ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার পথে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য ন্যাশনাল স্কলারশিপ স্কিম (National Scholarship Portal Program) চালু করেছে। এই বৃত্তিমূলক প্রোগ্রামের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতী তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছে বিনা চিন্তায়। এই স্কলারশিপের টাকা সরাসরি পড়ুয়াদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হয়, যা জালিয়াতির ভয় কমিয়ে দেয়। এটি শুধু টাকার সাহায্য নয়, বরং ভবিষ্যতের ভিত্তি মজবুত করার একটি উপায়। অনেক পরিবারের স্বপ্ন এই স্কিমের কারণে সত্যি হচ্ছে। আজকের এই লেখায় আমরা এই স্কলারশিপের সব দিক নিয়ে আলোচনা করব, যাতে আপনি সহজেই বুঝতে পারেন।
National Scholarship Portal 2.0
ন্যাশনাল স্কলারশিপ প্রোগ্রামটি স্কুল থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সবাইকে কভার করে। প্রাথমিক শ্রেণী থেকে ক্লাস দশম পর্যন্ত পড়তে গিয়ে ছাত্ররা মাসিক ১০০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত পেতে পারে। উচ্চ মাধ্যমিক এবং ভোকেশনাল কোর্সে এই সাহায্য ১০,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকার মধ্যে থাকে। স্নাতক বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো কোর্সে এটি ২০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। গবেষণা বা পিএইচডির জন্য তো আরও বেশি সুবিধা রয়েছে। এভাবে সরকার ছাত্রদের খরচের বোঝা কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে অনেকে যারা আগে পড়তে পারত না, তারা এখন স্বপ্নের পথে এগোচ্ছে।
ন্যাশনাল স্কলারশিপ প্রোগ্রাম কেন এত জনপ্রিয়?
ন্যাশনাল স্কলারশিপ পোর্টালের (National Scholarship Portal Program) মাধ্যমে সবকিছু অনলাইনে হয়, যা সময় বাঁচায়। এখানে স্কলারশিপের তথ্য এক জায়গায় পাওয়া যায়, তাই বিভ্রান্তি কম। সরকারের এই উদ্যোগে সকল জাতি-ধর্মের ছাত্ররা উপকৃত হচ্ছে। এটি শুধু টাকা দেয় না, বরং শিক্ষার মান উন্নত করতে সাহায্য করে। অনেক রাজ্যও এর সঙ্গে মিলে নিজস্ব স্কিম চালু করেছে। ফলে দেশের যুবশক্তি আরও শক্তিশালী হচ্ছে। এই স্কিমটি ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নতুন দিক দেয়।
ন্যাশনাল স্কলারশিপের যোগ্যতা: কারা আবেদন করতে পারবে?
কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যাশনাল স্কলারশিপের জন্য প্রথম শর্ত হলো আপনাকে ভারতের নাগরিক হতে হবে। আপনার পরিবারের বছরের আয় ২.৫ লক্ষ টাকার নিচে থাকতে হবে, যদিও কিছু ক্ষেত্রে এটি ৮ লক্ষ পর্যন্ত হতে পারে। আগের পরীক্ষায় কমপক্ষে ৫০ শতাংশ নম্বর আনতে হবে। আপনাকে সরকারি স্বীকৃতি প্রাপ্ত স্কুল বা কলেজে নিয়মিত পড়তে হবে। দূরবর্তী শিক্ষা এখানে গণ্য হয় না। সকল শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রী, যেমন জেনারেল, এসসি, এসটি বা ওবিসি, এতে যোগ দিতে পারে। এই শর্তগুলো পূরণ করলে আপনার পথ সহজ হয়ে যাবে।
বিশেষ সুবিধা কারা পাবে?
যারা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল পরিবার থেকে আসে, তাদের জন্য এই স্কিম একটা বড় সাহায্য। মেয়েদের জন্য কিছু অতিরিক্ত সুবিধা রাখা হয়েছে, যাতে তারা পিছিয়ে না পড়ে। গ্রামীণ এলাকার ছাত্ররা প্রায়ই এর সুবিধা নেয়। এটি শুধু পড়াশোনার খরচ কভার করে না, বরং বই-খাতার মতো ছোটখাটো চাহিদাও মেটায়। ফলে অনেকে কলেজে ভর্তি হয়ে উঠেছে। সরকারের এই পদক্ষেপ দেশের শিক্ষা হার বাড়াতে সাহায্য করছে। এখনই চেক করুন, আপনি কি যোগ্য?
