অল্প সময়ে নির্ভরযোগ্য ও চাহিদা সম্পন্ন ও সরকারি এজেন্সি নিয়ে ব্যবসা করার সুবর্ণ সুযোগ। গ্যাস এজেন্সি ডিলারশিপ (Gas Agency Dealership) বা রান্নার গ্যাস ডেলিভারি এর ব্যবসা করে প্রতি মাসে প্রচুর টাকা রোজগারের সুযোগ। কিভাবে গ্যাস এজেন্সি ব্যবসা শুরু করবেন, কারা এই গ্যাসের ডিলারশিপের ব্যবসা করতে পারবেন Gas Agency Dealership এর খরচ কেমন, কি কি ডকুমেন্টস ও কতটা জমি লাগবে, সমত কিছু বিস্তারিত জেনে নিন।
Gas Agency Dealership Cost and Advertisement
চাকরি জীবনের অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় বর্তমানে বিপুল সংখ্যক ভারতীয় যুবক যুবতী নিজেদের নামে একটি ব্যবসা চালু করার স্বপ্ন দেখছেন। তবে এই ব্যবসার ক্ষেত্রেও সঠিক ব্যবসা বা ব্যবসার আইডিয়া না নিয়ে ব্যবসা শুরু করলে সেক্ষেত্রেও ক্ষতির পরিমাণ থাকে বহু গুনে। তাই ১০০% সাফল্য পেতে চাইলে ইচ্ছুক যুবক-যুবতীরা বেছে নিতে পারেন এলপিজি গ্যাস এজেন্সি বা Gas Agency Dealership এর ব্যবসাকে। নিরাপদ, লাভজনক এবং সরকারি সমর্থিত ব্যবসার মধ্যে অন্যতম Gas Agency Dealership এর ব্যবসা। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার মত জনপ্রিয় প্রকল্পের কারণে ইতিমধ্যেই LPG গ্যাস সিলিন্ডারের চাহিদা বেড়েছে বহুগুণে। তাই আধুনিক প্রজন্মের যুবক-যুবতীদের কাছে এটি একটি বিরাট বড় সম্ভাবনার সুযোগ করে দিচ্ছে।
বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার সহায়তায় বিপুল পরিমাণে চাহিদা বেড়েছে বাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের। ২০২৫ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ভারতের ৩৩.৫২ কোটির বেশি অ্যাক্টিভ এলপিজি গ্যাস সংযোগ রয়েছে। অর্থাৎ এটা বলা যেতেই পারে যে বর্তমানে ভারতের প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরেই রয়েছে এলপিজি গ্যাসের চাহিদা। তাই এমন পরিস্থিতিতে এলপিজি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন বা Gas Agency Dealership এর ব্যবসার অপশনটি বেছে নিলে এক্ষেত্রে ক্ষতির সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু একটি ব্যবসা শুরু করার আগে সেখানে প্রয়োজনীয় মূলধনের পরিমাণ, লাভের পরিমাণ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নেওয়া আবশ্যক।
গ্যাস এজেন্সি ডিলারশিপ থেকে আয়ের পরিমাণ?
আপনি যদি Gas Agency Dealership নিয়ে একটি গ্যাস এজেন্সি চালু করেন তাহলে মূলত কমিশনের মাধ্যমে প্রতি সিলিন্ডার পিছু নির্দিষ্ট পরিমাণ আয় হবে। তবে সিলিন্ডারের প্রকারভেদ অনুসারে কমিশনের তারতম্য রয়েছে।
১৪.২ কেজি এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার-
এই এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে প্রায় ৭৩.০৮ টাকা কমিশন থাকে। যদিও এর মধ্যে ৩৯.৬৫ টাকা স্থাপন খরচ এবং ৩৩.৪৩ টাকা ডেলিভারি চার্জ হিসাবে যুক্ত করা হয়।
৫ কেজি গ্যাস সিলিন্ডার-
এই সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে প্রায় ৩৬.৫৪ টাকার কমিশন দেওয়া হয়।
এর থেকে ধারণা করা যায়, যদি একটি গ্যাস এজেন্সি প্রতি মাসে ৩০০০ এর মতো ১৪.২ কেজির বাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করেন, তাহলে এক মাসে শুধুমাত্র কমিশন থেকেই প্রায় ২.১৯ লক্ষ্য টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। যদিও গ্যাস সিলিন্ডারের কমিশনের পাশাপাশি আরো একাধিক পদ্ধতিতে আয় করা যেতে পারে-
অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ
- নতুন সংযোগ ইস্যু করলে অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ থাকে।
- গ্যাসের লাইটার, বার্নার, পাইপ ইত্যাদি বিক্রি করা যেতে পারে গ্যাস এজেন্সির মাধ্যমে।
- ১৪.২ কেজির এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের পাশাপাশি বাণিজ্যিক সিলিন্ডার সরবরাহ করলে সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত কমিশনের সুবিধা পাওয়া যায়।
- AMC বা সার্ভিস চার্জ হিসাবে অতিরিক্ত আয়ের সুযোগও থাকে।
Gas Agency Dealership Cost
যেকোনো ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত পরিমাণে মূলধনের প্রয়োজন হয়ে থাকে। Gas Agency Dealership বা ইন্ডিয়ান গ্যাস এজেন্সি শুরু করার জন্য প্রাথমিকভাবে একটি মোটা অংকের মূলধন বিনিয়োগ করতে হয়। মূলত আপনি যে এলাকায় ব্যবসা শুরু করছেন, সেই এলাকার জায়গার উপর নির্ভর করে এই মূলধন প্রয়োজন হয়ে থাকে। অর্থাৎ গ্রাম এলাকার জন্য এক ধরনের মূলধন এবং সহর এলাকার জন্য এক ধরনের মূলধন প্রয়োজন। নিচে একটা ধারণা দেওয়া হলো।
এলপিজি গ্যাস এজেন্সি শুরু করতে কত টাকা লাগবে?
