পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ মামলার শুনানিতে (Dearness Allowance) রাজ্য সরকারের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়লো আদালত। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে রাজ্য সরকারের ২৫ শতাংশ বকেয়া ডিএ মেটানোর কথা ছিলো গত ২৭ জুনের মধ্যে। কিন্তু ১ মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরও রাজ্য সরকার কোনও বকেয়া প্রদান করেন নি। রাজ্য সরকারি কর্মীরা পায়নি তাঁদের প্রাপ্য DA. বরং বকেয়া মেটাতে আরও সময় চাওয়ার আবেদন জানিয়েছে। যা শীর্ষ আদালত রাজ্য সরকারের তীব্র উদাসীনতা বলেই ধরে নিয়েছে। যা নিয়ে এবার সরাসরি প্রশ্ন তুললো সুপ্রিম কোর্ট।
West Bengal DA Case Hearing Update today
সুপ্রিম কোর্টে আজ ডিএ মামলার শুনানি ছিলো। আজকের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় করোল এবং বিচারপতি পিকে মিশ্রের বেঞ্চে মামলাটি উঠেছিল। এতদিন পর ডেট পাওয়ার পরও রাজ্য সরকারের আইনজীবী এই মামলাটি আজ শুনানি না করে এক সপ্তাহ পিছিয়ে আগামী সোম বার করার আর্জি জানান। অন্যদিকে এই মামলা আবার পেছানোর আর্জি জানান সরকারি কর্মী পক্ষের একাংশ ও। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য পশ্চিমবঙ্গের ডিএ মামলা মূলত ৪টি সংগঠন আলাদা ভাবে লড়ছে। তবে সরকারি কর্মচারীদের একাংশের আইনজীবী করুণা নন্দী এদিন শুনানির পক্ষে সওয়াল করেন।
একই মামলায় সরকারি কর্মীদের নিজেরদের মধ্যেই মতানৈক্য থাকায় সন্দেহ প্রকাশ করেন খোদ আদালত! সব পক্ষ ডিএ মামলার শুনানির জন্য কেন প্রস্তুত নয়? প্রশ্ন তোলেন মহামান্য বিচারপতি সঞ্জয় কারোল। তাই তিনি আজই ডিএ মামলার শুনানি করবেন বলে নির্দেশ দেন, এবং ১২টা পর্যন্ত নিজেদের মধ্যে আলোচনার সুযোগ দেন। এরপরই রাজ্য সরকার সরকার পক্ষের আইনজীবীকে প্রশ্ন তোলেন, কেন নির্দেশমতো বকেয়া মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ-র ২৫ শতাংশ সরকারি কর্মচারীদের দেওয়া হল না?
সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court of India) প্রশ্নবাণের মুখে রাজ্য সরকার। দীর্ঘদিন ধরে মহার্ঘ ভাতার মামলা চলছে আদালতে। মামলার শুনানিতে শুধু তারিখের পর তারিখ মিলছে। কিন্তু বকেয়া টাকা মিলছে না। দিন এগোলেও সরকারি কর্মীরা তাঁদের কাঙ্খিত বকেয়া ভাতার মুখ দেখেননি এখনো। দিনের পর দিন তাঁরা অপেক্ষা করছেন ঠিকই। কিন্তু সত্যিই যে কবে মিলবে বকেয়া? তার উত্তর তাঁদের কাছে নেই। আর সেই উত্তর আজও দিতে পারেনি আদালত। তাই এই বকেয়া ডিএ মামলার শুনানি আগামীকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার রাখা হয়েছে। অর্থাৎ আরও এক দিন পিছিয়ে গেল এই মামলা। আর কাল আবার অন্য কারণ উপস্থিত হয়ে, শুনানি আদৌ হবে কিনা, প্রশ্ন উঠছে!
রাজ্য সরকারের তরফে কি জানানো হলো?
এদিকে এর আগেই সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের উত্তরে রাজ্য সরকার জানিয়েছিলো, তাঁরা আদালতের নির্দেশ কার্যকর করতে চায়। কিন্তু তার জন্য সময় লাগবে। কারণ, সমস্ত রাজ্য সরকারি কর্মীদের ২৫ শতাংশ বকেয়া ডিএ মেটাতে হলে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হবে। আর সেই অর্থ জোগাড় করতে সময় লাগবে। বিশেষ করে রাজ্য সরকার আর্থিক সংকটের কথা তুলে ধরেছে। অর্থাৎ সরকারি কর্মীদের কাঙ্খিত বকেয়া পেতে আরও বেশ কিছুটা সময় লাগবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন, সরকারি কর্মীদের একাউন্টে ঢুকবে এই টাকা। কিসের টাকা পাবেন?
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ১৬ মে রাজ্য আদালত নির্দেশ দিয়েছিল সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ এর অন্তত ২৫ শতাংশ মিটিয়ে দিতে হবে। কিন্তু, বাংলায় কর্মরত লক্ষ লক্ষ সরকারি কর্মীর ২৫ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা মেটাতে প্রয়োজন হবে বিপুল পরিমাণ অর্থের। তার বরাদ্দ ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেটে নেই। এছাড়া রাজ্যকে যদি এই পরিমাণ অর্থ দিতে হয়, তা হলে আলাদা করে ঋণ নিতে হবে, আর ঋণ নেওয়ার জন্য কেন্দ্রের অনুমতি দরকার। তাই রাজ্য বলছে এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ।
আরও পড়ুন, একাউন্টে ঢুকবে ডবল টাকা। অর্থদপ্তরের জোড়া বিজ্ঞপ্তি।
উপসংহার
পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীরা কেন্দ্রীয় হারে ডিএ এর দাবি তুলছেন। কিন্তু রাজ্যের যুক্তি ছিল, AICPI হারে ডিএ দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। এটা ঐচ্ছিক বিষয়। ডিএ কর্মীদের মৌলিক অধিকার নয়। তাই রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিতে বাধ্য নয়। তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মত বকেয়া মিটিয়ে দেবে রাজ্য। তার জন্য আরো বেশ কিছুটা সময় লাগবে। এদিকে আজও পূর্ণ শুনানি হলো না। আর রাজ্য সরকার আদালতের নির্দেশের পরও কেন ডিএ দিলো না, সেই প্রস্নের উত্তর ও মিললো না। আগামীকাল এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে, এবার এটাই দেখার কাল এই মামলায় কি পরিনিতি হয়।