সারা দেশের বেকার ও শ্রমজীবী মানুষদের ই শ্রম কার্ড দিচ্ছে কেন্দ্র সরকার। এই E Shram Card পেলেই ৩০০০ টাকা করে আর্থিক সাহায্য পাওয়া যাবে। যার জেরে উপরিত হবেন দেশের কোটি কোটি মানুষ। ই শ্রম কার্ডের সুবিধা ও অসুবিধা, আবেদনের যোগ্যতা, আবেদন পদ্ধতি ও কি কি ডকুমেন্টস লাগবে, বিস্তারিত জেনে নিন।
ই শ্রম কার্ডের সুবিধা ও অনলাইনে আবেদন
কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক প্রকল্পের মাধ্যমে বর্তমানে সমগ্র দেশের জনগণ লাভবান হচ্ছে। কেন্দ্রের তরফে যেমন দেশের মহিলাদের জন্য একাধিক প্রকল্প রয়েছে তেমনি রয়েছে দেশের কৃষক এবং শ্রমিকদের জন্য বেশ কিছু প্রকল্পের ব্যবস্থা। ভারতবর্ষের বেকার যুবক-যুবতী এবং শ্রমিক সম্প্রদায়ের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার শুরু করেছে ই শ্রম কার্ড প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আর্থিক সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি পাওয়া যায় একটি শ্রমিক কার্ড। এর সাহায্যে উপভোক্তারা বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। কীভাবে এই কার্ড (Labour Card) করাবেন? কোন কোন সুযোগ সুবিধা পাবেন? আবেদনের যোগ্যতা কী রয়েছে? ইত্যাদি সহজ ভাবে বুঝে নিতে অবশ্যই শেষ পর্যন্ত পড়ুন এই প্রতিবেদনটি।
ই শ্রম কার্ড কি?
ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগে দেশের অসংগঠিত শ্রমিক ও ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য E-Shram Card প্রকল্পের চালু করা হয়। এর ফলে এই সমস্ত ছোট ব্যবসায়ী বা অসংগঠিত শ্রমিকদের যেমন একটি নিজস্ব পরিচয়পত্র হবে, ঠিক তেমনই তাদের জন্য চালিত সরকারি প্রকল্পগুলি সরাসরি উপভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাবে। যে সমস্ত শ্রমিকদের কোন স্থায়ী বা নির্দিষ্ট আয়ের উৎস নেই, তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার দায়িত্ব এই প্রকল্পের মাধ্যমেই কাঁধে তুলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
ই শ্রম কার্ডের সুবিধা
ই শ্রম কার্ড প্রকল্পটির মাধ্যমে বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে একাধিক সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবং এই সুযোগ-সুবিধা গুলি সরাসরি উপভোক্তার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্যই ব্যবহার করা হয় তাদের অন্যতম পরিচয় পত্র ই-শ্রম কার্ড। এই কার্ড থাকলে নিচের উল্লেখিত সমস্ত সুযোগ সুবিধা গুলি পাবেন যোগ্য উপভোক্তারা-
১) প্রধানমন্ত্রী পোষণ বা পেনশন:
কেন্দ্র সরকারের তরফে দেশের অসংগঠিত শ্রমিক এবং ব্যবসায়ীদের জন্য তৈরি করা এই প্রকল্পের মাধ্যমে বার্ধক্যকালীন অবস্থায় অর্থাৎ ৬০ বছরের পরবর্তী সময়ে নির্দিষ্ট পেনশন দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে কার্ডধারী ব্যক্তিরা প্রতিমাসে ৩০০০ টাকা করে পেনশন পেয়ে থাকেন।
২) প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (PMAY):
কার্ডধারী উপভোক্তার যদি মাথার উপরে পাকা ছাদ না থাকে, তাহলে সেই দায়িত্বভারও বহন করে কেন্দ্র। এর জন্য প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অন্তর্গত বাড়ি নির্মাণ প্রকল্পের মধ্যে সরাসরি অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন ই-শ্রম কার্ড গ্রাহকেরা।
৩) সুরক্ষা বীমা যোজনা (PMBSY):
এই প্রকল্পের মাধ্যমে ই-শ্রম কার্ডধারী কোন ব্যক্তির দুর্ঘটনাকালীন মৃত্যু ঘটলে অথবা অঙ্গহানি হলে তার পরিবারকে সর্বাধিক ২ লক্ষ টাকা বীমা সুরক্ষা দেওয়া হয়। এছাড়াও যদি আংশিক অঙ্গহানি হয়, তাহলে সর্বাধিক ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পেয়ে থাকেন ওই উপভোক্তা।
৪) শিক্ষা সংক্রান্ত সহায়তা:
শুধুমাত্র কার্ড ধারী ব্যক্তিদেরই না, তাদের পরিবারেরও যথাযথ দায়িত্ব নিয়ে থাকে কেন্দ্রীয় সরকার। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ই-শ্রম কার্ডধারী ব্যক্তির সন্তানের শিক্ষা ও পড়াশোনার জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয় সরকারি তহবিল থেকে।
৫) গর্ভবতী মায়ের সহায়তা:
এই প্রকল্পের নাম থাকলে গর্ব ধরনের পর থেকে বিভিন্ন চিকিৎসগত সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়।
কারা ই-শ্রম কার্ড প্রকল্পে আবেদন জানাতে পারবেন?
