পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে মহার্ঘ ভাতা মামলায় (DA) নিয়ে দীর্ঘদিনের টানাপোড়েন এবার এক নতুন মোড় নিয়েছে। রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত, সুপ্রিম কোর্ট, গত ১৬ মে রাজ্য সরকারকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে যে, সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতার অন্তত ২৫ শতাংশ আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে মিটিয়ে দিতে হবে। এই নির্দেশের পর নবান্ন তৎপর হয়ে উঠেছে এবং রাজ্যের অর্থ দপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যোগ্য ডিএ প্রাপকদের তালিকা প্রস্তুত করতে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বকেয়া ডিএ নিয়ে তৎপর নবান্ন
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে রাজ্য সরকার চেষ্টা করছে আদালতের নির্দেশ মেনে চলার পাশাপাশি কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করতে। অর্থ দপ্তর এখন তাদের তথ্যভাণ্ডার পরীক্ষা করে বর্তমান এবং অতীতের ডিএ (Dearness Allowance) প্রাপকদের সংখ্যা নির্ধারণের কাজে নিয়োজিত হয়েছে, যাতে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা যায়।
ডিএ প্রাপকদের সংখ্যা কত?
রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে বর্তমানে প্রায় ২.৫ লক্ষ রাজ্য সরকারি কর্মী নিযুক্ত রয়েছেন। এছাড়াও, প্রায় ৩ লক্ষ ৮০ হাজার স্কুল শিক্ষক, ১ লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েত কর্মী এবং পৌরসভা ও সরকার-স্বীকৃত বিভিন্ন সংস্থানে নিযুক্ত কর্মীদের সংখ্যাও এই হিসাবে যুক্ত হয়। সব মিলিয়ে, মোট ডিএ প্রাপকের সংখ্যা প্রায় ৮ লক্ষের কাছাকাছি হতে পারে। তবে, এই সংখ্যা এখানেই শেষ নয়। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরাও ডিএ প্রাপকের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। কর্মচারী সংগঠনের অনুমান অনুযায়ী, এই অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের সংখ্যা যোগ করলে মোট ডিএ প্রাপকের সংখ্যা ১০ লক্ষ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই বিশাল সংখ্যক প্রাপকদের তালিকা তৈরি করা এবং তাদের বকেয়া ডিএ নিশ্চিত করা রাজ্যের অর্থ দপ্তরের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
কারা ডিএ পাবেন?
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, ডিএ পাওয়ার জন্য কর্মচারীদের ২০০৯ সাল বা তার আগে থেকে সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত থাকতে হবে। এর কারণ, সিপিআইএম সরকারের সময় ঘোষিত পঞ্চম বেতন কমিশনের আওতায় ডিএ এর মেয়াদ ২০১৯ সাল পর্যন্ত বকেয়া হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। অর্থাৎ, যারা এই সময়ের মধ্যে চাকরিতে ছিলেন, তারা বকেয়া ডিএ পাওয়ার যোগ্য। তবে, ২০০৯ সালের পরে চাকরিতে যোগ দেওয়া কর্মচারীরাও ২০১৯ সাল পর্যন্ত তাদের চাকরির সময়কালের ভিত্তিতে ডিএ পাওয়ার দাবিদার হতে পারেন। এই বিষয়ে আইন মোতাবেক কাজ হবে।
কারা বকেয়া ডিএ পাবেন না?
চুক্তিভিত্তিক সরকারি কর্মী এবং যেসমস্ত চাকরি আদালতের বিচারাধীন যেমন ২০১৬ সালের এসএসসি প্যানেলের মাধ্যমে নিযুক্ত শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীদের মধ্যে যারা চাকরি হারিয়েছেন, তারা ডিএ পাওয়ার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। এই ব্যাপারটি ও আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ঠিক হবে। এই বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমের তথ্য যথেষ্ট নয়। এই নীতি অনেক কর্মচারীর মধ্যে হতাশা তৈরি করলেও, আদালতের নির্দেশ মেনে চলার জন্য এই সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে পালন করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন, পশ্চিমবঙ্গে গরমের ছুটি বেড়ে গেল। কবে খুলবে স্কুল ও সরকারি প্রতিষ্ঠান?
মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি
সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন, কো-অর্ডিনেশন কমিটি, এই ইস্যুতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। সম্প্রতি তারা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে ২৫ শতাংশ বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। সংগঠনের নেতা বিশ্বজিৎ দত্ত চৌধুরী জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা তাদের প্রাপ্য মহার্ঘ ভাতা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন, যার ফলে তারা আদালতের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হয়েছেন। এছাড়াও, বঙ্গীয় শিক্ষক এবং শিক্ষা কর্মী মঞ্চের সদস্য স্বপন মন্ডল জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্ট ছয় সপ্তাহের সময়সীমা দিয়েছে, যার মধ্যে ইতিমধ্যে দুই সপ্তাহ কেটে গেছে। এখন সবার দৃষ্টি রাজ্য সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে। কর্মচারী সংগঠনগুলো আশা করছে যে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সরকার তাদের দাবি পূরণে সফল হবে।
সময়সীমা ও চ্যালেঞ্জ
সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া ছয় সপ্তাহের সময়সীমা এখন রাজ্য সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ইতিমধ্যে দুই সপ্তাহ অতিবাহিত হয়ে গেছে, এবং বাকি সময়ের মধ্যে অর্থ দপ্তরকে যোগ্য প্রাপকদের তালিকা তৈরি করে বকেয়া ডিএ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় সঠিক তথ্য সংগ্রহ, প্রাপকদের যোগ্যতা যাচাই এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনার মতো জটিল কাজ জড়িত। কর্মচারী সংগঠনগুলোর পাশাপাশি সাধারণ মানুষও এই বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপের দিকে নজর রাখছে। যদি রাজ্য সরকার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই নির্দেশ পালন করতে ব্যর্থ হয়, তবে আইনি জটিলতা আরও বাড়তে পারে। তবে, নবান্নের তৎপরতা এবং অর্থ দপ্তরের সক্রিয়তা ইঙ্গিত দেয় যে সরকার এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত।
আরও পড়ুন, PF এ সুদ বৃদ্ধি ছাড়াও সরকারি কর্মীদের জন্য একাধিক বড় ঘোষণা।
উপসংহার
২৫% বকেয়া ডিএ দিতে বিপুল সংখ্যক অর্থের প্রয়োজন। যা রাজ্য সরকারের একসাথে দেওয়াটা সহজ নয়। তাই রাজ্য সরকার আদালতের নির্দেশ মেনে নিলেও সেই টাকা সরাসরি বেতনের সাথে না দিয়ে পিএফ একাউন্টেও জমা করতে পারে। স্যাটের নিরদেসে সেই অপশন ও ছিলো। এদিকে এই রাজ্যের পুনঃবিবেচনার আবেদন ও করতে পারে। সরকার এবার কি সিদ্ধান্ত নেই সেই দিকে তাকিয়ে রয়েছেন প্রায় লক্ষ রাজ্য সরকারি কর্মী ও পেনশনভোগী। পরবর্তী আপডেট পেতে EK24 News ফলো করুন।