পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ তথা Dearness Allowance নিয়ে অপেক্ষার মাত্র ১ সপ্তাহ। আগামী ৪ ই আগস্ট ডিএ মামলার পরবর্তী শুনানি। আর সেদিন ই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে নালিশ জানাবে রাজ্য সরকারি কর্মীদের আইনজীবী। মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট বকেয়া এর অন্তত ২৫% ডিএ মেটানোর নির্দেশ দিলেও সরকারি কর্মীরা কোনও টাকা পাননি। অর্থাৎ এক্ষেত্রে কার্যত আদালত অবমাননার সামিল। আর এই আগস্ট মাসের ৪ তারিখের শুনানির দিনই রাজ্যের বিরুদ্ধে কড়া নির্দেশ জারি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন, রাজ্য সরকারি কর্মীদের একাংশ। যার জেরে পুজোর আগেই বকেয়া ডিএ এর টাকা পেতে পারেন সরকারি কর্মীরা।
Dearness Allowance Case Update
বাংলার সরকারি কর্মীদের দৃষ্টি এখন ৪ আগস্টের দিকে নিবদ্ধ। এই দিনে সুপ্রিম কোর্টে বকেয়া ডিএ (Dearness Allowance) মামলার পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় সম্প্রতি একটি তীব্র মন্তব্য করেছেন, যেখানে তিনি বলেছেন যে, রাজ্য সরকার এই মামলায় আর কোনো বিশেষ সুবিধা পাবে না। তিনি মনে করেন, সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত সরকারি কর্মীদের পক্ষেই হবে। এবং রাজ্য সরকার কর্মীদের সমস্ত বকেয়া মহার্ঘ ভাতা এর টাকা মেটাতে বাধ্য হবে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এবং রাজ্যের অবহেলা
গত ১৬ মে, ২০২৫ এ সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারকে সরকারি কর্মীদের জন্য মহার্ঘ ভাতার অন্তত ২৫% বকেয়া (৪ ভাগের এক ভাগ) পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছিল। আদালত ২৭ জুনের মধ্যে এই পরিশোধ সম্পন্ন করতে বলেছিল, তবে রাজ্য সরকার এই নির্দেশ অমান্য করেছে। এই অবহেলার কারণে মলয় মুখোপাধ্যায়ের মতে, আগামী শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যকে আরও বেশি বকেয়া ডিএ (Dearness Allowance) প্রদানের নির্দেশ দিতে পারে। তিনি শেষ শুনানিতে আদালতের কঠোর মনোভাবের কথা উল্লেখ করে কর্মীদের আশাবাদী করেছেন। এই পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মীদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। তিনি বিশ্বাস করছেন যে বিচারপতিরা এবার সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।
মলয় মুখোপাধ্যায়ের আশা ও আক্রোশ
মলয়বাবু আগামী ৪ আগস্টের মামলা নিয়ে বড় জয়ের ইঙ্গিত পাচ্ছেন। তিনি আশাবাদী যে পুজোর আগে কর্মীদের অ্যাকাউন্টে বকেয়া ডিএ এর অন্তত ৫০% টাকা জমা হবে। এই বিষয়ে তিনি রাজ্য সরকারের উপর তীব্র আক্রমণ চালিয়েছেন, বলে গেছেন যে খেলা-মেলা ও দান-খয়রাতিতে টাকা খরচে কোনো কার্পণ্য নেই, কিন্তু ডিএ দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার টাকার অভাব দেখাচ্ছে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে সরকারকে ডিএ দিতেই হবে। এই আক্রোশ সরকারি কর্মীদের মধ্যে একটি শক্তি সঞ্চার করেছে। তিনি এই বিষয়ে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আরও পড়ুন, সরকারি কর্মীদের নতুন ছুটি ঘোষণা, বৃদ্ধ বাবা-মা কে দেখাশোনার জন্য। প্রতিবছর কতদিন করে ছুটি পাবেন?
আদালত অবমাননার নালিশ ও রাজ্যের যুক্তি
মলয় মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে সুপ্রিম কোর্টে আদালত অবমাননার বিষয় তুলে ধরা হবে। তিনি মনে করেন যে এই শুনানিতে তারা সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। এই মামলার যা গতি প্রকৃতি, আজ হোক বা কাল রাজ্য কে সমস্ত বকেয়া টাকা মেটাতেই হবে। আর আগামী ৪ আগস্টের শুনানিতে রাজ্য সরকার আরও চাপে পড়তে পারে। অন্যদিকে, রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছে। তাদের যুক্তি হলো বকেয়া ডিএ মেটাতে প্রয়োজনীয় অর্থের বাজেট বরাদ্দ নেই, এবং এর জন্য আরও অন্তত ছয় মাস সময় দরকার।
আরও পড়ুন, পশ্চিমবঙ্গে শুরু হচ্ছে ভোটার তালিকা নিবিড় সংশোধন। বয়স অনুযায়ী কি কি নথি লাগবে? কাদের নাম বাদ যাবে?
পেন ডাউন প্রোগ্রাম ও কর্মীদের প্রতিবাদ
গত ২৭ জুন রাজ্য সরকার বকেয়া ডিএ না দেওয়ায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মী সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটি পেন ডাউন কর্মসূচী তথা প্রতীকী কর্ম বিরতি প্রোগ্রাম ঘোষণা করেছে। এই প্রতিবাদ সরকারি কর্মীদের মধ্যে একটি ঐক্যের সৃষ্টি করেছে। আর ধীরে ধীরে এই আন্দোলনের তিব্রতা বাড়ানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। যা রাজ্য সরকার কে চাপে ফেলতে পারে। সরকারি কর্মীদের পুরনাঙ্গ কর্ম বিরতি, রাজ্যের সমস্ত প্রশাসনিক কাজ আটকে যেতে পারে। এবার কর্মীরা এই নিয়ে কি সিদ্ধান্ত নেয় সেটাই দেখার।
উপসংহার
৪ আগস্টের শুনানি রাজ্য সরকার ও সরকারি কর্মীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। সরকারি কর্মী তথা মলয় মুখোপাধ্যায়ের আশা হলো এই শুনানিতে কর্মীদের পক্ষে সিদ্ধান্ত আসবে। পুজোর আগে বকেয়া ডিএ পাওয়া তাদের জীবনে একটি বড় স্বস্তি আনবে। অন্যদিকে রাজ্য সরকার ও রাজ্যের আর্থিক অবস্থার কারণ দেখিয়ে আরও ৬ মাস সময় চেয়ে আবেদন জানাবে। এবং তার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করবে। বিপরিতে রাজ্য সরকারি কর্মীরাও নিজেদের স্বপক্ষে যুক্তি দেবে। এবার এটাই দেখার মহামান্য বিচারপতি এই নিয়ে কি সিদ্ধান্ত নেয়।