কেন্দ্র সরকারের প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা তথা PM Awas Yojana (PMAY) পশ্চিমবঙ্গে বাংলা আবাস যোজনা নামে পরিচিত। আবার নতুন করে বাংলার বাড়ি প্রকল্প ও চালু হয়েছে। এই তিনটি প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য গৃহহীনদের পাকা বাড়ি দেওয়া। আর এই কারনে যোগ্য গ্রাহকদের ১২০০০০ টাকা থেকে ১৩০০০০ টাকা দেওয়া হয়। এবার এই প্রকল্পে যারা আবেদন করেছেন, সেই আবাস যোজনা ঘরের লিস্ট ও কারা টাকা পাচ্ছেন সেই তালিকা কিভাবে দেখবেন, এবং নতুন করে এই প্রকল্পে আবেদন করার নিয়ম জেনে নিন।
PM Awas Yojana Gramin List and Payment Date
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পের মাধ্যমে, সারা দেশের মধ্যে বসবাসকারী অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল এবং বাড়িহীন পরিবারগুলিকে পাকা বাড়ি করে দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকদেরও বাংলা আবাস যোজনায় ভেরিফিকেশন বা তথ্য যাচাই সমাপ্ত হয়েছে। এবার যারা এই প্রকল্পের টাকা পাওয়ার যোগ্য, তাদের তালিকা প্রকাশিত হবে। তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা নিজেদের বাড়ি নির্মাণের জন্য আর্থিক সাহায্য পাবেন। এখন PWL তালিকার শেষ মুহুর্তের চেকিং প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পুজোর ছুটির পর তালিকা প্রকাশিত হলে, খুব শীঘ্রই একাউন্তেও প্রথম কিস্তির টাকা ঢুকে যাবে।
বাংলা আবাস যোজনার উদ্দেশ্য
বাংলা আবাস যোজনা গ্রামীণ এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে কাজ করে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল পরিবারগুলি বাড়ি নির্মাণের সুযোগ পায়। ঝড়-বৃষ্টি থেকে সুরক্ষার জন্য পাকা বাড়ি অত্যন্ত প্রয়োজন। যারা আর্থিক সংকটের কারণে বাড়ি তৈরি করতে পারেন না, তাদের জন্য এটি একটি আশীর্বাদ। সরকার এই স্কিমে আর্থিক সহায়তা দিয়ে তাদের স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করে। এই প্রকল্পে আবেদন করে অনেকেই নিজেদের স্থায়ী আশ্রয় পেতে পারেন।
যোগ্যতা ও কারা আবেদন করতে পারবেন?
- আবেদনকারীকে পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- যাদের পাকা বাড়ি নেই, তারাই এই প্রকল্পে আবেদন করতে পারবেন।
- পরিবারের বার্ষিক আয় এক লাখ টাকার কম হতে হবে।
- আবেদনকারীর কাছে বিপিএল রেশন কার্ড থাকা বাধ্যতামূলক।
- বাড়ি নির্মাণের জন্য নামে নথিভুক্ত জমির দলিল থাকতে হবে।
- যারা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় আবেদন করেছেন, তারা এই স্কিমে আবেদন করতে পারবেন না।
যোগ্যতার শর্ত
পরিবারের কোনো সদস্য যদি সরকারি চাকরিতে থাকেন, তারা এই প্রকল্পে অংশ নিতে পারবেন না। শুধুমাত্র একটি পরিবার থেকে একজন ব্যক্তি আবেদন করতে পারবেন। বাড়ি তৈরির জন্য কমপক্ষে ২৫ বর্গ মিটার জায়গা থাকা প্রয়োজন। এই শর্তগুলো পূরণ না হলে আবেদন বাতিল হতে পারে। যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য সঠিক তথ্য প্রদান জরুরি। এই নিয়মগুলো মেনে আবেদন করলে সুবিধা পাওয়া সহজ হবে।
আরও পড়ুন, বেকার ছেলেমেয়ে, গৃহিণী ও ছাত্রছাত্রীদের ৫ লাখ টাকা করে দিচ্ছে। অনলাইনে আবেদন করলেই টাকা পাবেন
আর্থিক সহায়তার পরিমাণ
বাংলা আবাস প্রকল্পের আবেদনকারীরা বাড়ি তৈরির জন্য মোট ১,২০,০০০ টাকা পান। এই অর্থ তিনটি কিস্তিতে প্রদান করা হয়। প্রথম কিস্তিতে ৫০,০০০ টাকা দেওয়া হয়। দ্বিতীয় কিস্তিতে ৪০,০০০ টাকা প্রদান করা হয়। তৃতীয় কিস্তি বাড়ি নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর দেওয়া হয়। সমস্ত অর্থ সরাসরি আবেদনকারীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হয়।
বাংলা আবাস যোজনায় কীভাবে আবেদন করবেন?
