পশ্চিমবঙ্গ ভোটার তালিকা বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা Special Intensive Revision (SIR Documents List) শীঘ্রই শুরু হতে চলেছে। বিভিন্ন সংবাদ সুত্র অনুযায়ী সোমবার বিকালে বিশেষ মিটিং এর মাধ্যমে ১ নভেম্বর থেকে রাজ্য জুড়ে এসআইআর এর ঘোষণা হয়ে যেতে পারে। নির্বাচন কমিশন আগেই জানিয়েছে, দেশজুড়ে চলা বিতর্কের মধ্যেও SIR প্রক্রিয়া চলবে। নভেম্বরের প্রথম তারিখ থেকে এটি চালু হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এতে ভোটারদের তথ্য যাচাই এবং সংশোধনের জন্য বিভিন্ন কাগজপত্র জমা দিতে হবে। এবার প্রশ্ন হচ্ছে, হচ্ছে ভোটার তালিকা সংশোধন SIR এ কি কি লাগবে (SIR Documents List)? কাদের নাম থাকবে, কাদের নাম কাটা যাবে? বয়স এবং জন্ম তারিখের ভিত্তিতে কী কী জমা দিতে হবে, বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
West Bengal Voter List Special Intensive Revision 2025
ভোটার লিস্ট সংশোধন ২০২৫ পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। এটি নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে চলবে এবং ভোটার তালিকাকে আরও সঠিক করবে। দেশের অন্যান্য রাজ্যের মতো এখানেও বিতর্ক শুরু হয়েছে, কিন্তু নির্বাচন কমিশন নিশ্চিত করেছে যে, এটা একটি স্বাভিক প্রক্রিয়া, এর আগেও হয়েছে। তাই এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
নভেম্বর ১ থেকে শুরু হয়ে এটি কয়েক মাস ধরে চলবে। এতে নতুন ভোটার যোগ হবে, নাম সংশোধন হবে। মৃত, অবৈধ ও ভুয়ো ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ যাবে। সঠিক কাগজপত্র না থাকলে আপনার নাম তালিকা থেকে বাদ যেতে পারে। কার কাছে কি ডকুমেন্টস আছে বা SIR Documents List আছে, সেটি দেখতে বাড়ি বাড়ি BLO Officer আসবেন। তাই আগে থেকে কি কি নথি লাগবে জেনে নিয়ে, রেডি করে রাখুন।
11 Important SIR Documents List
নির্বাচন কমিশন SIR Documents List এ ১১টি বৈধ প্রমাণপত্র নির্ধারণ করেছে। এগুলো পরিচয় এবং বয়স যাচাইয়ের জন্য ব্যবহার করা যাবে।
- প্রথমটি হল কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের কর্মীদের আইডি কার্ড বা পেনশন সার্টিফিকেট।
- দ্বিতীয়টি ১৯৮৭-এর ১ জুলাইয়ের আগে জারি হওয়া যেকোনো সরকারি নথি, যেমন ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরের কাগজ।
- তৃতীয় হল জন্ম সার্টিফিকেট, যা সঠিক কর্তৃপক্ষ থেকে নেওয়া।
- চতুর্থটি পাসপোর্ট, যা আন্তর্জাতিক পরিচয়পত্র হিসেবে গণ্য।
- পঞ্চম হল মাধ্যমিক বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সার্টিফিকেট।
- ষষ্ঠটি রাজ্য কর্তৃপক্ষের দেওয়া স্থায়ী বাসস্থানের প্রমাণ।
- সপ্তম হল বনাধিকার সার্টিফিকেট, যা বিশেষ সম্প্রদায়ের জন্য।
- অষ্টমটি জাতি সার্টিফিকেট যেমন SC, ST বা OBC।
- নবম হল জাতীয় নাগরিক রেজিস্টার, যেখানে প্রযোজ্য।
- দশমটি রাজ্যের পরিবার রেজিস্ট্রেশন
- একাদশটি সরকারি জমি বা বাড়ির বরাদ্দপত্র।
জন্ম তারিখ অনুসারে সংশোধনের নিয়ম
