গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে দেশের সর্বোচ্চ আদালত তথা ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট সমস্ত শিক্ষকদের টেট পাশ বাধ্যতামূলক (TET Mandatory for All Teacher) করার নির্দেশ দিয়েছে। যার জেরে দেশের সমস্ত প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষকদের টেট পাশ করতে হবে। যদিও এই নির্দেশের বিপক্ষে বা পুনঃবিবেচনার আবেদন জানিয়েছে রাজ্য সরকার ও বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন। তবে এই নির্দেশ সত্যি সত্যি কার্যকর করতে হলে প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষক মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৯০০০০ শিক্ষক চাকরি হারাতে পারেন। আর ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার ও বিভিন্ন রকম প্রস্তুতি শুরু করেছে। বিস্তারিত জেনে নিন।
West Bengal Makes TET Mandatory for Teachers After SC Verdict
সুপ্রিম কোর্টের মহামান্য বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ অনুযায়ী প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের সকল শিক্ষকদের টেট পাশ (Compulsury TET) করতে হবে। ২০১১ সাল থেকে অনেক রাজ্যে টেট চালু হয়। তবে তার আগে অর্থাৎ ২০০৪ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত অনেক শিক্ষক শিক্ষিকা টেট পাশ ছাড়াই চাকরি পেয়েছেন। তখন অনেক স্কুলে ম্যানেজিং কমিটি শিক্ষক নিয়োগের রিকমান্ডেশন দিতো, সেই রিকোমান্ড অনুযায়ী শিক্ষা অফিস থেকে নিয়োগ পত্র দিতো।
২০০৪ এর আগে যারা চাকরি পেয়েছেন, তাদের অনেকেই এখন অবসর নিয়েছেন, বা নেবেন। যাদের ৫ বছরের অধিক সময় চাকরি আছে, সকলকে টেট পরীক্ষায় বসে পাশ করে তাদের চাকরি বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এটাই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের মূল কথা। তবে যাদের ৫ বছরের কম সময় চাকরি আছে, তাদের পরীক্ষা দিতে হবে না। এছাড়া আরও আইনি ব্যাখ্যা থাকতে পারে। তবে এটাই মূল নির্দেশ।
টেট পাশ বাধ্যতামূলক নিয়ে প্রতিক্রিয়া
শিক্ষকদের টেট পাশ বাধ্যতামূলক নিয়ে সারা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। ৩০ বছর চাকরির করার পর চাকরি বাঁচিয়ে রাখতে ফের পরীক্ষায় বসা, কতটা যুক্তিযুক্ত সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যার জেরে মামলার রায় নিয়ে সর্বপ্রথম উত্তরপ্রদেশ সরকার রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। উত্তর প্রদেশের মতো একাধিক রাজ্য ও রিভিউ পিটিশন জমা করছে। তবে কেরালা ও তামিলনাড়ুর মতো রাজ্য, কর্মরত শিক্ষকদের টেট পাশ করিয়ে নেওয়ার জন্য, আগামী বছর তিন দফায় টেট পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আদালতের রায় ঘোষণার আগেই টেট পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যও।
টেট বাধ্যতামূলক নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অবস্থান
পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষা দফতর টেট বাধ্যতামূলক ইস্যুতে সম্প্রতি একটি সমীক্ষা চালিয়ে জানিয়েছে যে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৯০ হাজার শিক্ষক টেট পাস (TET Mandatory for All Teacher) করেননি। এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে যাতে রায় পুনর্বিবেচনার সময় সব নথি হাতে থাকে। রাজ্য সরকার কালীপুজোর পর সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের বিপক্ষে পুনঃবিবেচনার আবেদন জানাবে বলে খবর। এদিকে, টেট পরীক্ষার জন্যও যাবতীয় প্রস্তুতি ও চলছে যাতে আদালত অবমাননার মামলা ও এড়ানো যায়। অর্থাৎ সরকার একদিকে এই রায়ের রিভিউ পিটিশন করছে। আবার শিক্ষকদের টেট পরীক্ষায় বসানোর জন্য ও প্রস্তুতি নিচ্ছে। এবার আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ হবে।
আরও পড়ুন, শিক্ষক ও সরকারি কর্মীদের সুখবর। বকেয়া টাকা পেয়ে গেলেন।
শিক্ষা দফতরের পরিকল্পনা
শিক্ষা দফতরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে রায় পুনর্বিবেচনার পাশাপাশি টেটের প্রস্তুতি চলছে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান বলেছেন যে সব নথি প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। এই সমীক্ষা থেকে স্পষ্ট যে অনেক শিক্ষকের জন্য চ্যালেঞ্জিং সময় এসেছে। রাজ্য সরকার নবান্ন থেকে সবুজ সংকেত পেয়েছে এই বিষয়ে। শিক্ষকদের তালিকা তৈরি করে যেকোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে চাইছে দফতর। এই পদক্ষেপগুলি শিক্ষকদের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শিক্ষকমহলের উদ্বেগ
শিক্ষকদের মধ্যে এই রায় ((TET Mandatory for All Teacher)) নিয়ে ব্যাপক অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অনেকে বিচার ব্যবস্থার উপর ভরসা রাখছেন এবং আশা করছেন আবেদন গ্রাহ্য হবে। শিক্ষক সংগঠনের নেতারা বলছেন যে ২০১০ সালের শিক্ষার অধিকার আইন তাঁদের সুরক্ষা দিয়েছে। যাঁরা আগে নিয়োগ পেয়েছেন তাঁদের টেট দিতে হবে না বলে তাঁরা মনে করেন। তবে যদি পরীক্ষা দিতে হয় তাহলে অনেকে প্রস্তুত হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষকরা সরকারের সাহায্য চাইছেন।
পশ্চিমবঙ্গ টেট এবং শিক্ষক নিয়োগ
এই রায় শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নতুন মানদণ্ড নিয়ে আসবে। পশ্চিমবঙ্গে টেট পরীক্ষা আরও নিয়মিত হতে পারে। শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন এটি শিক্ষার গুণমান বাড়াবে। তবে বর্তমান শিক্ষকদের জন্য এটি (TET Mandatory for All Teacher) একটি চাপের বিষয়। রাজ্য সরকারকে এই বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। শিক্ষক সংগঠনগুলি আরও আলোচনার দাবি করছে।
উপসংহার: সুপ্রিম কোর্ট রায় এবং শিক্ষক চাকরি সুরক্ষা
সামগ্রিকভাবে, এই রায় পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে পারে। ৯০ হাজার শিক্ষকের চাকরি ঝুঁকিতে পড়েছে কিন্তু রাজ্যের প্রস্তুতি আশার আলো দেখাচ্ছে। টেট পরীক্ষা নিয়ে সকলে সচেতন হচ্ছেন। আদালতের সিদ্ধান্ত অপেক্ষায় রয়েছে সবাই। শিক্ষা দফতরের পদক্ষেপগুলি (TET Mandatory for All Teacher) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ভবিষ্যতে শিক্ষকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারকে আরও উদ্যোগ নিতে হবে।