পশ্চিমবঙ্গে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের অনুদান বাড়ানো হয়েছে। তার সাথে বেড়েছে দুর্গার ভান্ডারের অনুদান। তবে আর জি কর ঘটনার পর একাধিক ক্লাব এই অনুদান নিতে ইচ্ছুক নন।
পুজোর আগেই পশ্চিমবঙ্গে দুর্গার ভান্ডার
সারা রাজ্য জুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছে আর জি কর মেডিকেল কলেজের ছাত্রীর ধর্ষ’ণ হ’ত্যাকাণ্ড। সমগ্র রাজ্যবাসীর মধ্যে ক্ষোভ চরমে পৌঁছেছে। আর দ্রুত বিচার না করে দোষীদের বাঁচানোর অভিযোগে অনেকেই এই ঘটনার পেছনে দায়ী করছেন রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে। যে যেমনভাবে পারছে প্রতিবাদ জানাচ্ছে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। এই উপলক্ষে রাজ্যের বেশ কিছু পুজো কমিটিও ইতিমধ্যেই এবছর মুখ্যমন্ত্রীর আর্থিক অনুদান দুর্গার ভান্ডার নিতে অস্বীকার করে দিয়েছে। তবে কিছু কমিটি এই অনুদান নিতে আগ্রহী। আর এবার সেই নিয়েই নতুন বিবাদ সৃষ্টি হল রাজ্যে।
হুগলি জেলার দুর্গাপুজো কমিটিগুলির মধ্যে সরকারের দেওয়া ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ (অনুদান) নিয়ে অস্থিরতা বেড়ে গেছে। রাজ্য সরকারের তরফে পুজো কমিটিগুলিকে প্রদত্ত ৮৫ হাজার টাকার এই এককালীন অনুদান নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়েছে। একের পর এক পুজো কমিটি সরকারের দেওয়া এই অনুদান প্রত্যাখ্যান করে চলেছে, যার মধ্যে হুগলি জেলার চারটি কমিটি উল্লেখযোগ্য। তাদের মধ্যে উত্তরপাড়া এবং কোন্নগরের কিছু পুজো কমিটি ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে।
এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে কোন্নগরের পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন দাস অনুদান নিতে আগ্রহী পুজো কমিটিগুলোকে জমায়েতের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় ‘চলচ্চিত্রম মোড়’ এলাকায় জমায়েত হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে, এই আহ্বান নিয়ে বিতর্কও শুরু হয়েছে। বিজেপির দাবি, ‘আরজি কর-কাণ্ডে’ নাগরিকদের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদকে দমিয়ে দেওয়ার জন্য এই জমায়েত ডাকা হয়েছে। স্থানীয় বিজেপি নেতা প্রণয় রায় অভিযোগ করেছেন, পুরপ্রধানের উদ্দেশ্য হল সরকারি অনুদানকে রাজনীতির সাথে মিশিয়ে দেওয়া।
উল্লেখযোগ্য যে, রাজ্য সরকারের ‘দুর্গার ভান্ডার’ প্রকল্প ২০১৭-১৮ সালে শুরু হয়েছিল। এই প্রকল্পের আওতায় দুর্গাপুজোর জন্য পুজো কমিটিগুলিকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। প্রথমদিকে অনুদানের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার টাকা, যা বাজারদরের ভিত্তিতে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৮৫ হাজার টাকা করে অনুদানের ঘোষণা করেছেন।
প্রতি বছর দুর্গাপুজোর জন্য দুর্গার ভান্ডার প্রকল্পে এই অনুদান দেওয়া হয়, কিন্তু বর্তমানে আরজি কর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে বেশ কিছু পুজো কমিটি এই অনুদান গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়ে দিয়েছে। এই পদক্ষেপের সাথে রাজনীতির যোগ আছে বলে বিজেপি অভিযোগ করছে। তাদের মতে, যে পুজো কমিটিগুলি প্রতিবাদ জানাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে কোন্নগরের পুরপ্রধান অনুদান গ্রহণকারী কমিটিগুলিকে জমায়েতের জন্য ডেকেছেন। এই পরিস্থিতি রাজ্যের পুজো কমিটিগুলির মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
আরও পড়ুন, পশ্চিমবঙ্গের মহিলাদের লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের সব টাকা ফেরত দিতে হবে?
‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্প ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর শুরু হয়েছিল এবং এটি মহিলাদের জন্য মাসিক ভাতা হিসেবে প্রদান করা হয়। অন্যদিকে, ‘দুর্গার ভান্ডার’ বছরে একবার প্রদান করা হয়, যার জন্য পুজো কমিটিগুলিকে নির্দিষ্ট পোর্টালে আবেদন করতে হয়। আবেদনপত্রে ক্লাবের হিসাবপত্র, আগের বছরের অনুদানের হিসাব, দমকলের ছাড়পত্র এবং বিদ্যুত সংযোগের নথিপত্র আপলোড করতে হয়।
পুজো কমিটিগুলির এই প্রত্যাখ্যানের ফলে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতি কতটা গভীর হবে, তা সময়ই বলবে। তবে, বর্তমান পরিস্থিতি রাজ্যের দুর্গাপুজোর আর্থিক সহায়তা প্রকল্পের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
Written by Nabadip Saha.