সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২৫ শতাংশ বকেয়া ডিএ পশ্চিমবঙ্গে। বাকিটা মেটাতে ৬ মাস সময় পাবে নবান্ন? সকলের নজর আদালতে

একদিকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মীদের দাবি মতো মোট বকেয়া ডিএ (Dearness Allowance) এর পরিমাণ ৪১ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা। এই ৪১ হাজার কোটি টাকার অন্তত ২৫% অর্থাৎ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা মেটানোর নির্দেশ দিয়েছে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট। অথচ সরকারি কর্মী মহল ও সংবাদ মাধ্যমের একাংশের ধারণা ২৫% বকেয়া ডিএ দেওয়া হবে! এবার এই ১০ হাজার কোটি টাকা মেটানোর সময় ছিলো গত ২৭শে জুনের মধ্যে। আর সেই নির্দেশ না মানায় একদিকে আদালতে নালিশ জানিয়েছে রাজ্য সরকারি কর্মীরা। অন্যদিকে টাকা নেই বলে সুপ্রিম কোর্টে আরও অন্তত ৬ মাসের সময় চেয়েছে রাজ্য সরকার। এই পরিস্থিতিতে মহামান্য শীর্ষ আদালত কি আজ সিদ্ধান্ত নেয়, সেই দিকে তাকিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মী থেকে শুরু করে সরকার পক্ষ এবং রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

সুপ্রিম কোর্টে বকেয়া ডিএ মামলার শুনানি

আজ দীর্ঘ প্রতিক্ষিত ডিএ মামলার শুনানি রয়েছে। আজ রাজ্য সরকারি কর্মীদের পক্ষ থেকে আরও একজন আইনজীবী যুক্ত হয়েছেন। সংবাদ সুত্রে জানা গেছে, আজকের শুনানিতে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের পক্ষে সওয়াল করবেন দেশের প্রখ্যাত আইনজীবী এবং ভারতের প্রাক্তন সলিসিটর জেনারেল গোপাল সুব্রহ্মণ্যম। একদিকে বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য এবং গোপাল সুব্রহ্মণ্যমের সওয়ালে রাজ্য সরকার পক্ষের আইনজীবী কি রণনীতি কৌশল গ্রহণ করেন সেটাই এখন দেখার।

তবে রাজ্য সরকারি কর্মীরা মনে করছেন, রাজ্য সরকার ৬ মাস সময় চাইলেও, আগে ২৫% বকেয়া মিটিয়ে তারপর বাকিটা পরিশোধ করতে ৬ মাস সময় নিক। রাজ্য সরকারের কাছে টাকা নেই, সেই দাবি করছেন, তাহলে ভোটের আগে প্রত্যেক পাড়ায় ১০ লাখ টাকা করে দিয়ে সারা রাজ্যে ৮০০০ কোটি টাকা খরচ করে ভোট কিনতে চাইছে? -গতকাল সংবাদ চ্যানেলের টক শো তে অভিযোগ করেন কর্মী সংগঠনের নেতৃত্ব তথা মামলাকারী পক্ষের সরকারি কর্মী।

২৫ শতাংশ ডিএ মামলার আপডেট

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (Arrear DA) নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গুরুত্বপূর্ণ শুনানি হতে চলেছে। আজ বিচারপতি সঞ্জয় কারোল এবং বিচারপতি পিকে মিশ্রের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। রাজ্য সরকার গত মে মাসে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে ছ’সপ্তাহের মধ্যে ২৫ শতাংশ বকেয়া ডিএ পরিশোধ না করে বরং রাজ্য আরও ছ’মাস সময় চেয়ে আদালতে আবেদন করে। এই শুনানিতে রাজ্যের আর্থিক সঙ্কট এবং সময় চেয়ে আবেদন করবে রাজ্য সরকারের আইনজীবী। অন্যদিকে আদালতের নির্দেশ মতো বকেয়া ডিএ না পাওয়ার রাজ্যের বিরুদ্ধে সওয়াল করবেন কর্মী পক্ষের আইনজীবীরা। আর তারপরই সিদ্ধান্ত জানাবে শীর্ষ আদালত।

