পড়াশোনায় অনীহা! টেস্ট পরীক্ষায় বসতে চাইছে না পড়ুয়ারা।
পশ্চিমবঙ্গ মধ্য শিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের পরিচালনায় সারা রাজ্য জুড়ে চলছে মাধ্যমিক, একাদশ ও উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা। তবে দুইদিন পরীক্ষার পর দেখা গেছে বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় বসে নি। কি তার কারন। তাদের দাবি কি? এই প্রশ্ন খুঁজতে শিক্ষকেরা পড়ুয়াদের খোঁজ করছেন।
চাকরি কোথায়? পড়াশোনা করে কি হবে? সেই তো রাস্তায় বসে আন্দোলন করবে। তার থেকে অনেক আগে থেকেই হাতে কলমে কিছু একটা শিখলে তবু টাকা রোজগার করতে পারবে। প্রশ্নটা উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু এটাই বাস্তব পরিস্থিতি। আর এই পরিস্থিতিটাই শিক্ষা ক্ষেত্রে নতুন এক উদ্বেগ এর পরিস্থিতি তৈরি করে দিয়েছে। মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক টেস্ট পরীক্ষার আগে স্কুলগুলিতে টেস্ট পরীক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছে। ১৭ নভেম্বর থেকে সেই টেস্ট শুরু হওয়ার পর থেকে দেখা যাচ্ছে, টেস্টে বহু সংখ্যক পরীক্ষার্থীর অনুপস্থিতি।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার আগে টেস্ট পরীক্ষা নেওয়া হয়। কিন্তু করোনা অতিমারির কারণে দেড় থেকে দুই বছর স্কুল কলেজগুলিতে স্বাভাবিক পঠন পাঠন করা যাচ্ছিল না। ঠিক সেই সময় যখন মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক হয়েছিল, সেখানে প্রায় সকলকেই পাশ করিয়ে দেওয়া হয়। স্কুলে পড়াশোনা ছিল না। টেস্ট পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। বোর্ড পরীক্ষায় সকলেই পাশ করে গিয়েছে।
ফলে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গিয়েছে, কোভিড পরবর্তী পর্যায়ে স্বাভাবিকভাবে স্কুল-কলেজগুলিতে পঠন-পাঠন শুরু হলেও মাধ্যমিক আর উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় দেখা যাচ্ছে অনেক কম পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে বসেছেন। পড়ুয়াদের মধ্যে এই অনীহা নিয়েই শিক্ষা ক্ষেত্রে নতুন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তারা কি টেস্ট পরীক্ষা না দিলে মূল পরীক্ষায় বসতে পারবে?
তবে এই পরিস্থিতি হওয়ার পিছনে সবচেয়ে বেশি মনে করা হচ্ছে, চাকরি না পাওয়ার হতাশা আর আর্থিক দুরবস্থা। করোনা পরিস্থিতির সময় থেকে স্বাভাবিক পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বহু পড়ুয়ারা কাজ নিয়ে উপার্জনের জন্য ভিন রাজ্যে চলে গিয়েছে। অনেক ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ফলে টেস্ট পরীক্ষায় তাদের সকলকেই প্রায় অনুপস্থিত দেখা যাচ্ছে। এর মূল কারণ অবশ্যই বর্তমান আর্থিক দুরবস্থা। একেই কাজের বাজার খুব খারাপ, তার উপরে পড়াশুনা করেও একটা কাজ জোটানো সম্ভব হচ্ছে না। আর এই অবস্থাটাই জনমানসে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে বলেই মনে করছেন অনেকে।
শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ বলছেন, যারা এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে তারা ২০২১ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিল। যেহেতু সেই সময় করোনার কারণে সকলকেই পাশ করিয়ে দেওয়া হয়েছে, যারা হয়তো স্বাভাবিক নিয়মে পরীক্ষা হলে পাশ করতে পারত না, ফলে তারা এখন বুঝতে পারছে পরীক্ষা দিলে পাশ করা সম্ভব নয়। তাই তারা আর পরীক্ষায় বসতে চাইছে না।
বাড়ি বসে দেখে নিন লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা কে কে পাচ্ছেন, আর কে কে পাবেন না।
চাকরি না পাওয়ার হতাশা আর আর্থিক দুরবস্থা দুইয়ে মিলিয়ে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিভাবকদের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, পড়াশোনা করে কি হবে? চাকরি কোথায়? সেই তো রাস্তায় বসে আন্দোলন করবে। তার থেকে হাতে-কলমে কিছু শিখলে টাকা রোজগার করতে পারবে। এর থেকে স্পষ্ট, কাজ না পাওয়ার হতাশা দেশ তথা রাজ্যের মানুষের মধ্যে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।
ডিসেম্বরে AirTel এ আর মোবাইল রিচার্জ করতে হবে না, বিনামূল্যে পাবেন নেট, টকটাইম সবকিছু।
উচ্চ মাধ্যমিক টেস্টে পরীক্ষার্থীদের এত বেশি পরিমাণে অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে ১০০০০ টাকা করে ট্যাব বা স্মার্টফোন কেনার জন্য দেওয়া হয়েছে। এটি উচ্চশিক্ষায় ব্যবহারের জন্য। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, অধিক পরিমাণে পড়ুয়ারা শুধুমাত্র উচ্চমাধ্যমিকের এই টেস্ট পরীক্ষা পর্যন্ত স্কুলে আসা-যাওয়া করছিল, ওই টাকাটার দিকে তাকিয়ে। যেই তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা করে ঢুকে গিয়েছে, আর তারা স্কুলমুখো হচ্ছে না।
মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন PDF Download.
আবার শিক্ষকদের অনেকে বলছেন, উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে শিক্ষক শিক্ষিকারা গ্রামের স্কুলগুলি থেকে শহরের স্কুলগুলিতে বদলি হয়ে এসেছেন। ফলে গ্রামীণ এলাকার স্কুলগুলিতে শিক্ষক সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে। সেখানে নিয়মিত পঠনপাঠন হচ্ছে না। ফলে এটিও একটি দিক। তবে সব কিছু মিলিয়ে আগামী দিনে ভবিষ্যৎ যে সুখকর হবে না তার ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছে। আপনার মূল্যবান মন্তব্য নিচে কমেন্ট করবেন।
Written by Rajib Ghosh.