কেন্দ্রীয় সরকার রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি তথা PMUY LPG Subsidy নিয়ে দেশ জুড়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে চলেছে। ইন্ডেন, ভারত পেট্রোলিয়াম বা হিন্দুস্তান পেট্রলিয়াম যেকোনো ধরনের রান্নার গ্যাসের সাবসিডি (Liquefied Petroleum Gas) পেতে হলে এখন থেকে এই নিয়ম মানতে হবে। এই কাজ না করলে ভর্তুকির টাকা আর অ্যাকাউন্টে জমা হবে না। প্রথমে এই নিয়ম প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার সুবিধাভোগীদের জন্য চালু হবে। পরবর্তীকালে সারা দেশের সব এলপিজি গ্রাহকদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য করা হবে। এর উদ্দেশ্য হলো ভর্তুকি যাতে শুধুমাত্র যোগ্য ব্যক্তিরা পান এবং কোনো প্রতারণা না ঘটে। পশ্চিমবঙ্গে উজ্জ্বলা যোজনায় (PM Ujjwala Yojana) প্রায় এক কোটি তেইশ লক্ষ গ্রাহক রয়েছেন, যাঁদের এখন এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে। কি কি করতে হবে জেনে নিন।
PM Ujjwala Yojana LPG Subsidy Rules
পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয়ের মতে, রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি তথা PMUY LPG Subsidy এর অপব্যবহার রোধ করতে কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে উজ্জ্বলা যোজনার গ্রাহকরা প্রতি সিলিন্ডারে প্রায় তিনশো টাকা ভর্তুকি পান। চলতি বছরে সর্বোচ্চ নয়টি ১৪.২ কেজির সিলিন্ডারের জন্য এই সুবিধা দেওয়া হবে। কিন্তু নতুন নিয়মে অষ্টম এবং নবম সিলিন্ডারের ভর্তুকি পেতে আধার যাচাই অবশ্যই করতে হবে। যাঁরা পাঁচ কেজির সিলিন্ডার ব্যবহার করেন, তাঁদের জন্য এই নিয়ম একুশতম সিলিন্ডার থেকে শুরু হবে। যদি অর্থবর্ষের মধ্যে আধার লিংক বা গ্যাসের সাথে আধার নম্বর যাচাই না হয়, তাহলে অষ্টম সিলিন্ডারের পর থেকে ভর্তুকি বন্ধ হয়ে যাবে।
রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি না পাওয়ার কারণ
যদি ৩১ মার্চের মধ্যে গ্যাসের একাউন্টের সাথে আধার বায়োমেট্রিক যাচাই না করা হয়, তাহলে সেই বছরের বাকি ভর্তুকি আর মিলবে না। তবে সিলিন্ডার বুকিং এবং ডেলিভারি স্বাভাবিকভাবে চলবে। শুধুমাত্র ভর্তুকির অংশটি আটকে যাবে যতক্ষণ না যাচাই সম্পন্ন হয়। যাঁরা আগে থেকে যাচাই করিয়েছেন, তাঁদেরও প্রতি বছর নতুন করে এই প্রক্রিয়া করতে হবে। এতে করে সরকার ও নিশ্চিত হবে, যে সঠিক ব্যক্তিই তার বরাদ্দের গ্যাস পাচ্ছেন। তাই গ্রাহকদের এখন থেকে সুযোগ পেলেই গ্যাস অফিসে গিয়ে অথবা অনলাইনে এই কাজটি সেরে ফেলা উচিত।
রান্নার গ্যাস ও আধার নম্বর যাচাইয়ের উপায়গুলো কী কী?
গ্রাহকরা নিজেদের গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটরের অফিসে গিয়ে আধার যাচাই করাতে পারেন। অথবা সিলিন্ডার ডেলিভারি কর্মীর সাহায্যে বাড়িতেই এটি সম্পন্ন করা যাবে। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানিগুলির মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে ফেস অথেনটিকেশনও করা সম্ভব। নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসে এই যাচাই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য বিশেষ অভিযান চালানো হবে। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে তেল সংস্থাগুলিকে এই নির্দেশ দিয়েছে। এতে করে গ্রাহকদের সুবিধা হবে এবং ভিড় এড়ানো যাবে।
উজ্জ্বলা যোজনার গ্রাহকদের প্রভাব
প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা দেশের দরিদ্র পরিবারগুলিকে সস্তায় রান্নার গ্যাস সরবরাহ করে। এখন এই যোজনার সুবিধাভোগীদের জন্য আধার যাচাই বাধ্যতামূলক হয়ে উঠছে। পশ্চিমবঙ্গে এই প্রকল্পের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মহিলা গ্রাহক বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস সংযোগ পেয়ে কাঠের চুলায় রান্না করা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তাদের এবার সরকারি ভর্তুকি পেতে এই নিয়ম মেনে চলতে হবে। এতে করে ভর্তুকি ব্যবস্থা আরও স্বচ্ছ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে অনেক গ্রাহকের কাছে এটি একটি অতিরিক্ত প্রশাসনিক ঝামেলা হতে পারে। যার জন্য সরকার গ্রাহকদের নিজের এলাকায় বা অনলাইনে এই যাচাই প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা ও রেখেছেন।
আরও পড়ুন, EMI, পার্সোনাল লোন থেকে হোম লোনের সুদের হার কমে গেল। গ্রাহকদের সুখবর দিলো ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া
কাদের আধার ভেরিফিকেশন করতে হবে?
আপাতত উজ্জ্বলা প্রকল্পের গ্রাহকেরা যারা ১৯ টাকার বদলে ৩০০ টাকা ভর্তুকি পেয়ে থাকেন তাদের আধার ভেরিফিকেশন করতে হবে। তবে কেন্দ্রের ইঙ্গিত অনুযায়ী, প্রথমে এই গ্রাহকদের কাজ সম্পন্ন হলে, শীঘ্রই এই নিয়ম সারা দেশের সব এলপিজি ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রেও চালু হবে। এখনও পর্যন্ত এটি ঐচ্ছিক ছিল, কিন্তু এবার বাধ্যতামূলক করে তোলা হচ্ছে। এতে করে ভর্তুকির বিতরণ আরও কার্যকরী হবে। গ্রাহকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যাতে তারা সময়মতো আধার বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন নেন। আপনার এই ভেরিফিকেশন করা লাগবে কিনা, সেটি গ্যাস ডেলিভারি প্রতিনিধির কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন।
আরও পড়ুন, ব্যবসা করতে টাকা দিচ্ছে সরকার। এই সুযোগ আর পাবেন না।
জিএসটি রান্নার গ্যাসের দাম
সম্প্রতি কিছু পণ্যে জিএসটি (New GST Rate) কমানো হয়েছে, যা LPG Cylinder এর দামকেও প্রভাবিত করতে পারে। কলকাতায় রান্নার গ্যাসের বর্তমান দাম জেনে নেওয়া উচিত। তবে নতুন নিয়মের ফলে ভর্তুকি পাওয়া আরও নিয়ন্ত্রিত হবে। গ্রাহকদের সচেতনতা বাড়াতে সরকার বিভিন্ন প্রচার চালাবে। এতে করে প্রতারণার ঘটনা কমবে এবং সিস্টেমটি আরও শক্তিশালী হবে। সব মিলিয়ে এই পরিবর্তন দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।