ভোটার তালিকা সংশোধন বা SIR প্রক্রিয়ায় জন্ম বছরের উপর ভিত্তি করে ৩ ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। সবার ক্ষেত্রে নিয়ম ভিন্ন। এটি তিনটি গ্রুপের প্রথম গ্রুপে ১৯৮৭ সালের আগে জন্ম নেওয়া ব্যক্তিরা পড়েন। দ্বিতীয়টি ১৯৮৭ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে। তৃতীয়টি ২০০২- সালের পরে জন্মগ্রহণকারীদের জন্য। এই বিভাজন সহজে কাগজপত্রের প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করে।
১৯৮৭ এর ১ জুলাইয়ের আগে জন্ম হলে
যারা ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে জন্মেছেন, তাদের জন্য প্রক্রিয়া সহজ। শুধু একটি কাগজ জমা দিলেই চলবে। এটি উপরোক্ত ১১টির মধ্যে যেকোনো একটা হতে পারে। যদি আপনার নাম ২০০২ এর পশ্চিমবঙ্গ ভোটার তালিকায় থাকে, তাহলে সেই পাতার কপি যথেষ্ট। অন্য কোনো নথির দরকার পড়বে না। এতে সময় এবং ঝামেলা অনেক কম হয়। তবে ২০০২ এর ভোটার লিস্টে নাম না থাকলে বাবা বা মায়ের ২০০২ এর লিস্ট জমা দিতে হবে। সেটিও না থাকলে উপরের ১১টি ডকুমেন্টস এর একটি জমা দিতে হবে।
১৯৮৭ এর ১ জুলাই থেকে ২০০২-এর ১ জানুয়ারির মধ্যে জন্ম
এই সময়কালে জন্ম নেওয়াদের দুটি নথি লাগবে। নিজের জন্য ১১টির মধ্যে একটা জমা দিন। যদি ২০০২-এ ১৮ বছর হয়ে থাকে এবং তালিকায় নাম থাকে, তাহলে সেই কপি চলবে। কিন্তু যদি ভোটার বয়স না হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই ১১টির একটা দরকার। বাবা বা মায়ের জন্যও একটা কাগজ জমা করুন। এটি ১১টির একটা বা ২০০২-এর তালিকার কপি হতে পারে।
আরও পড়ুন, ব্যাংকের এই নিয়ম না মানলে আধার কার্ড ও মোবাইল ফোন লক হয়ে যাবে। নতুন নিয়ম জেনে নিন
২০০২ এর ১ জানুয়ারির পরে জন্ম
যারা ২০০২ এর পরে জন্মেছেন, তাদের তিনটি কাগজ জমা দিতে হবে। এটি আরও কঠোর যাচাইয়ের জন্য। নিজের জন্য একটা, বাবা-মায়ের জন্য দুটো লাগতে পারে। বিস্তারিত নিয়ম নির্বাচন কমিশনের গাইডলাইনে আছে। এতে ভুল না করে সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিন। এই গ্রুপের জন্য অতিরিক্ত সতর্কতা জরুরি।
আরও পড়ুন, কারো নাম বাদ যাবে না। শুধু এরা ছাড়া।
উপসংহার
পশ্চিমবঙ্গে SIR চালু হওয়ার আগে থেকেই রাজনৈতিক দিক দিয়ে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। কলকাতার রাস্তায় ইতিমধ্যেই প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। যদিও এতে কারো নাগরিকত্ব যাবে কিনা বা কোনও বৈধ ভোটারের নাম কাটা যাবে কিনা, সেটা ভবিষ্যতে জানা যাবে। তবে পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচন কমিশন জেভাবেই হোক এই প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে। তবে এই প্রক্রিয়া শুরু হলে উপরের ১১টি ডকুমেন্ট এর যেকোনো একটি থাকলে কারো নাম কাটা যাবে না। তবে ২০০২ সালের তালিকায় নিজের বা পরিবারের কোনও নাম না থাকলে এবং উপরের ১১টি ডকুমেন্টস এর একটিও না থাকলে, যথা উপযুক্ত কারণ দেখাতে হবে। নাক কাটা যাবে না থাকবে, সেটা ঠিক করবে আবেদনকারীর নথি ও নির্বাচন কমিশন। আরও বিস্তারিত তথ্য পেতে এখানে ক্লিক করুন।