Right to Disconnect Bill: অফিস টাইমের বাইরে অফিসের ফোন কল, ইমেইল বা বাড়তি কাজ নয়। চাকরিজীবীদের স্বার্থে সুপ্রিম কোর্টে পাশ হলো নতুন বিল

সরকারি ও প্রাইভেট যেকোনো সংস্থার কর্মীদের জন্য সুপ্রিম কোর্টে পাশ হলো নতুন রাইট টু ডিসকানেক্ট বিল ২০২৫ বা Private Members Bill – Right to Disconnect Bill. এই বিল পাসের ফলে কর্মচারী সুবিধা তথা কর্মীদের বাড়তি কাজ থেকে মুক্তি মিলবে। অযথা টার্গেট ও অফিস টাইমের বাইরের কাজ থেকে মুক্তি মিলবে। এই বিলের বিবরণ ও সুবিধা অসুবিধা বিস্তারিত জেনে নিন।

Private Members Bill – Right to Disconnect Bill

সারা দিন অফিসের কাজ করে বাড়িতে এসে আবার অনলাইনে কাজ করা, বা ফোন করে ফাইলের হিসাব চাওয়া, বা ইমেইল চেক করে তার রিপ্লাই দেওয়া প্রভৃতি এমন ঘটনা আকছার সরকারি বা প্রাইভেট উভয় শ্রেণীর কর্মীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়। হয়তো অনেকে অনেক টার্গেট, বাড়তি কাজ করে বস কে খুশি করে ৭ দিনের ছুটি পেয়ে পরিবার কে নিয়ে একটু বেড়াতে গেছেন। কিন্তু বেড়াতে গিয়েও শান্তি নেই। অফিস থেকে একের পর এক ফোন, এই ফাইল কোথায়, কি কি কাজ পেন্ডিং আছে প্রভৃতি।

আবার ইমেইল এর রিপ্লাই দেওয়া বা অনলাইনে মিটিং এটেন্ড করা বা Google Meet বা Team Viewer এ প্রেজেন্টেশন দেওয়া প্রভৃতি যেন সপ্তাহ খানেকের ছুটি নিয়েও কার্যত শান্তি নেই! এমনিতেই টার্গেট এর পর টার্গেট দিয়ে জীবন টা হেল করে দেয় বেশিরভাগ নিয়োগকর্তা। তার উপর ছুটির দিনেও কাজ আর কাজ। আর এই ঘটনা আকছার প্রত্যেক কর্মীদেরই কম বেশি সহ্য করতে হয়। সেই সমস্যা নিরসনে এবার লোকসভায় পাশ হলো নতুন বিল যার নাম দেওয়া হয়েছে Right to Disconnect Bill. যেখানে ছুটির সময় বা অফিস টাইমের বাইরে কর্মীকে দিয়ে অফিসের কোনও কাজ করানো যাবে না।

কাজের সময় পেরিয়ে গেলে অফিসের ফোনকল বা ইমেল নয়

কাজের পর বাড়ি ফিরে যদি বসের ফোন বা হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে ঘুম ভেঙে যায়? এবার সেই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলতে পারে। শুক্রবার লোকসভায় ‘রাইট টু ডিসকানেক্ট বিল ২০২৫’ (Private Members Bill – Right to Disconnect Bill) পেশ করেছেন বিজেপির সাংসদ প্রদ্যোত বরদলই। বিলটি পাশ হলে অফিসের নির্দিষ্ট সময়ের পর কেউ কর্মীদের ফোন করতে বা মেল পাঠাতে পারবেন না। না মানলে জরিমানা থেকে শুরু করে কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় হইচই পড়ে গেছে।

কী বলছে রাইট টু ডিসকানেক্ট বিল ২০২৫?

কর্মীদের স্বার্থে এই বিলে বলা হয়েছে, প্রতিটি কোম্পানিকে কর্মীদের জন্য ‘ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স’ নীতি তৈরি করতে হবে। অফিস চলাকালীন যোগাযোগের নিয়ম স্পষ্ট করে দিতে হবে। কাজের পর কোনও জরুরি কারন ছাড়া ফোন, ইমেল, মেসেজ পাঠানো যাবে না। কর্মীরা যদি অভিযোগ করেন, তাহলে একটি ‘কর্মচারী কল্যাণ কমিটি’ তদন্ত করবে। কোম্পানি দোষী প্রমাণিত হলে প্রথমবার ১০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা। বারবার একই ভুল করলে জরিমানা বাড়বে, এমনকি ৬ মাস পর্যন্ত জেলও হতে পারে। এই বিল কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রকের অধীনে কার্যকর হবে।

আরও পড়ুন, দেশ জুড়ে বদলে গেল বাড়ি ভাড়া আইন। বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটে উভয়ের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করে দিলো মোদী সরকার

কেন এখন এই বিল দরকার?

গত কয়েক বছরে ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম আর হাইব্রিড কাজের কালচারে মানুষ প্রায় ২৪ ঘণ্টাই অনলাইনে থাকছেন। কোম্পানী ও সুযোগ বুঝে এমন কাজের সিডিউল ফেলছেন, যাতে রাত দিন ২৪ ঘন্টা সর্বদা এলার্ট থাকতে হয়! রাত ১১টা-১২টায় বসের মেল দেখে অনেকেরই মাথা গরম হয়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, এর ফলে স্ট্রেস, ঘুমের গোলমাল, এমনকি ডিপ্রেশন বাড়ছে। ফ্রান্স, বেলজিয়াম, পর্তুগালের মতো দেশে অনেক আগেই ‘রাইট টু ডিসকানেক্ট’ আইন চালু হয়েছে। ভারতেও রাজস্থানের কংগ্রেস সরকার ২০২২-এ এমন বিল এনেছিল, কিন্তু কেন্দ্রে এবারই প্রথম। তাই কর্পোরেট কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। আর এটি আইনে পরিনত হলে সরকারি থেকে প্রাইভেট, সমস্ত ক্ষেত্রের কর্মীরাই হাফ ছেড়ে বাঁচবেন।

রাইট টু ডিসকানেক্ট বিলের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

Private Members Bill নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকে বলছেন, এটা কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য বাঁচাবে। আবার কিছু কোম্পানির কর্তারা মনে করছেন, জরুরি কাজে দেরি হবে। স্টার্টআপ বা আইটি সেক্টরে তো রাতদিন কাজ চলে, সেখানে এই নিয়ম কীভাবে মানা হবে? তাছাড়া শুধু প্রাইভেট সেক্টর নয়, সরকারি দফতরেও রাতবিরাতে ফাইল পাঠানোর রেওয়াজ আছে। সব মিলিয়ে বিল পাশ হলেও বাস্তবে কতটা কার্যকর হবে, সেটাই দেখার।

ভবিষ্যৎ ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

Private Members Bill – Right to Disconnect Bill 2025 বিলটি এখন সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানো হবে। সেখানে বিশেষজ্ঞ, শ্রমিক সংগঠন ও কোম্পানিগুলোর মতামত নেওয়া হবে। তারপর আবার লোকসভা-রাজ্যসভায় আলোচনা হবে। পাশ হতে হতেও অনেক সময় লাগতে পারে। তবে এই বিল আলোচনা শুরু করে দিয়েছে যে, কাজের সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনের সীমারেখা টানা এখন সময়ের দাবি। সাধারণ মানুষ থেকে কর্পোরেট কর্মী—সবাই আশায় বুক বেঁধে আছেন, কবে থেকে রাতের ঘুমটা আর বসের মেসেজে ভাঙবে না!

শেয়ার করুন: Sharing is Caring!