ন্যাশনাল স্কলারশিপে আবেদন প্রক্রিয়া
ন্যাশনাল স্কলারশিপে আবেদন করতে প্রথমে NSP Portal এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান। ‘নিউ রেজিস্ট্রেশন’ অপশনে ক্লিক করে আপনার মোবাইল নম্বর এবং ইমেল দিন। আধার নম্বর যোগ করে রেজিস্টার করুন, তাহলে অ্যাপ্লিকেশন আইডি পাবেন। এই আইডি এবং পাসওয়ার্ড মোবাইলে আসবে, তা ভালোভাবে রাখুন। লগইন করে ‘অ্যাপ্লাই ফর স্কলারশিপ’ সিলেক্ট করুন। এখানে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য এবং শিক্ষাগত ডিটেলস পূরণ করুন। সব তথ্য সঠিক রাখুন, কারণ ভুল হলে আবেদন বাতিল হতে পারে। এই প্রক্রিয়া মাত্র কয়েক মিনিটের কাজ।
ফর্ম জমা এবং ট্র্যাকিং
NSP Portal এ ফর্ম পূরণের পর প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করুন। তারপর ‘সাবমিট’ করে প্রিন্ট নিন, যাতে পরে দরকার পড়ে। আপনার আবেদনের স্ট্যাটাস চেক করতে পোর্টালে লগইন করুন। যদি কোনো সমস্যা হয়, হেল্পলাইন নম্বরে কল করুন। এই সিস্টেমটি খুবই সহজবোধ্য, তাই নতুনরাও সহজে করতে পারে। অনেক ছাত্র এভাবে সফলভাবে আবেদন করেছে। সময়মতো করলে আপনার স্কলারশিপ নিশ্চিত।
কি কি নথি লাগবে?
আবেদনের জন্য আধার কার্ডের কপি আপলোড করতে হবে। আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের পাসবুক বা স্টেটমেন্ট দিন, যাতে অর্থ জমা হয়। শিক্ষাগত সার্টিফিকেট এবং মার্কশিট জমা দিন। পরবর্তী ক্লাসে ভর্তির প্রমাণপত্র যোগ করুন। যদি জাতিগত সার্টিফিকেট থাকে, তা দিন। পরিবারের আয়ের প্রমাণপত্র অবশ্যই দরকার। এছাড়া পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং স্বাক্ষর স্ক্যান করে দিন।
- সব ডকুমেন্ট স্ক্যান করে পিডিএফ ফরম্যাটে রাখুন, যাতে সাইজ ছোট থাকে।
- ভুল ছবি বা তথ্য এড়িয়ে চলুন।
- যদি আধার লিঙ্ক না থাকে, তাহলে আগে লিঙ্ক করুন।
- এই কাগজপত্রগুলো সংরক্ষণ করুন ভবিষ্যতের জন্য।
- অনেক সময় এগুলো অন্য স্কলারশিপেও কাজে লাগে।
- সঠিকভাবে জমা দিলে আপনার আবেদন দ্রুত অনুমোদিত হবে।
আরও পড়ুন, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে এই ২টি কারনে বন্ধ হয়ে যাবে লাখ লাখ রেশন কার্ড। কি কি করতে হবে জেনে নিন
ন্যাশনাল স্কলারশিপের গুরুত্বপূর্ণ তারিখ এবং পরামর্শ
National Scholarship Portal Program এ এই বছরের আবেদনের শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর, তাই দেরি করবেন না। সময়সীমা পার হলে পরের বছর অপেক্ষা করতে হবে। যদি কোনো সন্দেহ হয়, ওয়েবসাইটের হেল্প সেকশন দেখুন। রাজ্য সরকারের স্কলারশিপও চেক করুন, কারণ সেগুলো অতিরিক্ত সাহায্য দেয়। এই স্কিমটি আপনার ক্যারিয়ারের প্রথম ধাপকে শক্তিশালী করবে। এখনই আবেদন করুন এবং স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপ দিন। ফলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা আরও উজ্জ্বল হবে।
