আমি পড়াতে চাই, ফিরিয়ে দাও চক ডাস্টার

যেদিন হাত থেকে কেঁড়ে নিয়েছিল বেতটা, সেদিন ও খারাপ লাগেনি। যেদিন বেতের সাথে সাথে ছাত্র শিক্ষকের সেই মধুর সম্পর্কটা ক্রমে ক্রমে দূরে সরে গিয়েছিল, সেদিন ও কিছু বলিনি। যেদিন সিঙ্গেল টিচার হয়ে একটি স্কুলে এসে একটি রুমে ৫টি ক্লাস একসাথে করেছি, সেদিন শিশু গুলোর নিস্পাপ মুখের হাসি, নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছিল। ব্লাক বোর্ডে অঙ্ক করতে দিয়ে মিড ডে মিলের খিচুড়ি টায় নুন হয়েছে কিনা, টেস্ট করার দিনগুলো বড্ড মিস করছি। আর্টস নিয়ে ঊচ্চমাধ্যমিক পাশ করেও মিড ডে মিলের ডেবিট ক্রেডিট শিখে গেছিলাম, কিম্বা এক্সেল ফাইল এডিট করা, কিম্বা নোকিয়ার সাদা কালো মোবাইল ব্যাবহার করা আমি আজ স্কুল ওয়েবসাইট ডিজাইন শিখে নিয়েছিলাম। সবই সম্ভব হয়েছিলো ওই নিস্পাপ মুখ গুলোর দিকে তাকিয়ে।

আজ দিনগুলো বড্ডই বেসামাল। দুই বছর হল সেই দুঃস্বপ্নের কাল। আজ চায়ের দোকানে আড্ডার সময়, খাচ্ছি দাচ্ছি, বাড়িতে বসে মাইনে পাচ্ছি কথাটা আর হজম করতে বেশ কষ্ট হয়। যদিও তারা হিসাব রাখেনি, ডোরিনার সেই জলকামান, কিম্বা দেড় মাসের অভুক্ত মুখ গুলো। যদিও তারা হিসাব করেনি, হাফ মাইনে পাওয়া লোকটা বাড়িতে দিনের শেষে কি বাজার করে ঘরে ফেরে। তবে আজ তারা বেশ হিসাব রক্ষক হয়ে উঠেছে।

দশটা পাঁচটার সেই দিন গুলো সত্যিই খুব মিস করছি। আজ একসুরে কিম্বা বেসুরো গুলায় জনগনমন আর শুনতে পাইনা। আজ চোখে মুখে সেই চকের গুঁড়ো লেগে থাকে না। আজ একটা বাজতেই স্কুল মাঠে একঝাঁক ধুলোময় কিম্বা কাদামাখা মুখ দেখতে পাইনা। আজ উচ্চ স্বরে বকুনি দিয়ে তাদের ক্লাসে ঢোকানো ও বড্ড মিস করছি। আজ ছুটির ঘণ্টা বাজতেই হাজার শিশুর কলরবে আর মুখরিত হয়না বিদ্যালয় চত্তর। আজ সেই খেলার মাঠ ঘাসেদের আস্তানা। ক্লাসগুলোয় মাকড়শার সুখের সংসার। আজ সেই ফেয়ারওয়েল আর হয়না। কিম্বা টিচার্স ডে, কিম্বা প্রভাত ফেরী। আজ অনলাইনের ফাঁকফোঁকরে শুধুই ভার্চুয়াল ফরম্যালিটি।

আজ তোদের বড্ড মিস করছি। মাসে ওই একদিনের চাল আলু দেওয়া আর তোদের একচিলতে দেখতে পাওয়াটা আর পোষায় না রে। আর কি দেখতে পাবো না? রিট্যারমেন্ট এর সময় হয়ে এলো। তবুও বড্ড বলতে ইচ্ছে করছে, ফিরিয়ে দাও চক ডাস্টার, আমি পড়াতে চাই।

বকলম

শেয়ার করুন: Sharing is Caring!

Leave a Comment