আজ সকালে এক যুগের অবসান। প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য (Buddhadeb Bhattacharjee). আজ সকাল ৮টা ২০ মিনিটে পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতেই তিনি প্রয়াত হন। ৮০ বছর বয়সে শ্বাসকষ্ট জনিত কারনে হৃদরোগে আক্রান্ত নিয়ে কলকাতায় নিজ বাসভবনে দেহত্যাগ করলেন। যার জেরে রাজ্য তথা দেশ জুড়ে শোকাচ্ছন্ন। আর মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের সরকারী দপ্তর ছুটি ঘোষণা করলেন।
Buddhadeb Bhattacharjee death News
বাম রাজনীতিতে বড় নক্ষত্রপতন ও সেইসঙ্গে অবসান হল একটি যুগের। আজ সকালে প্রয়াত হলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন বামপন্থী মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (Buddhadeb Bhattacharya). শোনা যাচ্ছে, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা এবং সিওপিডির (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ) কারণে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন তিনি। অবশেষে বৃহস্পতিবার সকালে, পাম অ্যাভিনিউয়ের প্রিয় বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে চলে যান।
রাজ্য জুড়ে ছুটি ঘোষণা
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর প্রয়ানে (Buddhadeb Bhattacharjee) আজ রাজ্য জুড়ে ছুটি ঘোষণা করলেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী (Manata Banerjee). তিনি জানান রাজনৈতিক মত ভিন্ন হলেও তার সাথে সম্পর্ক ভালো ছিলো। এবং ২০১১ এর পরও একাধিকবার মুখ্যমন্ত্রী তার সাথে দেখা করেছেন। তার অসুস্থতার সময়ে রাজ্য সরকার পাশে থেকেছে। আর এবার ও তার পরিবার চাইলে রাজ্য সরকার তার মরোদেহ সরকারী ভাবে শেষকৃত্য ও সমাধি সংক্রান্ত সমস্ত কাজ করতে পারে।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ গোটা বাম শিবির। তিনি ছিলেন বামফ্রন্ট সরকারের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ এবং পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক আকাশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর মৃত্যুতে শেষ হলো এক ‘সোনালি’ অধ্যায়, যা রাজ্যের বাম রাজনীতিতে গভীর শূন্যতা সৃষ্টি করল।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শারীরিক অবস্থা গত কয়েকদিন ধরেই খারাপ ছিল। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ও জ্বরের কারণে তিনি ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। পরিবারের সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকালে তিনি (Buddhadeb Bhattacharjee) প্রতিদিনের মতো প্রাতঃরাশ করেন, এরপরেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসকরা দ্রুত তাঁর বাড়িতে পৌঁছালেও তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। পরিবারের সদস্যদের চোখের সামনেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত হন।
২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর থেকেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শারীরিক সমস্যা বাড়তে থাকে। সিওপিডির কারণে তিনি প্রায় ১১ বছর ধরে ঘরবন্দি ছিলেন। এর আগে বহুবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। শেষবার গত বছরের ২৯ জুলাই, শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। দীর্ঘ ১২ দিনের চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। তারপর থেকেই বাড়িতেই ছিলেন বুদ্ধদেব।
আরও পড়ুন, আবার টানা ছুটি! বন্ধ থাকতে চলেছে স্কুল- কলেজ ও সরকারি অফিস। কবে থেকে শুরু দেখুন
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ২০০০ থেকে ২০১১ পর্যন্ত। তাঁর নেতৃত্বে রাজ্যের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। শিল্পায়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিক্ষেত্রে তাঁর অবদান অপরিসীম। বামফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রিসভায় দীর্ঘদিন ধরে তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর সময়কালে রাজ্যের উন্নয়নে যে অগ্রগতি হয়েছে তা উল্লেখযোগ্য। তাঁর মৃত্যুর খবরে গোটা রাজ্যের মানুষ শোকাহত। এক সময়ে যে মানুষটি রাজ্যের উন্নয়নের জন্য দিন-রাত কাজ করেছেন, আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই।
আরও পড়ুন, স্বাধীনতা দিবসে দেশবাসীকে বিশেষ উপহার দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। হার ঘর তিরঙ্গায় আবেদন করুন
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা-কর্মী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসু সহ অন্যান্য নেতারা তাঁর অবদানের কথা স্মরণ করেছেন এবং শোক প্রকাশ করেছেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ছিলেন একজন প্রকৃত জননেতা। তাঁর মৃত্যুর খবরে শুধু রাজ্যের মানুষ নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ শোকাহত। তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায়, তাঁর কাজ, তাঁর অবদান চিরকাল মানুষের মনে থাকবে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণে এক ‘সোনালি’ অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটল। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা বাম শিবির এবং সাধারণ মানুষ।
Written by Nabadip Saha.