E Shram Card প্রকল্পে আবেদনের জন্য-
- আবেদনকারী প্রার্থীকে অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মী অথবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হতে হবে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বা স্থায়ী ভাবে বেতন প্রাপ্ত কর্মচারী হলে এই প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা নিতে পারবেন না।
- যে সমস্ত ব্যক্তিরা আয়কর প্রদান করে থাকেন, তাদের জন্য এই প্রকল্পটি নয়।
- ন্যূনতম ১৬ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৫৯ বছর পর্যন্ত এই প্রকল্পে আবেদন জানানো যেতে পারে।
- EPFO বা ESIC র সদস্যরাও এই প্রকল্পে আবেদন জানাতে পারবেন না।
আরও পড়ুন, রেশন কার্ডে ফ্রি রেশন পেতে হলে এই কাজ তাড়াতাড়ি করুন। শেষ তারিখ 25 জুন।
আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি
- আবেদনকারীর আধার কার্ড
- প্যান কার্ড
- কাজের প্রমাণ পত্র
- ব্যাংক একাউন্টের ডিটেলস
- আধার কার্ডের সঙ্গে লিঙ্ক করা মোবাইল নম্বর
- পাসপোর্ট সাইজ রঙিন ছবি ইত্যাদি।
ই শ্রম কার্ড অনলাইন আবেদন
ভারতবর্ষের অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য শুরু করা দুর্দান্ত এই ই-শ্রম কার্ড প্রকল্পে আবেদনের জন্য ইচ্ছুক প্রার্থীকে অবশ্যই এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যেতে হবে। এই প্রকল্পে অনলাইন মাধ্যমে আবেদন জানানো যায়। আবেদনের জন্য নিচে বলে দেওয়া ধাপ গুলি অবলম্বন করুন-
- প্রথমে ই শ্রম কার্ড (E Shram Card) এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে New Registration অপশনটি বেছে নিন।
- এরপর Registration on E Labour বিকল্প বেছে আধার লিঙ্কড মোবাইল নম্বরটি শূন্যস্থানে পূরণ করুন।
- আপনার মোবাইল নম্বরে আসা OTP বসিয়ে সাবমিট করে দিন।
- ব্যক্তিগত কাজের বিবরণ, ব্যাংকের ডিটেলস এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য যথাযথ স্থানে ভালোভাবে বুঝে পূরণ করে নিন।
আবেদনপত্র সাবমিট করার আগে ভালোভাবে মিলিয়ে নিয়ে অবশ্যই প্রয়োজনীয় নথিগুলি আপলোড করে। এরপর অবশেষে আবেদন পত্রটি সাবমিট করে দিন।
উপসংহার
আবেদনপত্র জমা পড়ে গেলে পরবর্তী সময়ে আপনি আপনার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরের সাহায্যে লগইন করে পুনরায় আপনার আবেদনের স্ট্যাটাস চেক করতে পারবেন। এছাড়াও পরবর্তী সময়ে এই প্রকল্পের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কেও জেনে নিতে পারবেন। এই বিষয়ে আরও জানতে এখানে ক্লিক করুন।