সরকারি কর্মীদের সুযোগ সুবিধা বা Employee Benefits, বেতন বৃদ্ধি বা Salary Hike, পদোন্নতি বা Promotion সহ নানাবিধ সুযোগ সুবিধা সংক্রান্ত একটি মামলায় ঐতিহাসিক রায় দিলো সুপ্রীম কোর্ট (Supreme Court). যার জেরে সরকার বা নিয়োগকারী সংস্থার স্বদিচ্ছা না থাকলে আর সরকারি কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা কর্মীদের দাবী মতো মেটার ক্ষেত্রে ছেদ পড়তে পারে। সরকারি কর্মীদের করা একটি মামলায় ঠিক তেমনই পর্যবেক্ষণ দেশের সর্বোচ্চ আদালত তথা ভারতীয় সুপ্রীম কোর্টের। কি বিষয়ে মামলা, কি সিদ্ধান্ত হলো, তাতে কর্মীদের বেতন ও পদোন্নতিতে কি প্রভাব পড়তে পারে, জেনে নিন।
Supreme Court Judgement on Government Employee Benefits
সরকারি কর্মীদের পদোন্নতি ও বেতনবৃদ্ধি সংক্রান্ত একটি মামলায় কার্যত কর্মীদের বিপক্ষে রায় দিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত তথা সুপ্রিম কোর্ট। যার জেরে দেশের সমস্ত সরকারি কর্মচারী বা চাকরিজীবীদের মাথায় হাত পড়তে পারে। উক্ত মামলায় এদিন সুপ্রীমকোর্টের কড়া পর্যবেক্ষণ, “সরকারি কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিষয়ে ভারতীয় সংবিধানে নির্দিষ্ট ভাবে কিছুই বলা নেই। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আইন প্রণেতা এবং আমলারা এই নিয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।”
পদোন্নতি কি সাংবিধানিক অধিকার?
সরকারি কর্মীদের পদোন্নতি সঠিক রূপে হচ্ছে না, বা এর সঠিক প্রক্রিয়া কি? এই বিষয় নিয়ে আদালতে মামলা হয়। এবং সেই মামলা গড়ায় সুপ্রীম কোর্টে। এদিন দেশের সর্বোচ্চ আদালত জানায়, সরকারি কর্মীদের প্রমোশন বা পদোন্নতি বিষয়ে দেশের সংবিধানে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। তাই আদালত এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।
তাহলে পদোন্নতি বা বেতনবৃদ্ধি কিভাবে হবে?
এই প্রশ্নের উত্তরে আদালত জানায়, যেহেতু সংবিধানে সরকারি কর্মীদের পদোন্নতি নিয়ে কিছু বলা নেই। সেক্ষেত্রে এটি কর্মীদের সাংবিধানিক অধিকার বলা যায় না। Employee Benefits বা পদোন্নতির বিষয়ে আইন প্রণেতা এবং আমলারা এই নিয়ে নিজেদের মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে পদোন্নতির ক্ষেত্রে আদৌ উপরের পোষ্টের কর্মীর প্রয়োজন বা পদ খালি রয়েছে কিনা। এমনকি নীচের শ্রেণীর কর্মীর সেই পদে যাওয়ার যোগ্যতা বা দক্ষতা রয়েছে কিনা, তিনি ওই উচ্চ পদ সামলাতে পারবেন কিনা, সেটা দেখার বিষয় রয়েছে। আর এই বিষয়ে কার্যত আদালত নয়, বরং সংশ্লিষ্ট সংস্থার আমলারাই সিদ্ধান্ত ও বিবেচনা করতে পারেন।
আরও পড়ুন, পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীদের ৪০০০ টাকা বেতন বাড়ছে।
কিভাবে পদোন্নতি বাছাই হবে?
কোনও সংস্থার কর্মী কতটা দক্ষ, সেটা দেশের বিচার ব্যবস্থা ঠিক করতে পারে না বা এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। প্রতিটি কর্মীর কাজের প্রকৃতি বা দক্ষতা, বা যোগ্য ও সেরা প্রার্থী বাছাই করতে পারেন কেবলমাত্র তার কাজের মান ও সেই সংস্থার উচ্চ পদস্থ কর্মী বা দায়িত্বে যে আমলা থাকবেন। এবং শুধু কাজের প্রকৃতিই নয় যদি শূন্যপদ থাকে, তবেই পদোন্নতির প্রয়োজনীয়তার সৃষ্টি হয়। আর এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা সংস্থার আধিকারিক ই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এই বিষয়ে আদালত হস্তক্ষেপ করবে না। তবে কোনও প্রকার পক্ষপাতিত্ব হলে সেই ব্যাপারে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে।
সংবিধানে কি বলা আছে?
সরকারি কর্মীদের সার্ভিস রুল নিয়ে অবশ্য সাম্যতার কথা বলা রয়েছে। অর্থাৎ সংবিধানের ১৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী একজন সরকারি কর্মচারীর প্রমোশন, সুযোগ সুবিধা বা Employee Benefits বা সংক্রান্ত কোনও মামলা এলে সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এবং সেই সাম্যবাদ যদি না হয়, বা পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আসে, কেবলমাত্র তখনই দেশের বিচার ব্যবস্থা বা আদালত তাতে হস্তক্ষেপ করতে পারে বা তা খতিয়ে দেখতে পারে। সুতরাং সাধারণ ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীর প্রমোশন, সুযোগ সুবিধা বা Employee Benefits বা সংক্রান্ত বিষয় কেবলমাত্র সরকার এবং এবং প্রশাসনের ওপরেই সরকারি কর্মীদের সিদ্ধান্ত ও নিয়মকানুনের উপরই নির্ভর করবে। তবে সার্ভিস রুল এ এই সংক্রান্ত নির্দিষ্ট নীতিমালা বা নিয়ম থাকা জরুরী।
কোন মামলায় এই রায় দেওয়া হলো?
গুজরাটের জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের জেলা বিচারক পদে নিয়োগ নিয়ে মামলা করেন একাধিক সিনিয়র জাস্টিস। আর সেই মামলায় আদালত জানায়, বেশি সময় ধরে চাকরি করলেই যে এই ক্ষেত্রে তিনি অভিজ্ঞ বা বেশি দক্ষ হবেন, তেমনটা এই পদের ক্ষেত্রে বিচার্য নয়। এইক্ষেত্রে সিনিয়রিটির চেয়ে মেধার বিষয় বিবেচনা বেশি জরুরী। আর সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কাজ আদালতের নয়, বরং সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা সংস্থার আধিকারিক ই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
কর্মীদের কি প্রভাব পড়তে পারে?
সাধারনত বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট বয়স যেমন ৮, ১০, ১৮ বা ২০ বছরের কর্মজীবনের পর প্রমোশন হয়। এটি একেক দপ্তরে একেক রকম হয়। কিন্তু আদালতের এই রায়ে বয়স নয় বরং কর্মীদের কাজের দক্ষতা এবং যদি শূন্যপদ থাকে তবেই প্রোমোশন হতে পারে। এবং সেই সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা সংস্থার আধিকারিক ই ঠিক করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব হওয়ার আশংকা প্রকাশ করছেন সরকারি কর্মীদের একাংশ। এই বিষয়ে আপনাদের কি মতামত, নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এবং নিয়মিত এই ধরনের খবর পেতে EK24 News ফলো করুন।