শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি নিয়ে ফের একটি মামলা দায়ের হলো কলকাতা হাইকোর্টে। এই মামলাটিও রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা সংক্রান্ত। একদিকে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা চলছে। তারপর থেকে একাধিক অভিযোগের উপর দাঁড়িয়েও একাধিক মামলাও দায়ের হয়েছে। যার ফলে একটা সময় চাকরিপ্রার্থীদের একটি সংগঠন চরম ক্ষুব্ধ হয়ে গিয়ে আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের বাড়িতে পৌঁছে যায়।
মামলার জটিলতায় স্বাভাবিকভাবেই সরকারি বহু প্রক্রিয়া থমকে যায়। এবার আবার দেখা গেল, রাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের তরফে বঞ্চনার অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হলো। লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, এই মামলাটিও দায়ের করা হয়েছে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির দাবীতে এই মামলাটি দায়ের করেছে প্রাথমিক শিক্ষকদের সংগঠন উস্থি বা UUPTWA
কিসের অভিযোগে মামলা:
পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক শিক্ষকদের দাবি, বেশ কয়েক বছর ধরেই তারা বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে Notional Effect- এর সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। দেশের সমস্ত রাজ্যে ২০০৯ সাল থেকে RTE- 2009 আইন চালু হয়েছিল। সেই আইন অনুযায়ী সমস্ত প্রাথমিক শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা ৫০ শতাংশ নম্বরসহ উচ্চ মাধ্যমিক পাশ এবং দুই বছরের D.Eled পাশ করা বাধ্যতামূলক ছিল। এবার পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ২ লক্ষ শিক্ষক শিক্ষিকারা প্রত্যেকেই RTE- ২০০৯ আইন অনুযায়ী যোগ্যতামান উত্তীর্ণ হয়েছিলেন, আর সেই যোগ্যতায় PRT Scale অনুযায়ী বেতন পাওয়ার কথা।
এই নিয়মে শিক্ষকদের অভিযোগ কেন্দ্রে নিয়ম অনুযায়ী নুন্যতম যোগ্যতার জন্য যদি ফের পরীক্ষায় বসতে হয় তবে সেই জোগ্যতার বেতন কেন তারা পাবেন না! ফলে তারা PRT স্কেলের বেতন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলেই তাদের অভিযোগ। যোগ্যতামান উত্তীর্ণ হওয়ার পরে বেশ কয়েক বছর কেটে যাওয়ার পরেও বেতনের সংশোধন সরকারিভাবে এখনো পর্যন্ত করা হয়নি।
নোশনাল ইফেক্ট পেলে বেতন বৃদ্ধি কতটা হবে?
এই দাবিতে প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন UUPTWA- এর নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। কিন্তু অতিমারী ও সংক্রমনের পরিস্থিতিতে তা একসময় বন্ধ হয়ে যায়। তারা সমস্ত আন্দোলন থেকে সরে এসে ত্রাণ এবং সহায়তার কাজই যোগ দেয়। পরবর্তীতে যেহেতু রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ডি এর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে একাধিক সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন আন্দোলন করছেন। তাতে যুক্ত হয় প্রাথমিক শিক্ষকদের সংগঠন UUPTWA এবার তারা সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ তৈরি করে ২৮ টি সংগঠনকে একসাথে নিয়ে বকেয়া ডিএ এর দাবিতে আন্দোলন সংগঠিত করে।
প্রাথমিক শিক্ষকদের এই বেতন বঞ্চনা বা Notional Effect- এর বিষয়টি নিয়ে কোনো সংগঠনই এখনও পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য ভূমিকা নেয়নি।
সেখানে এবার হঠাৎ দেখা গেল UUPTWA বা উস্তি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে প্রাথমিক শিক্ষকদের এই বেতন বঞ্চনার দাবি নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন নিবেদন করা হয়। তারপরেও কোনো সুরাহা না হওয়ায় আমরণ অনশনের মাধ্যমে লড়াই সংগ্রাম করে তারপরে বেতন বৃদ্ধির নোটিশ জারি হয় ২৬/৭/২০১৯ তারিখে। যখন এই বেতন বৃদ্ধির নোটিশ কার্যকরী করা হলো দেখা যাচ্ছে, PB 2 থেকে PB 3 বৃদ্ধি হলেও Pay Revision অনুযায়ী Notiona Effect দিয়ে বেতন সংশোধন করা হয়নি। ফলে সিনিয়র জুনিয়র শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন প্রায় এক হয়ে যায়। যেটা নতুন ভাবে আরেক ধরনের বঞ্চনা বলেই জানাচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষকদের এই সংগঠন।
এই প্রসঙ্গে সংগঠনের সদস্য সৌগত লাহিড়ী জানালেন, এই মামলায় জয়ের ব্যাপারে তারা আত্মবিশ্বাসী। বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জোগাড় করেছেন। যেগুলি কোর্টে পেশ করলে তাদের পক্ষেই আদালত রায় দেবে বলে তারা মনে করেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আরো বলেন, ROPA- ২০০৯ নিয়ম অনুযায়ী এই বেতন বৃদ্ধি হল পে রিভিশন। বেতন বৃদ্ধি সংক্রান্ত এই সরকারি আদেশনামা ভুলে ভরা। যে Pay Revision- উল্লেখ না করেই PB2 থেকে PB3 বৃদ্ধি করার যে আদেশ দেওয়া রয়েছে তা ROPA-2009 আইনের বিরোধী। বিজ্ঞপ্তিতে যেটা কৌশল করে দেওয়া হয়নি।
ডিএ ও বেতন বৃদ্ধির আশায় বুক বাঁধছেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মীরা, বকেয়া DA নিয়ে দারুন খবর
যাতে Notional Effect না পাওয়া যায়। তাই এই বেতন বৃদ্ধি আইনবিরোধী। যার ফলে বঞ্চিত প্রাথমিক শিক্ষকরা এর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। যে কোনো মূল্যে তারা এতে জয় পাবেন বলেই আশা করেন। তার কথায়, সমস্ত দপ্তরের পে রিভিশনে ২০১৯ সালে সরকার ROPA-তে Notional Effect- এর অপশন দিয়ে রাখলেও প্রাথমিক শিক্ষকদের ROPA-তে Notional Effect- এর কোনো অপশন দেওয়া হয়নি। তাই তাদের দাবি ১/১ /২০০৬ থেকে এই Notional Effect কার্যকরী করতে হবে। প্রসঙ্গত নতুন বেতন বৃদ্ধির ফাইল সিনিয়র জুনিয়র বেতন এক হয়ে গেছে, এই নিয়ম কার্যকর হলে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের আগে পাওয়া ইঙ্ক্রিমেন্ট এর সুবিধা পাবেন।
অবশেষে UUPTWA সংগঠনের তরফে কলকাতা হাইকোর্টে সমস্ত কার্যকরী নথিপত্র জোগাড় করে Notional Effect- এর মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। মামলা দায়ের করার সময় হাইকোর্টে সংগঠনের সভাপতি, সম্পাদক, সদস্যরা সব উপস্থিত ছিলেন। মামলাটি দায়ের হয়েছে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে।
ফলে শিক্ষক- শিক্ষিকারা বঞ্চনার দাবি নিয়ে ফের কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন। এবার শুনানিতে কি হয় সেটাই দেখার বিষয়।
Written by Rajib Ghosh.