শিক্ষক দিবস উপলক্ষে বক্তব্য বা শিক্ষক দিবসের বক্তৃতা, Teachers Day Speech in Bengali. শিক্ষক দিবস পালনে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের জন্য রইল কিছু বক্তৃতা নমুনা, এই বক্তব্য গুলো টিচার্স ডে পালনে বলতে পারেন। নিচে শিক্ষক ও ছাত্রদের জন্য আলাদা বক্তব্য তুলে ধরা হলো।
Teachers Day Speech for teachers and students
৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস। ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণানের জন্মদিন। আর এই শিক্ষক দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে আয়োজিত হতে চলেছে ধুমধাম করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। আর যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে চলেছে, তাদের অনুষ্ঠানের শুরুতেই শিক্ষক দিবস উপলক্ষে কিছু বক্তৃতা দিতে বলা হবে।
শুধু ছাত্রছাত্রীরাই বা কেন? উপস্থিত সকল শিক্ষক শিক্ষিকাকেও এ বিষয়ে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করা হবে। কিন্তু কোন ধরনের বক্তৃতা সবচেয়ে ভালো হবে? এক্ষেত্রে কিভাবে বললে তা মনগ্রাহী হয়ে উঠবে সকলের? তাই আজ আমাদের এখানে দেওয়া হল কিছু গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতার উদাহরণ যেগুলি ছাত্র-ছাত্রী তথা শিক্ষকবৃন্দকে শিক্ষক দিবস উপলক্ষে ভাষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক অংশে সাহায্য করবে।
Teachers Day Speech for students
শিক্ষক দিবসে ছাত্রছাত্রীদের জন্য বক্তৃতা
সুপ্রভাত, মাননীয় প্রধান শিক্ষক মহাশয়, আমার সকল প্রিয় শিক্ষক শিক্ষিকাগণ, বন্ধুবান্ধব, দাদা দিদি দের জানাই শিক্ষক দিবসের অসংখ্য শুভেচ্ছা। আজকের এই বিশেষ দিনে আমাকে আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের সম্পর্কে কিছু বলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, এই জন্য আমি নিজেকে খুব গর্বিত অনুভব করছি।
বক্তব্যের শুরুতেই আমি সবার প্রথমে বিশেষ করে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই, যে আমার পরম পূজনীয় শিক্ষকদের প্রতি। যাদের সান্নিধ্যে আজ আমি এইটুকু বলার মানসিক সাহস ও যোগ্যতা অর্জন করেছি। পিতামাতার ঋণ যেমন শোধ করা যায়না, ঠিক তেমনি তাদের ঋণ ও কখনও তুলনীয় ও শোধযোগ্য নয়। (শিক্ষক দিবস উপলক্ষে বক্তব্য)
শিক্ষক দিবস কেন এই দিন পালন করা হয়?
আজ ৫ই সেপ্টেম্বর ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান এর জন্মদিন। এই পরম পূজনীয় ব্যাক্তির জন্মদিন কে উৎসর্গ করেই অনুষ্ঠিত হয় শিক্ষক দিবস বা (Teachers Day). অবশ্য এই শিক্ষক দিবস উদযাপনের পরামর্শ তিনি নিজেই দিয়েছিলেন। একবার ওনাকে তার ছাত্ররা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তিনি কি তার জন্মদিন উদযাপন করতে দেবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি তার ছাত্রদের পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, ছাত্ররা সমাজে শিক্ষকদের অবদানকে সম্মান জানাতে ওই দিনটি যদি শিক্ষক দিবস হিসেবে উদযাপন (Teachers Day Speech) করে তাহলে তিনি বেশি আনন্দিত হবেন।
প্রকৃতপক্ষে তিনি একজন শিক্ষক ছিলেন তাই তিনি, শিক্ষকদের প্রয়োজনীয়তাকে উপলব্ধি করতেন, তিনি বলতেন “True Teachers are those who help us to think for ourselves” প্রকৃত শিক্ষক তিনি যিনি আমাদের ভাবতে শেখান। ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ এর আরো বিশেষ পরিচয় হলো তিনি ছিলেন একজন দার্শনিক, ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি এবং দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি।
প্রকৃতপক্ষে একজন শিক্ষকই পারে দেশ, সমাজের পরিবর্তন করতে, তাই শিক্ষকদের অবদানকে আমরা কোনদিনই ভুলতে পারি না। একজন শিক্ষক হলেন সমাজ তথা মানুষ তৈরীর কারিগর। একজন মা সন্তানকে জন্ম দেয়, কিন্তু সত্যিকারের যিনি একজন শিক্ষক তিনিই জীবনকে আকার ও আকৃতি দেন, শিশুদের মনে ন্যায় নীতি এবং মূল্যবোধ সৃষ্টি করেন। তাই শিক্ষকদের ছাড়া জীবন অর্থহীন। বর্তমান সময়ে প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণে হয়তো আমরা শিক্ষকদের গুরুত্বকে অনুভব করার চেষ্টা করি না, কিন্তু শিক্ষকের গুরুত্ব সব সময় ছিল, আছে এবং থাকবে। এই বলে আমি আমার বক্তব্য (Teachers Day Speech) এখানেই শেষ করছি।
