আজকের বেকারত্বের যুগে ঘরে বসে কাজ বা Work From Home এর জনপ্রিয়তা বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাড়ির গৃহিণী থেকে শুরু করে ছাত্রছাত্রী সকলেই এখন ঘরে বসে বা বাড়ি থেকে কাজ করে রোজগারের বিভিন্ন পন্থা বেছে নিয়ে স্বাবলম্বী হতে চাইছেন। অনেক চাকরিজীবীও বাড়তি রোজগারের আশায় বাড়ি বসে কাজ করে উপরি ইনকাম করে আরেকটু স্বচ্ছল হতে চাইছেন। সত্যি কথা বলতে এই মূল্য বৃদ্ধির বাজারে নিজের শখ পূরণ এবং পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাড়ির প্রত্যেকটি সদস্যেরই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে রোজগার করা বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই নিজের বাড়িতে থেকে স্বল্প পুঁজিতে বা কোনও রকম বিনিয়োগ ছাড়াই (Work from home without investment) দুর্দান্ত রোজগারের পন্থা হিসেবে বেছে নেওয়া যেতে পারে প্যাকিংয়ের (Packing) কাজকে। কীভাবে স্বল্প পুঁজিতে এই কাজ শুরু করে মাসে হাজার হাজার টাকা রোজগার করবেন? জেনে নিন বিস্তারিত।
Work From Home Packing Jobs without investment
২০২০ সালের করোনার সময় থেকেই আর চিরাচরিত ভাবে অফিসে গিয়ে কাজ করার প্রয়োজন পড়ে না। বর্তমানে গ্লোবালাইজেশন (Globalization) এর সাথে সাথে অনলাইনে ঘরে বসেই বিভিন্ন কাজ (Work From Home) করার সুযোগ রয়েছে চাকরিপ্রার্থীদের কাছে। আর সব থেকে বড় কথা, নিজের বাড়িতে বসে নিজের সময় মত কাজ করে রোজগার করার এই পন্থাগুলি বর্তমানে বিপুল পরিমাণে জনপ্রিয়তা লাভ করছে। তবে এই ধরনের কাজ করার জন্য আপনাকে অবশ্যই বাড়ির বিভিন্ন কাজ সামলে ওঠার পাশাপাশি নিজের শখ এবং দক্ষতা গুলিকেও প্রকাশ করতে হবে।
বাড়িতে বসে প্যাকিংয়ের কাজ
বর্তমানে বিভিন্ন অনলাইন পরিষেবার সময়ে প্যাকিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাই আপনি নিজের বাড়িতে বসেই এই প্যাকিংয়ের ব্যবসা (Packing Business) অতি সহজেই শুরু করতে পারেন। এর জন্য আপনার মূলধন প্রয়োজন হবে অত্যন্ত কম এবং আপনি রোজগার করতে পারবেন প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকারও বেশি। আবার অনেক সময় জনপ্রিয়তা লাভ করলে প্রতি মাসে ঘরে বসেই ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার করতে পারেন।
প্যাকিংয়ের কাজ করার সুযোগ সুবিধা
- এই কাজ করার জন্য আপনার কোন বিশাল শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন হবে না।
- দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে নিজের বাড়িতে বসেই অনলাইন কিংবা অফলাইনে প্যাকিং এর বিজনেস শুরু করা যেতে পারে।
- এই ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনার কোন নির্দিষ্ট বয়স সীমার প্রয়োজন নেই। ন্যূনতম ১৭-১৮ বছর বয়স থেকে সর্বোচ্চ ৫০-৬০ এমন কি ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত এই কাজ করা যেতে পারে।
- পারিবারিক ব্যবসা হিসেবে প্যাকিংয়ের কাজকে তুলে ধরা যেতে পারে এবং এটির আরো অধিক পরিমাণে অগ্রগতি করাতে পারেন।
- ব্যক্তিগত স্তরেও এই ব্যবসা পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে সকলেই ঘরে বসে নিজের অবসর সময়ে করে রোজগার করতে পারেন।
- Packing করার ঘরে বসে ব্যবসায় কোন কোন কাজ করতে হবে?
প্যাকিং এর কাজ, কথাটি শুনেই বোঝা যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র গুছিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে প্যাক করা। আসলে বর্তমানে অনলাইনের দুনিয়ায় বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট অনলাইন মাধ্যমে বিক্রয় করা হয়ে থাকে। এর জন্য প্রচুর পরিমাণে প্যাকিং এর প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানি তাদের এই সমস্ত প্যাকিংয়ের কাজের জন্য আলাদা করে কর্মী নিয়োগ করে থাকে। অনেক সময় এই কারখানায় গিয়ে এই কাজ করার সুযোগ মেলে। তবে বর্তমানে বাড়িতে বসে (Work From Home) এই প্যাকিংয়ের কাজ করে রোজগার করা সম্ভব।
এক্ষেত্রে ধরুন, কোন একটি অনলাইন সংস্থা থেকে একটি জামা কাপড় বা প্রোডাক্ট বিক্রি হয়েছে। তখন ওই কোম্পানির কর্মী হিসেবে আপনার বাড়িতে সরাসরি সেই প্রোডাক্টটি ডেলিভার করা হবে। এর পাশাপাশি ওই প্রোডাক্ট এর প্যাকিং এর জন্য যাবতীয় সামগ্রী যেমন- ডেলিভারি প্যাকেজিং, ডেলিভারি এড্রেস এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট ওই প্রোডাক্ট এর সঙ্গেই আপনার বাড়িতে চলে আসবে। এরপর আপনাকে শুধু সেই প্রোডাক্টগুলি গুছিয়ে প্যাকেটের মধ্যে ভরতে হবে এবং সেটিকে সিল করে দিতে হবে। তবে এই ধরনের কাজের জন্য নির্দিষ্ট একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া থাকে। সেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আপনাকে প্রোডাক্টগুলি ভালোভাবে গুছিয়ে প্যাক করে কোম্পানির কাছে পাঠিয়ে দিতে হবে।
প্যাকিং এর জন্য কত সময় লাগবে?
