ব্যবসায়িক ঋণ (Business Loan) নিয়ে ব্যবসা শুরু করেই সংসারের স্বচ্ছলতা ও নিজে স্বনির্ভর হয়ে লাখ লাখ সাধারণ গৃহবধূর অনুপ্রেরণা হলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের এক সাধারণ মহিলা! আর তার ব্যবসার সাফল্য দেখে এবার ২৪ লক্ষ টাকার লোন অনুমোদন করলো ঋণদাতা সংস্থা। সমাজের স্বনির্ভর মহিলা হিসেবে নিজের পরিচিতি পেতে ঋণ (Group Loan) নিয়েই ব্যবসা (Business) শুরু করেন দাঁতন ব্লকের জেনকাপুর এলাকার বামনদা গ্রামের রিক্তা ঘোষ। অনেক আগে থেকেই স্বনির্ভরতার স্বপ্ন দেখলেও সেই পথে আর্থিক অনটন বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। রিক্তার সেই যাত্রায় সাহায্য পেলেন স্বনির্ভর গোষ্ঠী (Self help Groups) এর থেকে। সেখান থেকেই ঋণ নিয়ে হার্ডওয়ার (Hardware) এর দোকান খোলেন দাতুন ব্লকের রিক্তা ঘোষ। আজ তিনি সফল ব্যবসায়ী এবং এলাকার আরও বহু মহিলাকে অনুপ্রাণিত করে চলেছেন প্রতি মুহূর্তেই।
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সহায়তায় ব্যবসায়িক ঋণ ও প্রতিষ্ঠা
দাঁতন ব্লকের রিক্তা ঘোষ আজ থেকে প্রায় পাঁচ বছর আগে সম্পূর্ণ স্ব-ইচ্ছায় এবং নিজের চেষ্টায় একটি হার্ডওয়ারের দোকান খুলেছিলেন। তখন রিক্তার চোখে একটি স্বপ্ন, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যেভাবেই হোক স্বনির্ভর হতে হবে। পাশে দাঁড়াতে হবে তার সংসারের। সেই উদ্দেশ্যেই তিনি ওই এলাকারই স্থানীয় একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী (Self help Groups)- “মহালক্ষী স্বনির্ভর গোষ্ঠী” তে অংশগ্রহণ করেন। এখান থেকেই তার ব্যবসার জন্য গ্রুপ লোন (Group Loan) নিয়ে নিজের ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিলেন।
Self help Groups Enterprise Finance Scheme Business Loan for Women Empowerment
এরপর তিন বছরের মধ্যেই বেশ কিছুটা বিস্তার ঘটে সেই ব্যবসার। নিয়মিত লেনদেনের ফলে ব্যাংকের আস্থা অর্জনের ক্ষেত্রে সময় লাগেনি। সম্প্রতি এন্টারপ্রাইজ ফিনান্স স্কিম (Enterprise Finance Scheme) এর আওতায় একটি ঋণদান শিবিরে অংশগ্রহণ করে তিনি জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ ২৪ লক্ষ টাকার বিজনেস লোন (Business Loan) পান। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য গ্রামে গঞ্জে যে সমস্ত ছোটখাটো ব্যবসায়ী রয়েছেন, তাদের আর্থিক দিক থেকে সহায়তা করা। এই ঋণ (Loan) পাওয়ার পর রিক্তা জানিয়েছেন, “আমি স্বপ্ন দেখতাম কিছু করে নিজের পায়ে দাঁড়াব। আজ সেই স্বপ্ন অনেকটা পূরণ হয়েছে। এই টাকায় ব্যবসা আরও বাড়াব এবং ব্যবসায়িক ঋণ দ্রুত পরিশোধ করব।”
গ্রামে থাকা মহিলাদের স্বনির্ভরতার অনুপ্রেরণা রিক্তা
অভাব অনটন তার জীবনের শুরু থেকেই তার পিছনে পড়েছিল। বিদ্যালয় জীবন শুরু করার কয়েক বছরের মধ্যেই সেখানে ইতি টানতে হয় রিক্তাকে। প্রাথমিক স্কুলের পড়া শেষের পরেই বন্ধ হয়ে যায় পড়াশোনার জীবন। এর মূল কারণ ছিল অভাব অনটন। বিয়ের পরে স্বামীর সঙ্গে হাতে হাত লাগিয়ে তিনি কাপড়ের ব্যবসা (Business) শুরু করেন। তবে সেখানে খুব বেশি লাভ হতো না। এই কারণেই তিনি বছর পাঁচেক আগে হার্ডওয়্যারের ব্যবসার পরিকল্পনা করেন। প্রাথমিকভাবে বাড়িতেই শুরু হয় এই হার্ডওয়ার ব্যবসার যাত্রা। পরেই ব্যবসা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যা হয়ে ওঠেন রিক্তা। সেখান থেকে লোন (Business Loan) নিয়ে ব্যবসার অগ্রগতিও করেন তিনি।
আরও পড়ুন, লোন ছাড়াই বাড়ি বসে ব্যবসা করে মাসে ৫০০০০ টাকা রোজগার করুন।
প্রসঙ্গত, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বর্তমানে প্রায় ৬৮ হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠী (Self help Groups) রয়েছে। এই বছরে ৬,৫০০ গোষ্ঠীকে প্রায় ৪০২ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছে। এর সাথে ৮১ জন মহিলা এন্টারপ্রাইজ ফিনান্স স্কিমের আওতায় ঋণ পেয়েছেন। গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরো সবল করে তোলার উদ্দেশ্যেই বর্তমানে মহিলাদের স্বনির্ভর (Women Empowerment) করার লক্ষ্য স্থির করেছে এন্টারপ্রাইজ ফাইনান্স স্কিম। কত বছর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা এই প্রকল্পে গোটা দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে ছিল। এই বছরেও জেলা যথেষ্ট ভালো ফলাফল করবে বলে আশাবাদী অনেকেই।
আরও পড়ুন, বাড়ি বসে প্যাকিংয়ের কাজ করে প্রতিমাসে ৫০০০ টাকা রোজগার করুন।
উপসংহার
দাঁতন ব্লকের রিক্তা ঘোষের জীবনযাত্রা এটাই প্রমাণ করে দেয়, যে ইচ্ছে থাকলে স্বপ্ন পূরণ যেকোনো ভাবেই সম্ভব। বর্তমানে তিনি এলাকার মহিলাদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা। রিক্তা এবং তার পাশাপাশি আরও অন্যান্য স্বনির্ভর মহিলাদের দেখে গ্রামীণ এলাকায় মহিলাদের আরও বিকাশ ঘটবে বলে মনে করছেন এলাকার কর্মকর্তারা। এলাকার আর্থিক উন্নয়ন করতে গেলে মহিলাদের স্বনির্ভর হতে হবে। এই উদ্দেশ্যেই প্রায় ১,৩০০ মহিলার ব্যবসা সংক্রান্ত প্রস্তাব ব্যাঙ্কের কাছে জমা রাখা হয়েছে। ধাপে ধাপে যোগ্য সকল মহিলাকেই স্বনির্ভরতার জন্য ঋণ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। সুতরাং পুরুষ বা মহিলা, যে কেউ চাইলেই আর্থিক সাহায্য বা ঋণ নিয়ে নিজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন। সেই সাথে নিজের পরিবারের আর্থিক সমস্যা ও মেটাতে পারেন।