পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মীরা ROPA 2009 এর বকেয়া ডিএ এবং ROPA 2019 এর বর্তমান ডিএ AICPI হারেই পাবেন। শুনানির আগেই বড় আপডেট

পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের (Government Employees) বকেয়া ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা (Dearness Allowance) নিয়ে চলমান মামলা সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court of India) এক নতুন মোড় নিয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে চলে আসা এই মালায় টানা ৫দিন শুনানি কখনো হয়নি। বরং একটি শুনানির পর মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে। তাই এই মামলা যে খুবই দ্রুত শেষ হয়ে যাবে, সেকথা সকলেই আন্দাজ করতে পারছেন। আর এই প্রতিবেদনে দেখে নিন, আরও কয়েকটি বিষয়, যা সরকারি কর্মীদের অপেক্ষার অবসান ঘটাতে পারে।

বকেয়া ডিএ মামলার মোড় ঘুরে গেল

রাজ্য সরকারি কর্মী (Government Employees) তথা সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ পক্ষের বিশিষ্ট আইনজীবী গোপাল সুব্রহ্মণ্যমের যুক্তি কর্মচারীদের মনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। তিনি জোর দিয়েছেন যে রাজ্য সরকারের নিজস্ব ROPA 2009 বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে DA গণনা করা উচিত। এই মামলায় সর্বভারতীয় উপভোক্তা মূল্য সূচক (AICPI) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট, ২০২৫) সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি হবে। এই প্রতিবেদনে আমরা মামলার বিশদ, গোপাল সুব্রহ্মণ্যমের যুক্তি এবং শুনানির সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে আলোচনা করব। এবং মামলার রায় কি হতে পারে, সেই বিশ্লেষণ ও করবো।

ROPA 2009: বকেয়া ডিএ মামলার মূল ভিত্তি

ROPA 2009 এর বিজ্ঞপ্তি এই মামলার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৯৮২ সালের তুলনায় ২০০৬ সালে দ্রব্যমূল্য ৫.৩৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ‘৫৩৬’ সংখ্যাটি AICPI-এর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত বলে দাবি করেছেন প্রাক্তন সলিসেটর গোপাল সুব্রহ্মণ্যম। তিনি যুক্তি দিয়েছেন, এই সূচকের ভিত্তিতে রাজ্যের মহার্ঘ ভাতা কেন্দ্রীয় হারের সমান হওয়া উচিত। এই বিজ্ঞপ্তি রাজ্য সরকারের নিজস্ব নথি, যা মামলায় গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি কর্মচারীদের দাবির পক্ষে শক্তিশালী ভিত্তি প্রদান করছে। তবে গত শুক্রবার রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে নতুন হলফনামা জমা দিয়েছে। যা আগের যুক্তিতে উল্লেখ ছিলো না। তাই রাজ্য সরকার ও নতুন কি কৌশল গ্রহণ করে, সেটাও দেখার বিষয়।

গোপাল সুব্রহ্মণ্যমের যুগান্তকারী যুক্তি 💡

শিক্ষক ও সরকারি কর্মীদের পক্ষের আইনজীবী গোপাল সুব্রহ্মণ্যম সুপ্রিম কোর্টে বলেছেন, DA গণনার জন্য AICPI হলো মূল মানদণ্ড। রাজ্য সরকার নিজেই ROPA 2009-এ এই সূচকের উল্লেখ করেছে। তাই, কেন্দ্রীয় সরকার যে হারে DA প্রদান করে, রাজ্যকেও সেই হার মেনে চলতে হবে। এই যুক্তি শুধু বকেয়া ডিএ নয়, ভবিষ্যৎ DA গণনার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তিনি জোর দিয়েছেন যে কর্মচারীদের ন্যায্য বেতন পাওয়া একটি অধিকার। এই যুক্তি আদালতে কর্মচারীদের পক্ষে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে।

AICPI এর ভিত্তিতে DA গণনা: একটি উদাহরণ 📊

AICPI-এর সঙ্গে DA-র সম্পর্ক বোঝার জন্য কিছু গণনা দেখা যাক:

  • ২০০৮ (এপ্রিল): কেন্দ্রীয় DA ১২%, AICPI ৬০৫, যা ৫৩৬-এর তুলনায় ১২.৮৭% বৃদ্ধি।
  • ২০০৯ (জানুয়ারি): কেন্দ্রীয় DA ২২%, AICPI ৬৫৬, বৃদ্ধি ২২.৩৮%।
  • ২০১০ (জানুয়ারি): কেন্দ্রীয় DA ৩৫%, AICPI ৭২৬, বৃদ্ধি ৩৫.৬৩%।