প্রতিদিন হিসাবে সরকারি কিংবা বেসরকারি চাকরি কিংবা ব্যবসার মতো এক্ষেত্রে কোন সময়সীমা বেঁধে দেওয়া থাকে না। সারাদিনে নিজের অবসর সময়ের মধ্যে যেকোনো সময়ে আপনি ঘরে বসে কাজ করতে পারেন। অর্থাৎ আপনি বাড়ির গৃহিণী হলেও সংসারের যাবতীয় কাজ সামলে অবসর সময়ে এই কাজ করে রোজগার (Work From Home Income) শুরু করতে পারেন। তবে যে কোম্পানি বা সংস্থার সঙ্গে আপনি চুক্তিবদ্ধ রয়েছেন, সেই সংস্থার পক্ষ থেকে দেওয়া নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই সমস্ত কাজ করে আপনাকে প্রোডাক্ট গুলি জমা করতে হবে।
প্যাকিং এর কাজের অসুবিধা
প্যাকিং এর ঘরে বসে ব্যবসা বা কাজের যেমন একাধিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, তেমনি রয়েছে বেশ কয়েকটি অসুবিধাও। যেমন, অনেক সময়ই প্যাকিংয়ের জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী কেনার দরকার হয়ে থাকে। সেই ক্ষেত্রে একদমই অল্প মূলধন বিনিয়োগ করেই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। এর পাশাপাশি প্যাকিংয়ের কাজ করার জন্য অবশ্যই যথেষ্ট পরিমাণে ধৈর্য এবং যত্নের সাথে কাজ করতে হয়। অন্যের প্রোডাক্ট যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেই বিষয়টি খেয়াল রেখেই আপনাকে কাজ করতে হবে।
প্যাকিং ব্যবসায় করে কত টাকা রোজগার সম্ভব?
ইচ্ছুক প্রার্থীদের জানিয়ে রাখি, প্যাকিংয়ের কাজের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ কোন আয় বেশিরভাগ সময়েই থাকে না। মূলত এই কাজের ক্ষেত্রে আয়ের পরিমাণ নির্ভর করে কাজের পরিমাণ এবং গুণগত মানের উপর। আপনি যত ভালো কাজ করেন সঠিক সময়ের মধ্যে ডেলিভার করতে পারবেন, তার উপর নির্ভর করেই আপনার কাছে প্রচুর পরিমাণে কাজের অফার আসবে। এই ক্ষেত্রে আপনি যে সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ রয়েছেন, সেই সংস্থার উপরেও আয়ের পরিমাণ নির্ভর করে। তবে এই কাজ করে ন্যূনতম ১০,০০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত রোজগার করা সম্ভব।
আরও পড়ুন, ব্যবসা করতে টাকা দিচ্ছে সরকার, টাকা পেতে এখানে ক্লিক করুন।
প্যাকিংয়ের কাজ কিভাবে পাবেন?
সাধারণত বিভিন্ন কোম্পানির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটেই প্যাকিংয়ের কাজের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এক্ষেত্রে আপনাকে নিয়মিত বিভিন্ন ই-কমার্স কোম্পানি অথবা অনলাইন ওয়েবসাইটগুলিতে নজর রাখতে হবে। এর পাশাপাশি আপনি নিজে থেকেও তাদের অফিসিয়াল ইমেইল আইডিতে আপনার আবেদন জমা করতে পারেন। এর পাশাপাশি আপনার নিকটবর্তী কারখানায় যোগাযোগ করেও প্যাকিংয়ের কাজের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে আবেদন জানাতে পারেন। এখানে ক্লিক করে আরও বিস্তারিত জানতে পারেন।
উপসংহার
এক কথায় বলতে গেলে, আজকের মূল্য বৃদ্ধির বাজারে বাড়ির গৃহিণী এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য রোজগার করার অন্যতম বিকল্প প্যাকিংয়ের কাজ। ঘরে বসেই বা বাড়ি থেকে কাজ করা যাবে (Work From Home) কোনরকম ঝামেলা ছাড়াই এবং অনায়াসে এই কাজ করে রোজগার করা যায়। তাই আপনি যদি এই বিষয়ে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে আর বেশি দেরি না করে এখনই অনলাইন এবং অফলাইনে যোগাযোগ করে কাজ শুরু করে দিন।