ইতিমধ্যেই স্কুল খোলার প্রস্তুতি শুরু করেছে শিক্ষাদপ্তর। স্কুলেও শিক্ষকেরা একাধিক কাজ করছেন। কিন্তু কোভিডের কারনে নিয়মিত স্কুল বন্ধই রয়েছে। তবে করোনার প্রকোপ কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে এ বার রোস্টার ডিউটি তালিকা তৈরি করে স্কুলে স্কুলে শিক্ষক শিক্ষিকাদের উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিতে শুরু করেছেন জেলা স্কুল পরিদর্শকেরা। স্কুল সংক্রান্ত প্রশাসনিক কাজ সুষ্ঠু ভাবে করার জন্য জেলা স্কুল পরিদর্শকদের এই নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন অনেক শিক্ষকই। কিন্তু শিক্ষক শিক্ষিকাদেরই একাংশের অভিযোগ, স্কুলে হাজিরার ব্যাপারে রাজ্যের শিক্ষা দফতরের কোনও নির্দেশিকা না থাকায় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। তাই শিক্ষা দফতর থেকেও এই বিষয়ে বিজ্ঞপ্তির দাবি করেছেন তাঁরা।
করোনাকালে স্কুলে পঠনপাঠন বন্ধই। কিন্তু মিড ডে মিলের সামগ্রী বিতরণ থেকে শুরু করে কন্যাশ্রী, ঐক্যশ্রীর মতো প্রকল্প, একাদশ থেকে দ্বাদশের ভর্তি প্রক্রিয়ার কাজ, দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ট্যাবের জন্য নাম নথিভুক্তির মতো নানান কাজের জন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকাদের স্কুলে আসতে হচ্ছে। এছাড়াও সম্প্রতি নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত সমস্ত পড়ুয়াদের আধার আপডেট নিয়ে যে নির্দেশিকা এসেছে সেটাও আগামী ২৭ তারিখের মধ্যে শেষ করতে হবে।
প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকারা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন যে, স্কুলে এসে কাজ করার ব্যাপারে শিক্ষা দফতরের কোনও নির্দেশ না থাকায় শিক্ষক, শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীরা পর্যাপ্ত সংখ্যায় স্কুলে উপস্থিত হচ্ছেন না। প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকাদেরই কার্যত একার হাতে যাবতীয় কাজকর্ম করতে হচ্ছে। প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টারস অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস এর রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, স্কুলে কাজ অনেক। অথচ শিক্ষকদের হাজিরা কম। কাজ এগোচ্ছে না। বিভিন্ন কাজ সময়মতো শেষ করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। কোনও কোনও শিক্ষক নিজের ইচ্ছায় স্কুলে আসছেন, কিন্তু বেশির ভাগ সময়েই স্কুলে শিক্ষকদের আনার জন্য কাকুতিমিনতি করতে হচ্ছে।
এই সমস্যার কথা মাথায় রেখেই জেলায় জেলায় স্কুলগুলিতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষক শিক্ষিকাদের আসার নির্দেশ দিয়েছেন স্কুল পরির্দশকেরা। পশ্চিম বর্ধমানের জেলা স্কুল পরিদর্শক অজয় পাল বলেন, প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকাদের নির্দেশ দিয়েছি, তাঁরা যেন রোস্টার ডিউটি তালিকা তৈরি করে, কোভিড বিধি মেনে শিক্ষকদের স্কুলে আসতে বলেন।
শুধু পশ্চিম বর্ধমান নয়, শিক্ষকদের স্কুলে আসার নির্দেশ দিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরের স্কুল পরিদর্শকও। জেলা স্কুল পরিদর্শকদের নিজেদের উদ্যোগে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশকে স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন। পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নবকুমার কর্মকার বলেন, জেলা স্কুল পরির্দশকদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। অনেক শিক্ষক বলছেন, গরমের ছুটি শেষ হয়েছ, এ রকম কোনও বিজ্ঞপ্তি তো শিক্ষা দফতর থেকে আসেনি। স্কুলে যাব কেন? সেক্ষেত্রে স্কুলে শিক্ষকদের হাজিরা নিশ্চিত করার জন্য গরমের ছুটি শেষ হওয়ার বিজ্ঞপ্তিও দ্রুত জারি করুক শিক্ষা দফতর। তবে শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, তাঁদের স্কুলে যেতে আপত্তি নেই। কিন্তু গণপরিবহণ কম থাকায় স্কুলে পৌঁছতে অসুবিধা হচ্ছে।