এই গণনাগুলো দেখায়, কেন্দ্রীয় DA এবং AICPI এর মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। গোপাল সুব্রহ্মণ্যম এই তথ্য ব্যবহার করে রাজ্যের DA বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়ছেন। এটি মামলার ফলাফলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

মঙ্গলবারের শুনানিতে কী আশা করা যায়? ⏰

আগামীকাল, মঙ্গলবার (১২ আগস্ট, ২০২৫) সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court of India) এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ শুনানি হবে। বিভিন্ন পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তি উপস্থাপনের জন্য সময় বরাদ্দ করা হয়েছে। কপিল সিবাল (রাজ্য সরকার) ১৫ মিনিট, পাতওয়ালিয়া (সরকারি কর্মচারী পরিষদ) ১০ মিনিট এবং করুণানন্দী (ইউনিটি ফোরাম) ৫-৭ মিনিট সময় পাবেন। গোপাল সুব্রহ্মণ্যমও তাঁর যুক্তি উপস্থাপন করবেন। আশা করা হচ্ছে, এই মহার্ঘ ভাতা মামলার শুনানিতে মামলার চূড়ান্ত রায় অথবা গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ জারি হতে পারে। যদি রাজ্য অতিরিক্ত সময় না চায়, তবে শুনানি সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

DA-তে বৈষম্য: ইউনিটি ফোরামের অভিযোগ 😡

ইউনিটি ফোরামের আইনজীবী প্রবীর বাবু মহার্ঘ ভাতা প্রদানে চরম বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, বঙ্গভবন ও চেন্নাইয়ের কর্মচারীরা ১৬৪% DA পাচ্ছেন, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে মাত্র ১২৫%। এই বৈষম্য কর্মচারীদের প্রতি অন্যায় বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেছেন, সরকারের উচিত ন্যায্য নিয়োগকর্তা হওয়া। এই অভিযোগ আদালতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে উঠে আসবে। কর্মচারীরা এই বৈষম্য দূরীকরণের জন্য আশাবাদী।

আরও পড়ুন, গ্যাসের দাম ৩০০ টাকা কমালো কেন্দ্র সরকার। প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনায় বছরে ২৭০০ টাকার ভর্তুকি পাবেন

রাজ্য সরকারের যুক্তির দুর্বলতা 🛑

প্রবীর বাবু রাজ্য সরকারের পূর্ববর্তী যুক্তিগুলোর দুর্বলতা তুলে ধরেছেন। রাজ্যের আইনজীবী শ্যাম দেওয়ান DA গণনার ভিত্তি ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। কর্মচারীদের মধ্যে আশঙ্কা রয়েছে যে কপিল সিবাল আদালতকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করতে পারেন। তবে, গোপাল সুব্রহ্মণ্যম, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং করুণানন্দীর মতো অভিজ্ঞ আইনজীবীদের উপস্থিতিতে এটি কঠিন হবে। এদিকে ইউনিটি ফোরামের আইনজীবী প্রবীর বাবু বিচার ব্যবস্থার উপর পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট ধৈর্য সহকারে মামলাটি পরিচালনা করছে।

কর্মচারীদের জন্য সম্ভাব্য ফলাফল 🌟

যদি সুপ্রিম কোর্ট গোপাল সুব্রহ্মণ্যমের যুক্তি মেনে নেয়, তবে রাজ্য কর্মচারীরা কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ ভাতা পেতে পারেন। এটি শুধু বকেয়া ডিএ নয়, ভবিষ্যৎ Dearness Allowance তেও প্রভাব ফেলবে। এই রায় লক্ষাধিক কর্মচারীর জীবনে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। এটি রাজ্য সরকারের বেতন নীতিতে সংস্কারের পথ প্রশস্ত করবে। কর্মচারীরা ন্যায্য বেতনের অধিকার নিশ্চিত করতে চান। মঙ্গলবারের শুনানি এই লড়াইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

আরও পড়ুন, পোস্ট অফিসের নতুন সঞ্চয় প্রকল্প, কয়েক বছরেই টাকা ডবল।

উপসংহার 🏛

পশ্চিমবঙ্গের বকেয়া ডিএ মামলা কর্মচারীদের জন্য একটি ঐতিহাসিক লড়াই। গোপাল সুব্রহ্মণ্যমের যুক্তি এবং AICPI-এর ভিত্তিতে এই মামলা নতুন দিশা পেয়েছে। মঙ্গলবারের শুনানি এই মামলার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। কর্মচারীরা আশা করছেন, আদালত (Supreme Court of India) তাদের পক্ষে রায় দেবে। আমরা এই মামলার উপর নজর রাখব এবং সর্বশেষ আপডেট জানাব। এই লড়াই শুধু টাকার নয়, ন্যায়বিচারেরও।

শেয়ার করুন: Sharing is Caring!