Teachers Day Speech for teachers
শিক্ষক দিবস উপলক্ষ্যে শিক্ষক শিক্ষিকাদের জন্য বক্তৃতা
সুপ্রভাত, প্রধান শিক্ষক মহাশয়, আজকের প্রধান অতিথি মহাশয়, সকল আমার সহকর্মীবৃন্দ এবং স্নেহের ছাত্র-ছাত্রীরা সকলকে জানাই দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা। আজ ৫ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস এই দিনটি একজন ছাত্র ও শিক্ষক উভয়ের কাছেই খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন। এই দিনটি একজন রাজনীতিবিদ, বিচক্ষণ দার্শনিক এবং সর্বোপরি একজন মহান শিক্ষক এর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
তিনি হলেন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি এবং দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান। ১৮৮৮ সালে আজকের দিনেই তামিলনাড়ুর এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়ার কারণে, তার অসংখ্য গুণমুগ্ধ ছাত্র ও ছাত্রী ছিলেন। ১৯৬২ সালে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর ওনার শিক্ষার্থীরা ও বন্ধুরা ৫ই সেপ্টেম্বর তার জন্মদিন পালন করতে চেয়েছিলেন কিন্তু তাতে তিনি সম্মতি প্রদান না করে বলেন তার জন্মদিনের পরিবর্তে, ৫ই সেপ্টেম্বর যদি শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হয় তাহলে তিনি বেশি খুশি হবেন৷ এই পরিপেক্ষিতে ১৯৬২ সালের পর থেকে ৫ই সেপ্টেম্বর দিনটি ভারতবর্ষে শিক্ষক দিবস হিসেবে উদযাপন (Teachers Day Speech) করা শুরু হয়।
ডাঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান বলেছেন যে, ‘পুরো পৃথিবী একটি স্কুল, যেখানে আমরা নতুন বা অন্য কিছু শিখি। আমাদের শিক্ষকরা শুধু আমাদের শেখান না, আমাদের ভালো- মন্দের পার্থক্য বুঝতেও সাহায্য করেন’ তাঁর এই বক্তব্য নির্দেশ করে যে আমাদের জীবনে শিক্ষক থাকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রকৃতপক্ষে শিক্ষক দিবস উদযাপনের উদ্দেশ্য হল শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক স্নেহের বন্ধন কে আরো দৃঢ় করা। (Teachers Day Speech for teachers)
কিন্তু একজন শিক্ষক হিসেবে আমার মনে হয় এই বন্ধন আস্তে আস্তে শিথিল হয়ে পড়ছে। এর কারণ বর্তমান সময়ে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে নম্রতা, ভদ্রতা, সঠিক ব্যবহার, বড়দের প্রতি সম্মান, নীতি শিক্ষার অভাব গভীরভাবে লক্ষ্য করতে পারি যা খুব দুঃখজনক। যদিও এর কারণ হিসেবে আমরা শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের দোষারোপ করতে পারি না। আমার মনে হয়, এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, সমাজ ও বাবা-মা।
যদি আমরা আজ থেকে কিছু বছর পূর্বে যাই তাহলে দেখবো শিশু অবস্থায় আমরা নীতি শিক্ষা পেয়েছি বাবা-মা, দাদু, ঠাকুমার কাছ থেকে। কিন্তু এখনকার সময়ে বাবা-মা বাচ্চাদের উপর কম সময় দেন আর স্কুলের ওপর বেশি ভরসা করেন।
অন্যদিকে, স্কুলের শিক্ষকেরা সবসময় চেষ্টা করে ছাত্রদের পুঁথিগত শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে তাদের একাডেমিক স্কোর বৃদ্ধি করা। শুধু একাডেমিক স্কোর ই নয়, পুথিগত বিদ্যার সমস্যা সমাধানের সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের জীবনের সমস্যার মোকাবেলা করার উৎসাহ বা পাঠদান ও শিক্ষাদানের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়। (শিক্ষক দিবসের বক্তৃতা)
এর ফলে তৈরি হয় এক শূন্যস্থান, সেই শূন্যস্থান হলো নীতি শিক্ষার। যদি এই শূন্যস্থান নিয়েই শিশুরা এগিয়ে চলে তাহলে হয়তো আমরা, প্রযুক্তিগত ভাবে অনেক উন্নতি করব কিন্তু কখনোই এক ভালো সমাজ গড়ে তুলতে পারবো না। তাই আমি একজন শিক্ষক ও অভিভাবক হিসেবে বলতে চাই, আমাদের শিশুদের মধ্যে পুঁথিগত শিক্ষার সাথে সাথে নীতিগত শিক্ষাকে সমভাবে প্রেরণ করতে হবে। তাহলে হয়তো আমরা শিক্ষক দিবসের প্রকৃত তাৎপর্যকে উদ্ভাসিত করতে পারবো। Teachers Day Speech for teachers and students.