পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষকদের টেট পাশ বাধ্যতামূলক (Compulsory TET for Teachers) নিয়ে বড় খবর। অবশেষে পশ্চিমবঙ্গ থেকে এক দিকে মামলা দায়ের এবং অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ দাবি করা হয়েছে। সুতরাং আইনি এবং রাজনৈতিক দিক থেকেই এই রায়ের পর্যালোচনা বা পুনঃবিবেচনার আবেদন জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষকদের তরফ থেকে। এই পদক্ষেপটি রাজ্যের হাজার হাজার শিক্ষকের চাকরি ও ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই লড়াই শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সারা দেশের শিক্ষকদের জন্য একটি নজির স্থাপন করতে পারে।
Supreme Court order on Compulsory TET for School Teachers
সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court of India) সাম্প্রতিক রায়ে বলা হয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষকদের টেট পাশ বাধ্যতামূলক। এই রায়ের ফলে যে সমস্ত শিক্ষক TET ছাড়াই চাকরিতে নিযুক্ত হয়েছিলেন, তাঁদের চাকরি হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে BTEA এবং ABPTA সহ বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন এই রায়ের বিরোধিতা করছে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ এবং কেরালার মতো রাজ্য সরকারও এই আইনি লড়াইয়ে যোগ দিয়েছে।
এই সংগঠনগুলি মনে করে যে শিক্ষকদের টেট পাশ বাধ্যতামূলক (Compulsory TET for Teachers) নিয়ে এই রায় শিক্ষকদের জন্য অন্যায্য। তাঁরা এই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। আর এবার পশ্চিমবঙ্গ থেকেও এই রায়ের বিপক্ষে রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক সংগঠন। আইনজীবী ফিরদৌজ শামীম এই মামলায় তাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
কেন এই রায়ের বিরোধিতা?
শিক্ষক সংগঠনগুলির মতে, দীর্ঘদিন ধরে চাকরিরত শিক্ষকদের জন্য হঠাৎ TET বাধ্যতামূলক (Compulsory TET for Teachers) করা যুক্তিসঙ্গত নয়। যখন এই শিক্ষকরা নিয়োগ পেয়েছিলেন, তখন TET পাশ করার কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। তাঁদের মতে, পুরনো নিয়মের অধীনে নিযুক্ত শিক্ষকদের উপর নতুন নিয়ম জোর করে চাপানো অন্যায়। এছাড়া, এই শিক্ষকরা বছরের পর বছর ধরে নিষ্ঠার সঙ্গে পড়িয়ে তাঁদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। TET-এ উত্তীর্ণ না হওয়ার কারণে তাঁদের অযোগ্য বলা ঠিক নয়। এই রায় শিক্ষকদের পেশাগত সম্মান এবং জীবিকার উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
শিক্ষার উপর সম্ভাব্য প্রভাব
যদি এই রায়ের ফলে বিপুল সংখ্যক শিক্ষককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়, তবে শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটি স্কুলগুলিতে শিক্ষার গুণগত মানের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই শিক্ষক ঘাটতির সমস্যায় জর্জরিত। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের চাকরি হারানোর ফলে শিক্ষার পরিবেশ আরও খারাপ হতে পারে। শিক্ষক সংগঠনগুলি এই বিষয়টি তুলে ধরে সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে। তারা মনে করে, এটি শুধু শিক্ষকদের নয়, ছাত্রদের ভবিষ্যতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন, Jio গ্রাহকদের সিম চালু থাকলেই ৫০০০০ টাকা দিচ্ছে। কারা পাবেন? এইভাবে আবেদন করুন
প্রধানমন্ত্রীকে BTEA এর চিঠি
শিক্ষকদের টেট পাশ বাধ্যতামূলক (TET Mandatory) নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নয়া রায় প্রসঙ্গে বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। এই প্রসঙ্গে ইতিমধ্যেই মাননীয় প্রধান্মন্ত্রিকে চিঠি পাঠিয়েছেন। এই রায়ের ফলে শিক্ষক ছাত্র অনুপাত ও শিক্ষার আকস্মিক কি ক্ষতি হতে পারে, সেই ব্যাপারে বলা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে BTEA এর সাধারণ সম্পাদক স্বপন মন্ডলের প্রদান করা চিঠি আমাদের Whatsapp Channel এ আপলোড করা হয়েছে। এখানে ক্লিক করলে দেখতে পারবেন।
রাজ্য সরকারের ভূমিকা ও সমর্থন
শিক্ষকদের টেট পাশ বাধ্যতামূলক (Compulsory TET for Teachers) নিয়ে ABPTA রাজ্য সরকার এবং শিক্ষা দপ্তরের কাছে শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানোর আবেদন জানিয়েছে। তারা চায় সরকার এই রিভিউ পিটিশনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে শিক্ষকদের সমর্থন করে। এই লড়াই শুধু শিক্ষকদের জীবিকার জন্য নয়, রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্য সরকারের সমর্থন এই আইনি লড়াইয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। শিক্ষকরা আশা করছেন, সরকার তাদের এই কঠিন সময়ে পাশে থাকবে। এই পিটিশনের ফলাফলের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
শিক্ষকদের ঐক্যের আহ্বান
শিক্ষক নেতারা সমস্ত শিক্ষকদের দলমত ভুলে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এই লড়াই শুধু চাকরি বাঁচানোর নয়, শিক্ষকদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষারও। আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি প্রয়োজনে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদের পরিকল্পনাও রয়েছে। শিক্ষকরা একত্রে এই রায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রস্তুত। সকল শিক্ষানুরাগী এবং শিক্ষক সম্প্রদায় এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিকে তাকিয়ে আছে। এই লড়াইয়ের ফলাফল শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি নতুন দিশা নির্দেশ করতে পারে।
ভবিষ্যৎ কী?
শিক্ষকদের টেট পাশ বাধ্যতামূলক (Compulsory TET for Teachers) নিয়ে এই রিভিউ পিটিশনের ফলাফল শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী শুনানি (Supreme Court Next Hearing) এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। শিক্ষক সংগঠনগুলি আশাবাদী যে তাদের যুক্তি আদালত বিবেচনা করবে। এই লড়াই শুধু শিক্ষকদের জন্য নয়, শিক্ষার সার্বিক উন্নতির জন্যও। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষকরা এই কঠিন সময়ে একত্রে দাঁড়িয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আগামী দিনে এই মামলার ফলাফল কী হবে, সেদিকে সবার নজর।