জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের (NFSA) অধীনে অন্ত্যোদয় রেশন কার্ড গ্রাহকদের (Antyodaya Ration Card) জন্য বড় পরিবর্তন আসতে চলেছে। কেন্দ্রীয় সরকার এখন পরিবারভিত্তিক বরাদ্দের পরিবর্তে প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্যশস্য দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এতে বিনামূল্যে রেশন সামগ্রী পাওয়ার পাশাপাশি মাসে মাথাপিছু সাড়ে সাত কেজি চাল এবং গম মিলবে বলে জানা যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের মূল উদ্দেশ্য হলো বিতরণে যে অসমতা দেখা যাচ্ছে তা দূর করা। খাদ্য মন্ত্রকের সাম্প্রতিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে কিছু পরিবারে সদস্য সংখ্যা অনেক বেশি, আবার কিছুতে খুব কম। ফলে একই পরিমাণ খাদ্য সবাই পাচ্ছে না যা অন্যায্যতা সৃষ্টি করছে।
অন্ত্যোদয় প্রকল্পে বর্তমান ব্যবস্থা এবং সমস্যা
বর্তমানে অন্ত্যোদয় শ্রেণির রেশন (Antyodaya Ration Card) গ্রাহকরা প্রতি মাসে পরিবার প্রতি ৩৫ কেজি খাদ্যশস্য পান। এই নিয়মটি ২০১৩ সালের খাদ্য সুরক্ষা আইন অনুসারে চালু হয়েছে। কিন্তু এতে সমস্যা হলো যে সদস্য সংখ্যা নির্বিশেষে একই পরিমাণ দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি পরিবারে যদি দু’জন সদস্য থাকে তাহলে তারা বেশি পরিমাণ পান, আর সাতজনের পরিবারে কম পড়ে যায়।
খাদ্য মন্ত্রকের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে যে দেশে প্রায় এক কোটি ৭১ লক্ষ পরিবারে সদস্য সংখ্যা পাঁচের নিচে। অনেক পরিবারে মাত্র ২জন রেশন কার্ড গ্রাহক ও রয়েছেন। যাদের ৩৫ কেজি চাল গম এর প্রয়োজন হয়না। এর ফলে সরকারের খাদ্য বিতরণ ব্যয়ও অসমান্য হয়ে উঠছে।
নতুন প্রস্তাবিত নিয়মের বিস্তারিত বর্ণনা
কেন্দ্র এখন বিনামূল্যে (Free Ration) মাথাপিছু ৭.৫ কেজি খাদ্যশস্য বরাদ্দ করার চিন্তা করছে। এতে চারজনের কম সদস্যের পরিবারগুলো এখনকার চেয়ে কম খাদ্য পাবে। তবে যেসব পরিবারে সদস্য বেশি, তারা উপকৃত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। খাদ্য মন্ত্রকের অ্যাকশন প্ল্যানে এই পরিবর্তন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আগামী মার্চ মাসের মধ্যে এটি কার্যকর করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। রেশন কার্ড নিয়ে এই নিয়ম চালু হলে একদিকে সরকারের খাদ্য সংরক্ষণে সাশ্রয় হবে, এবং অন্যদিকে বড় পরিবার গুলো আরও বেশি রেশন পাবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের অন্যান্য রেশন কার্ডের সাথে
জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের অন্যান্য গ্রাহকরা ইতিমধ্যে মাথাপিছু পাঁচ কেজি খাদ্যশস্য পান। অন্ত্যোদয় রেশন কার্ড শ্রেণি হলো সবচেয়ে দরিদ্র পরিবারগুলোর মধ্যে অন্যতম। তাই এই বিশেষ শ্রেণীর BPL Ration Card এর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা। এখন এই শ্রেণিতেও মাথাপিছু বরাদ্দ চালু করে সাম্যতা আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। ২০১৩ সালের আইনে অন্ত্যোদয়দের জন্য ৩৫ কেজি নির্দিষ্ট করা ছিল। এখন সেই আইনে সংশোধনী আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে খবর। এতে সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা নীতি আরও শক্তিশালী হবে।
আরও পড়ুন, ১ এর বদলে ৪! ব্যাংক একাউন্ট নিয়ে বিরাট ঘোষণা। স্বাধীনতার পর এই প্রথম, এই সুবিধা পাবেন।
পশ্চিমবঙ্গে অন্ত্যোদয় রেশনের পরিস্থিতি
পশ্চিমবঙ্গে অন্ত্যোদয় রেশন কার্ডধারী পরিবারের সংখ্যা নির্দিষ্ট করা হয়েছে ১৬ লক্ষ ১৬ হাজারেরও বেশি। এই পরিবারগুলোতে মোট সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫২ লক্ষেরও বেশি। গড়ে প্রতি পরিবারে চারজনের কম সদস্য রয়েছে বলে তথ্যে উঠে এসেছে। রাজ্য সরকারও সম্প্রতি একক সদস্যের অন্ত্যোদয় পরিবার চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছে। এই নতুন নিয়ম চালু হলে রাজ্যের খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন আসবে। সামগ্রিকভাবে এটি দরিদ্রদের জন্য আরও ন্যায়সঙ্গত হয়ে উঠবে।
সরকারের উদ্দেশ্য এবং সম্ভাব্য প্রভাব
কেন্দ্রীয় সরকারের এই উদ্যোগের মূলে রয়েছে খাদ্য বিতরণে স্বচ্ছতা এবং সাশ্রয়। মাথাপিছু বরাদ্দ চালু করে অপচয় রোধ করা যাবে। ছোট পরিবারের অনেকেরই ৩৫ কেজি রেশন লাগে না। সেক্ষেত্রে কার্ড পিছু রেশন দিলে যাদের যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকুই পাবেন। পরিবারে বেশি সদস্য থাকলে বেশি রেশন পাবেন। দেশে যেসব পরিবারে সদস্য সংখ্যা পাঁচের বেশি, তারা এতে লাভবান হবে। খাদ্য মন্ত্রকের রিপোর্টে বলা হয়েছে যে ২৫ লক্ষেরও বেশি পরিবার এই শ্রেণিতে পড়ে। এই পরিবর্তন আইনি সংশোধনের পর কার্যকর হবে। সামগ্রিকভাবে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা প্রকল্প আরও কার্যকরী হয়ে উঠবে।
আরও পড়ুন, বাড়ি বসে ব্যবসা করে প্রচুর টাকা আয় করতে হলে এখানে দেখুন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং চ্যালেঞ্জ
খাদ্য মন্ত্রক আগামী বছরের প্রথমার্ধে এই নিয়ম চালু করার লক্ষ্য নিয়েছে। এতে রাজ্যগুলোর সহযোগিতা দরকার হবে। অন্ত্যোদয় প্রকল্পের গ্রাহকদের তালিকা আপডেট করতে হবে। এই পরিবর্তন দরিদ্র পরিবারগুলোর জীবনযাত্রায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সময় লাগতে পারে। সরকারের এই পদক্ষেপ খাদ্য সুরক্ষা নীতিকে আধুনিক করে তুলবে।