Dearness Allowance: পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীদের ২৫ শতাংশ DA তে কার কত বকেয়া, জানাতে হবে কর্মিকেই। পোর্টাল খুললো অর্থ দপ্তর

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ (Dearness Allowance) কার কত পাওনা রয়েছে, সেই হিসাব সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়ার সময়সীমা শেষের পথে। এই মুহূর্তে এত কম সময়ে প্রায় ৮ লাখ সরকারি কর্মীও পেনশন প্রাপকদের হিসাব সহজে করার জন্য প্রযুক্তির সাহায্য নিলো পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অর্থ দপ্তর। নতুন পোর্টালের মাধ্যমে কর্মীদের প্রান্ত থেকেই বকেয়া ডিএ এর হিসাব দিতে হবে। বিপুল সংখক মহার্ঘ ভাতা এর এই জটিল হিসাব কীভাবে জমা করতে হবে, এবং সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া কিভাবে হবে, বিস্তারিত জেনে নিন।

25% Dearness Allowance Calculation

২৫ শতাংশ বকেয়া DA এর ক্ষেত্রে সকলের পাওয়া সমান নয়। ডিএ এর হিসাবটা (Dearness Allowance Calculation) সাধারণত কর্মী বা পেনশনার্স এর বেসিক এর উপরে হিসাব হয়। তাছারা ২০০৯ এর পর যারা কাজে জগদান করেছেন, তাদের ও ১০ বছরের চেয়ে কম বকেয়া রয়েছে, তাই এই হিসাবটা প্রত্যেক কর্মীর ক্ষেত্রে আলাদা হবে। আর সেই কারণে কর্মীদের নিজ নিজ বকেয়া কত হয়েছে, তা নির্দিষ্ট ফরম্যাটে জানাতে হবে। সেই সমস্যা সমাধানে নবান্নের নয়া প্রযুক্তি। নতুন পোর্টালে সেই হিসাব জানাতে হবে।

রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে এখন একটাই আলোচনা—বকেয়া মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ (Dearness Allowance)। এই ইস্যুটি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে, এবং সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশের পর এটি ফের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। নবান্ন এবার ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে নির্ভুলভাবে হিসাব করছে কোন কর্মচারীর কত টাকা বকেয়া রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে এই বকেয়া মেটানোর কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রতিবেদনে আমরা জানব কার বকেয়া কত, কীভাবে তা জানা যাবে, এবং নবান্ন কীভাবে এই প্রক্রিয়া পরিচালনা করছে।

বকেয়া ডিএ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ⚖

গত ১৬ মে, ২০২৫-এ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় করোল এবং সন্দীপ মেহতার বেঞ্চ রাজ্য সরকারকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে। তারা বলেছে, রাজ্য সরকারকে বকেয়া ডিএ-র অন্তত ২৫% আগামী ২৭ জুন, ২০২৫ এর মধ্যে মেটাতে হবে। শুধু তাই নয়, এই সময়সীমার মধ্যে বকেয়া পরিশোধের একটি বিস্তারিত রিপোর্টও আদালতে জমা দিতে হবে। এই নির্দেশের পর নবান্ন জোরকদমে কাজ শুরু করেছে, যাতে প্রত্যেক কর্মচারীর বকেয়া হিসাব সঠিকভাবে তৈরি করা যায়। এই প্রক্রিয়ায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে, যা কর্মচারীদের জন্য স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।

নবান্নর নয়া প্রযুক্তি: ডিজিটাল হিসাব 💻

নবান্ন এবার ডিজিটাল প্রযুক্তির উপর ভরসা করছে। অর্থ দপ্তর জানিয়েছে, একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে একটি নতুন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হচ্ছে। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত সরকারি দপ্তর, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকার-অনুমোদিত সংস্থার কর্মচারীরা তাদের বকেয়া ডিএ এর তথ্য জানতে পারবেন। এই পোর্টালে প্রত্যেক কর্মচারীর চাকরির সময়সীমা, পদ, এবং বকেয়া পরিমাণ (Dearness Allowance) নির্ধারণ করা হবে। এটি শুধু সরকারের হিসাব নয়, কর্মচারীদের জন্যও সহজে এই তথ্য পাওয়ার একটি মাধ্যম হবে।

আপনার কত টাকা বকেয়া ডিএ হয়েছে দেখুন।

কীভাবে কাজ করবে এই পোর্টাল? 🔍

নবান্ন সূত্রে জানা গেছে, এই ডিজিটাল পোর্টালে নিম্নলিখিত তথ্য পাওয়া যাবে:

  • চাকরির সময়সীমা: কে কখন থেকে চাকরিতে যুক্ত হয়েছেন এবং কোন সময় পর্যন্ত কাজ করেছেন।
  • পদের বিবরণ: কর্মচারীর পদ এবং বেতন কাঠামোর উপর ভিত্তি করে বকেয়া ডিএ নির্ধারণ।
  • বকেয়া ডিএ এর পরিমাণ: নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কত টাকা বকেয়া রয়েছে, তার সঠিক হিসাব।

