে। অন্যদিকে রাজ্যের যুক্তি গ্রাহ্য হলে কর্মীদের হতাশা বাড়বে। সামাজিক মাধ্যমে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। সুপ্রিম কোর্ট ডিএ মামলার ফলাফল রাজ্যের শ্রমিক অধিকারকে নতুন দিশা দেবে। তবে এই মামলায় রাজ্য সরকারি কর্মীদেরই জয় হবে বলে আশাবাদী কর্মী থেকে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা, তবে সমস্ত কিছু জানা যাবে মহামান্য আদালতের রায়ের পরই।