বাংলা আবাস যোজনায় আবেদন করতে স্থানীয় পঞ্চায়েত বা বিডিও অফিসে যোগাযোগ করুন। সেখান থেকে আবেদন ফর্ম সংগ্রহ করুন। ফর্মটি সঠিকভাবে পূরণ করে প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দিন। আবেদন জমা দেওয়ার পর আবাস যোজনা ঘরের লিস্ট তালিকা প্রকাশিত হবে। তালিকায় নাম থাকলে ধাপে ধাপে অর্থ ব্যাঙ্কে জমা হবে। সঠিক তথ্য দিয়ে আবেদন করা জরুরি।
প্রয়োজনীয় নথিপত্র
- আবেদনকারীর আধার কার্ড।
- বিপিএল রেশন কার্ড।
- বার্ষিক আয়ের প্রমাণপত্র।
- স্থায়ী বাসিন্দার সার্টিফিকেট।
- জমির দলিল বা পর্চা।
- সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
আবাস যোজনা ঘরের লিস্ট
আবেদন জমা দেওয়ার পর কর্তৃপক্ষ একটি সুবিধাভোগী তালিকা প্রকাশ করে। এই তালিকায় নাম থাকলে আবেদনকারী আর্থিক সহায়তা পাবেন। তালিকা অনলাইনে বা পঞ্চায়েত অফিসে চেক করা যায়। অর্থ ধাপে ধাপে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হয়। যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য সঠিক নথি জমা দেওয়া জরুরি। এই প্রক্রিয়া স্বচ্ছ এবং নির্ভরযোগ্য।
আরও পড়ুন, এই প্রকল্পে প্রতিমাসে পাবেন ৫০০০ টাকা। এই ভুল করলে টাকা পেলেও ফেরত দিতে হবে
বাংলা আবাস যোজনার টাকা কবে ঢুকবে
বাংলা আবাস যোজনার কিস্তির টাকা দেওয়ার সময়সূচী নির্ভর করে সুবিধাভোগীদের যাচাই এবং তালিকা অনুমোদনের উপর। প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাসে (২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে) উপভোগীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাওয়ার লক্ষ্য রাখা হয়েছে। এরপর দ্বিতীয় কিস্তির ৪০-৬০ হাজার টাকা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ বা মে মাসের মধ্যে দেওয়া হতে পারে, যা বাড়ি নির্মাণের অগ্রগতির উপর নির্ভর করবে। তৃতীয় কিস্তির ১০-২০ হাজার টাকা বাড়ি সম্পূর্ণ হওয়ার পর প্রদান করা হয়। মোট সাহায্য ১.২ লক্ষ টাকা, যা তিন কিস্তিতে বিভক্ত।
যদি আপনার নাম আবাস যোজনা ঘরের লিস্ট তালিকায় থাকে, তাহলে স্থানীয় পঞ্চায়েত বা বিডিও অফিসে যোগাযোগ করুন স্ট্যাটাস চেক করতে। সাম্প্রতিক আপডেট অনুসারে, পুজোর পরই এই প্রকল্পের প্রথম কিস্তির টাকা ছাড়া শুরু হবে এবং নতুন করে আবেদন ও নভেম্বর মাসে শুরু হতে পারে।
আরও পড়ুন, মাত্র ১০০০ টাকা বিনিয়োগে বাড়ি বসে এই ব্যবসা করে প্রতিমাসে ১৫০০০ টাকা আয় করুন।
উপসংহার: বাংলা আবাস যোজনার গুরুত্ব
বাংলা আবাস যোজনা পশ্চিমবঙ্গের দরিদ্র মানুষের জন্য একটি আশার আলো। এই প্রকল্প গ্রামীণ এলাকার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যারা গৃহহীন বা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তারা এই স্কিমে আবেদন করতে পারেন। সঠিক নথি এবং যোগ্যতা থাকলে বাড়ি নির্মাণের স্বপ্ন পূরণ সম্ভব। এই প্রকল্পে অংশ নিয়ে নিজের স্থায়ী আশ্রয় তৈরি করুন। আরও আপডেটের জন্য আমাদের পেজ ফলো করুন।