এই পোর্টালে কর্মচারীরা নিজেদের তথ্য দাখিল করতে পারবেন, যা সরকারের কাছে পৌঁছে যাবে। এর ফলে স্বচ্ছতা বজায় থাকবে এবং ভুল হিসাবের সম্ভাবনা কমবে।

বকেয়া ডিএ এর সময়সীমা: ২০০৯-২০১৯ নাকি অন্য কিছু? ❓

কর্মচারীদের মনে এখন একটাই প্রশ্ন—বকেয়া ডিএ কোন সময়ের জন্য দেওয়া হবে? কেউ কেউ দাবি করছেন, বকেয়া ২০০৮ সালের এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে। আবার অনেকে মনে করছেন, ২০০৯ সাল থেকে রোপা (Revised Pay and Allowance) কার্যকর হওয়ায়, ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বকেয়া নির্ধারণ করা হবে। তবে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, এই সময়সীমা নির্ধারণ করে বকেয়া পরিশোধ করা হবে।

IFMS পোর্টাল: কর্মচারীদের তথ্য জানার মাধ্যম 🌐

রাজ্য সরকারের অর্থ দপ্তরের তৈরি IFMS (Integrated Financial Management System) পোর্টাল এই প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই পোর্টালের মাধ্যমে কর্মচারী এবং অবসরপ্রাপ্ত পেনশনভোগীরা নিম্নলিখিত তথ্য জানতে পারবেন:

  • ব্যক্তিগত তথ্য: নিজের চাকরির সময়কাল, পদ, এবং বেতন কাঠামো।
  • বকেয়া হিসাব: ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে কত টাকা বকেয়া রয়েছে।
  • তথ্য দাখিল: কর্মচারীরা নিজেদের তথ্য আপডেট করতে পারবেন এবং সরকারের কাছে পাঠাতে পারবেন।

এই পোর্টালটি ব্যবহার করে কর্মচারীরা সহজেই তাদের বকেয়া ডিএ-র পরিমাণ জানতে পারবেন। এটি শুধু সময় বাঁচাবে না, বরং হিসাবের স্বচ্ছতাও নিশ্চিত করবে।

কোন কর্মীর কত টাকা বকেয়া? একটি উদাহরণ 📈

বকেয়া ডিএ এর পরিমাণ নির্ভর করবে কর্মচারীর পদ, বেতন কাঠামো এবং চাকরির সময়সীমার উপর। ধরা যাক, একজন কর্মচারী ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত রাজ্য সরকারের অধীনে কাজ করেছেন। এই সময়ে কেন্দ্রীয় হারের সঙ্গে রাজ্যের ডিএ এর ব্যবধান ছিল গড়ে ৩০-৪০%। যদি একজন কর্মচারীর মাসিক বেতন ২০,০০০ টাকা হয়, তবে তার বকেয়া ডিএ প্রতি মাসে ৬,০০০ থেকে ৮,০০০ টাকা হতে পারে। ১০ বছরে এই পরিমাণ ৭-১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তবে এটি একটি আনুমানিক হিসাব। সঠিক পরিমাণ জানতে IFMS পোর্টালে তথ্য দাখিল করতে হবে।

Dearness Allowance Calculation Graph)

কর্মচারীদের প্রত্যাশা ও চ্যালেঞ্জ ⭐

কর্মচারীদের মধ্যে এই নির্দেশকে ঘিরে প্রত্যাশা তুঙ্গে। তবে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে:

সময়সীমার চাপ: সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া ২৭ জুনের ডেডলাইন মেনে চলা রাজ্য সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বিশাল সংখ্যক কর্মচারীর হিসাব নির্ভুলভাবে করা সময়সাপেক্ষ।
আর্থিক বোঝা: রাজ্যের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি আদালতে জানিয়েছিলেন, ৫০% বকেয়া মেটাতে প্রায় ২০,০০০ কোটি টাকা লাগবে। ২৫% বকেয়া মেটাতেও বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন।
তথ্যের সঠিকতা: IFMS পোর্টালে তথ্য দাখিলের সময় কর্মচারীদের সঠিক তথ্য প্রদান করতে হবে, যাতে ভুল হিসাব না হয়।

আরও পড়ুন, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মীদের ছুটি নিয়ে বড় আপডেট দিলো রাজ্য সরকার

উপসংহার: আর্থিক স্বচ্ছতার দিকে এক ধাপ 🌈

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এবং নবান্নের নয়া ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে বকেয়া ডিএ এর ইস্যু এবার সমাধানের পথে। IFMS পোর্টাল সরকারি কর্মীদের জন্য সহজ এবং স্বচ্ছ উপায়ে তথ্য জানার সুযোগ করে দেবে। তবে, বকেয়ার সঠিক সময়সীমা এবং পরিমাণ নির্ধারণে সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা এখন আশায় রয়েছেন যে, এই প্রক্রিয়া তাদের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটাবে এবং আর্থিক স্বচ্ছতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

শেয়ার করুন: Sharing is Caring!