আরও পড়ুন, দুর্দান্ত 5G মোবাইল বাজারে এলো। জলের দামে ভালো কোয়ালিটির ফোন দেখুন।

রাজ্যের আর্থিক সঙ্কট ও যুক্তি

রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেটে ডিএ পরিশোধের জন্য কোনও অতিরিক্ত বরাদ্দ নেই। তারা আরও দাবি করে, ডিএ বাধ্যতামূলক নয়, বরং ঐচ্ছিক এবং এটি কর্মীদের মৌলিক অধিকারের অংশ নয়। রাজ্যের নিজস্ব নিয়মাবলি, ROPA 2009, অনুযায়ী ডিএ নির্ধারণ করা হয়। কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই, কারণ কেন্দ্র ও রাজ্যের আর্থিক কাঠামো ভিন্ন। কেন্দ্রীয় প্রকল্পে অনুদান কমানো এবং জিএসটি বকেয়া ১.৮৭ লক্ষ কোটি টাকা না পাওয়ায় রাজ্যের উপর আর্থিক চাপ বেড়েছে। এছাড়া, এই বিপুল অঙ্ক পরিশোধ করতে রাজ্যকে ঋণ নিতে হবে, যার জন্য কেন্দ্রের অনুমতি প্রয়োজন। সুতরাং রাজ্যের অন্তত ৬ মাস সময় প্রয়োজন।

বর্তমান ডিএ হার ও ফারাক

পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীরা বর্তমানে ১৮ শতাংশ হারে ডিএ পান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বাজেটে ৪ শতাংশ ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা করেছিলেন, যা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়। এর ফলে ডিএ ১৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৮ শতাংশ হয়। তবে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা ৫৫ শতাংশ হারে ডিএ পান, ফলে ফারাক এখনও ৩৭ শতাংশ। এই ফারাক কমানোর জন্য কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন। সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ে এই ফারাক এবং বকেয়া পরিশোধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

আরও পড়ুন, প্যান কার্ড থাকলেই পাবেন 5 লাখ টাকা দিচ্ছে। শর্তাবলী ও আবেদন পদ্ধতি দেখে নিন

রাজ্যের অনন্য সুবিধা ও দাবি

রাজ্য সরকার দাবি করে, তারা কেন্দ্রের মতো AICPI হারে ডিএ দিতে না পারলেও কর্মচারীরা অন্যান্য সুবিধা পান। এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য প্রকল্প, ভ্রমণ ভাতা (LTC) এবং অতিরিক্ত ছুটি। রাজ্যের মতে, এই সুবিধাগুলি মুদ্রাস্ফীতির চাপ থেকে কর্মচারীদের রক্ষা করে। অন্যান্য রাজ্যে এই ধরনের সুবিধা নেই বলেও তারা উল্লেখ করে। তবে, কর্মচারীদের দাবি, কেন্দ্রীয় হারে ডিএ না পেলে তাদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। সোমবারের শুনানিতে এই বিষয়গুলি বিবেচনা করা হবে।

আর্থিক বোঝা ও সম্ভাব্য প্রভাব

রাজ্য জানিয়েছে, মোট বকেয়া ডিএ ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ১১,৮৯০ কোটি, পেনশনভোগীদের জন্য ১১,৬১১ কোটি এবং অন্যান্য সংস্থার জন্য ১৮,৩৬৯ কোটি টাকা। ২৫ শতাংশ বকেয়া মেটাতে প্রায় ১০,৪২৫ কোটি টাকা প্রয়োজন। রাজ্যের আইনজীবী জানান, এই অঙ্ক পরিশোধ করলে রাজ্যের আর্থিক অবস্থা আরও খারাপ হবে। সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়, তা রাজ্যের কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। শুনানির ফলাফলের উপর নির্ভর করবে, কবে এবং কতটা বকেয়া পরিশোধ হবে।

আরও পড়ুন, আজকের ডিএ মামলার আপডেট দেখুন। আদালতের বড় নির্দেশ! আগাম নোটিশ এলো

চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষা

সোমবারের শুনানি রাজ্য সরকার এবং কর্মচারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যকে আরও সময় দেবে কি না, তা এখনও অনিশ্চিত। চূড়ান্ত রায়ে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কর্মচারীরা আশা করছেন, তাদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হবে। তাদের যুক্তি, ২০১৬ সাল থেকে এই মামলা পিছিয়েই যাচ্ছে, রাজ্যের আর কত সময় প্রয়োজন? রাজ্য সরকার ৬ মাস সময় চাইলেও আগে ২৫% বকেয়া মিটিয়ে তারপর ৬ মাস সময় নিক, বাকিটা পরিশোধ করতে। এদিকে রাজ্য সরকারের আর্থিক সীমাবদ্ধতা এবং কর্মচারীদের অধিকারের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে দেশের শীর্ষ আদালত। এবার এটাই দেখার এই মামলার রায় কোন দিকে গড়ায়, এবং কর্মীদের একাউন্টে বকেয়া টাকা আদৌ ঢোকে কিনা।

 

শেয়ার করুন: Sharing is Caring!