সরকারি দপ্তরে চাকরি, মানেই বেকার যুবক যুবতীদের স্বপ্নপূরন বলা চলে (West Bengal Govt Job)। আর তারজন্য যদি কিছু দিতে হয়, তবে ক্ষতি কি? সেই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে একাধিক প্রতারণা চক্র। বিভিন্ন দপ্তরের অফিসিয়াল সাইটকে নকল করে চলছে লোক ঠকানো। প্রায় অভিন্ন ওয়েবসাইট অ্যাড্রেস তৈরি করে বড় অঙ্কের টাকার তোপের বিনিময়ে সরকারী চাকরীর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, অসাধু চক্র।
কলকাতা পুলিস সূত্রে জানা যাচ্ছে, ফাঁদ পেতে চাকরিপ্রার্থীদের টাকা হাতানোর একাধিক অভিযোগ ইতিমধ্যেই জমা পড়েছে রাজ্যের বিভিন্ন থানা ও সাইবার থানাগুলিতে। প্রতারণা চক্রের পাতা এহেন ফাঁদ কী ভাবে এড়ানো যাবে, সে সম্পর্কে সচেতন করতে প্রচারও শুরু করেছে রাজ্য পুলিস।
সংবাদ সূত্রের খবর, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরই গজিয়ে ওঠে এই প্রতারণা চক্রগুলি। West Bengal Govt Job
রাজ্য পুলিসের ডেপুটি সুপার পদমর্যাদার আধিকারিক বিদিত মণ্ডল জানিয়েছেন, স্থানীয় এলাকাতেও এই প্রতারণা চক্রগুলির চর রয়েছে। সেই এলাকায় কোন কোন বাড়িতে বেকার যরিত যুবতী রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কতজন সরকারি চাকরিতে ইচ্ছুক বা পরীক্ষা দিয়েছেন, সেই খবর খোজ নিচ্ছে প্রতারণা চক্রগুলি। সেইমতো চাকরিপ্রার্থী ও তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা কেমন সমস্ত কিছু জেনে যারা টাকা দিতে পারবে তাদের সঙ্গে নানা অছিলায় যোগাযোগ করে সেই চর। তারপর সরকারী চাকরীর টোপ দেয়। West Bengal Govt Job
রাজ্য পুলিস সূত্রে খবর, প্রার্থীকে টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেয় প্রতারকরা। এবং প্রথমে অর্ধেক টাকা অগ্রীম নেয়। এবং মাধ্যমিকের Admit Card , সার্টিফিকেট, এবং চাকরীর পরীক্ষার Admit Card জমা রাখে। এবং আশ্বাস দেয় যে চাকরীর রেজাল্ট এর পর বাকি টাকা দিয়ে ডকুমেন্টস ফেরত নিতে হবে। এবং নির্দিষ্ট দিনে ওই ভুয়ো ওয়েবসাইটে রেজাল্ট দেখিয়ে টাকা নিয়ে গা ঢাকা দেয়। আবার নতুন এলাকায় প্রার্থী খোজা, এইভাবে চলতে থাকে। West Bengal Govt Job
রাজ্যর এক পুলিস আধিকারিক জানান, সংশ্লিষ্ট বিভাগের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের আগেই ওই চক্র তৈরি করে একটি নতুন সাইট, প্রায় অবিকল। ‘ইউআরএল’ কিছুটা ভিন্ন তবে তা যে ভুয়ো, তা সাধারণ চোখে দেখে বোঝার উপায় নেই বলেই জানান রাজ্য পুলিসের ওই কর্তা। তিনি রাজ্য পুলিসের ফেসবুক পেজে একটি সচেতনতা বার্তায় উদাহরণস্বরূপ জানিয়েছেন, রাজ্যের গ্রুপ-ডি পদে চাকরির ক্ষেত্রেও এই অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। এই দপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের নাম www.wbgdrb.in। তবে তদন্তে দেখা গিয়েছে, ফলাফল প্রকাশের আগে প্রতারকদের তৈরি ওয়েবসাইটটির নাম www.wbgdrbresult.in। পুলিস জানিয়েছে এই সাইটটির কোনও বৈধতা নেই। এছাড়াও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ, ভুয়ো পোষ্যো কোঠায় চাকরী প্রভৃতি অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আর প্রার্থীরা টাকা দিয়ে পুলিসেও জগাজোগ করার সাহস পান না, এই সুযোগটি ওই চক্র বেশি করে নিচ্ছে।
সংবাদসূত্রে আরো জানা গেছে, এখানে পরীক্ষায় পাশ করা চাকরিপ্রার্থীদের একটি ভুয়ো তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রতারকদের ফাঁদে পা দেওয়া পরীক্ষার্থী আদতে ফেল করলেও ভুয়ো সাইটে তাঁকে ‘পাশ’ দেখানো হবে। নকল ফলাফল প্রকাশের পরই চাকরিপ্রার্থীরা নিজেদের চারে তাদের সঙ্গে কথা বললেই নানান অছিলায় টাকা দাবি করতে থাকে প্রতারকরা। মোটা টাকা আদায় হয়ে গেলেই যাবতীয় সদ্ভাব উধাও।
পুলিসকর্তা বিদিতবাবু জানিয়েছেন, শিক্ষাদপ্তরের একাধিক বিভাগে এধরনের অভিযোগ মিলেছে। প্রসঙ্গত এই দপ্তরের চাকরির পরীক্ষার ক্ষেত্রেই ভুয়ো সাইট খুলতে বেশি আগ্রহী প্রতারণা চক্রগুলি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের পাকড়াও করতে সক্ষম হয়েছেন তদন্তকারীরা। পুলিসের সচেতনতা বার্তায় দেখা গিয়েছে, www.wbbpe.org হল ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড অব প্রাইমারি এডুকেশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট। সেটিকে নকল করে প্রতারকরা তৈরি করেন www.wbbperesult.org। তার মাধ্যমে জালিয়াতি চালানোর অভিযোগ পায় তদন্তকারীরা। এই সমস্ত ভুয়ো সাইট থেকে সাবধান থাকতে অনুরোধ জানিয়েছে রাজ্য পুলিস।