শিক্ষক বদলিতে নতুন আইন পশ্চিমবঙ্গে, কমপক্ষে একবার গ্রামের স্কুলে বদলি নিতে হবে।

পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত শিক্ষকদের সুবিধার্থে শিক্ষক বদলি সংক্রান্ত উৎসশ্রী পোর্টাল চালু করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। যার ফলে শিক্ষক বদলিতে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় থাকে। আর এই পোর্টাল চালু হওয়ার পর ৬০ হাজারের ও বেশি শিক্ষক বদলীর সুযোগ পেয়েছেন। ভবিষ্যতে সংখ্যাটা আরও বাড়বে। তবে এর ফলে অন্য বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়েছে, যার জেরে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হলো আদালত।

শিক্ষক পদে চাকরি পাওয়ার পর, বাড়ি থেকে দূরে কোনো স্কুলে চাকরি সূত্রে যোগ দিয়ে পরে বদলির আবেদন করার সুযোগ পাওয়া যায়। আর অনলাইনে আবেদন করার কয়েকদিনের মধ্যেই সেই স্কুলে চলে গেলেন। অথচ যে স্কুল থেকে গেলেন সেই স্কুলে শিক্ষক পদ শূন্য থেকে গেলো। নতুন এই নিয়মে, যদি অই স্কুল কেও অপশনে না দেয়, তবে অই স্কুল ফাকাই থাকবে। এরকম ঘটনা অহরহ দেখা যাচ্ছে। রাজ্যজুড়ে অধিকাংশ শিক্ষক বাড়ির কাছের স্কুলে আসবেন বলে দপ্তরে আবেদন করেছেন। এই সংক্রান্ত বহু মামলা আদালতে চলছে।

কোনো কারন নয়, শুধুমাত্র বাড়ির কাছের স্কুলে চাকরি করবেন বলে সরকারের কাছে শিক্ষক বদলির আবেদন করছেন। বহু ক্ষেত্রে সরকার সেই শিক্ষক বদলির আবেদন মঞ্জুর করছে। আবার কোনো আবেদন মঞ্জুর না হলে সেই শিক্ষক সরাসরি আদালতের কাছে এসে আবেদন করছেন। ফলে এরকম বহু মামলা জমে গিয়েছে। এই প্রসঙ্গে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছেন।

শিক্ষক বদলি নিয়ে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণঃ

তিনি রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়কে এই বিষয়ে সরকারের নির্দিষ্ট নীতি গ্রহণ করার কথা বলেন। এই ভাবে যদি সমস্ত শিক্ষক শুধুমাত্র বাড়ির কাছে আরামে চাকরি করবেন বলে চলে আসতে চান, তাহলে গ্রামের দূরবর্তী স্কুলগুলোর ছাত্র-ছাত্রীদের কি হবে? তারা তো শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবেন। তাদের ক্ষেত্রে কি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার?

কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকার ১১৫টি স্কুলে প্রায় ৫০০ জন শিক্ষক রয়েছেন। সেই সমস্ত স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা যথেষ্ট কম। এমনও স্কুল রয়েছে যেখানে একজন পড়ুয়াও নেই। আবার গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলিতে যথেষ্ট সংখ্যা ছাত্রছাত্রী থাকলেও শিক্ষকের অভাব রয়েছে। এই বিষয়ে বিচারপতি বসু বলেন, শিক্ষকেরা এরকম করলে গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীদের কি হবে?

রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া DA নিয়ে বড় আপডেট, কি জানালো সুপ্রিম কোর্ট?

এডভোকেট জেনারেল এর উদ্দেশ্যে বিচারপতির বক্তব্য, এই বিষয়ে সরকারকে নির্দিষ্ট নীতি গ্রহণ করতে হবে। যদি শিক্ষকের পরিমাণ বেশি থাকে তাহলে পুনরায় শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে কেন? এমন বহু স্কুল রয়েছে যেখানে ছাত্র আছে শিক্ষক নেই। এই রকম আইন করুন যাতে কমপক্ষে ৫ বছর সবাইকে গ্রামের স্কুলে পড়াতে হয়। অথবা মিউচুয়াল টিচার না পেলে বদলী হবে না। কোন স্কুল কে বঞ্চিত করে শিক্ষক বদলী করা যাবে না। নতুবা গ্রামের পড়ুয়ারা শিক্ষক অভাবে পড়াশোনা করতে পারবে না।

সরকারি কর্মী ও শিক্ষকদের ‘বাবুগিরি’ বন্ধ করতে, DA ও বেতন বন্ধের হুশিয়ারি

বিচারপতির কথায়, যদি বাড়ির কাছেই যদি স্কুল পেতে হয়, এরকম পরিস্থিতি হলে বাড়তি শিক্ষকদের ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। সেখানে গিয়ে তারা শিক্ষাদান করবেন।
এই প্রসঙ্গে রাজ্যের এজি বলেন, সরকার সব সময় চায় ভালো শিক্ষক নিয়োগ করতে। বিষয়টি সরকার যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করছে।
এবার এটাই দেখার এই নিয়ে রাজ্য সরকার তথা শিক্ষা দপ্তর কি ব্যবস্থা নেয়।
Written by Rajib Ghosh.

শেয়ার করুন: Sharing is Caring!

Leave a Comment