এলপিজি গ্যাস এজেন্সি ব্যবসায় মূলত গোডাউন এর জমি ও ঘরের খরচ, এবং কোম্পানীর ফ্রাঞ্চাইজি ফি দিতে হয়। জমির দাম একেক জায়গায় একেক রকমের হয়ে থাকে। তাই গ্রাম এবং শহর মিলিয়ে মোটামুটি ১৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগ করতে হয়। যদিও এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কতটা পরিমাণ আয় করতে পারছেন, সেটির নিরিখেই ব্যবসার বিনিয়োগের কথাটি ভেবে তবে ব্যবসা শুরু করা প্রয়োজন।
কোন কোন ক্ষেত্রে মূলধন প্রয়োজন হবে?
সিকিউরিটি ডিপোজিট-
ইন্ডিয়ান গ্যাস এজেন্সি বা Gas Agency Dealership ব্যবসা শুরু করতে তেল কোম্পানির কাছে ফেরত যোগ্য অগ্রিম বা সিকিউরিটি ডিপোজিট জমা করতে হয়। তবে যোগ্য না হলে এই টাকা ফেরত পাওয়া যাবে।
অফিস বা গ্যাস সিলিন্ডার সংরক্ষণের জায়গা-
নিরাপদ ভাবে গ্যাস সিলিন্ডার সংরক্ষণ করতে নির্ধারিত আয়তনের জমি বাধ্যতামূলকভাবে থাকতে হবে। এই জায়গায় এসেই মূলত গ্যাস সিলিন্ডার গুলি সংরক্ষণ করা হয় এবং সেখান থেকেই ডেলিভারি করা হয় নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে।
অফিস সেটআপ-
গ্যাসের অফিসে অনেক সময়ই গ্রাহকদের একাধিক প্রয়োজন হয়ে থাকে। তাই কম্পিউটার, প্রিন্টার, বিলিং সফটওয়্যার, ফায়ার সেফটি ইত্যাদি সহ একটি সুসজ্জিত অফিস তৈরিতে বেশ কিছুটা মূলধন বিনিয়োগ করা প্রয়োজন।
ডেলিভারির গাড়ি-
গ্যাস সিলিন্ডার ডেলিভারি করার জন্য ট্রাক বা পিকআপ ভ্যান এর প্রয়োজন হয়। এই ভ্যান বা ডেলিভারি ট্রাকের ব্যবস্থা Gas Agency Dealer কেই করতে হয়।
আরও পড়ুন, ঘরে বসে প্যাকিং এর কাজ করে প্রচুর টাকা রোজগার করুন। নতুন ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন?
ইন্ডিয়ান গ্যাস এজেন্সি গড়ে তোলার যোগ্যতা
- আবেদনকারীকে অবশ্যই ভারতের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে।
- ২১ বছর থেকে ৬০ বছরের মধ্যবর্তী বয়সের মানুষ এই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
- আবেদনকারীকে অন্ততপক্ষে দশম শ্রেণী পাস করে থাকতে হবে।
- আবেদনকারীকে শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে হবে।
- আবেদনকারীর পরিবারের কেউ অন্য Oil marketing কোম্পানির কর্মচারী হলে এই ডিলারশিপের সুবিধা পাওয়া যাবে না।
- গ্যাস ডিলারশিপ এর ক্ষেত্রে SC, ST ক্যাটাগরি হলে সুবিধা পাবেন
- এছাড়া এক্স-সার্ভিসম্যান, খেলোয়াড়, মহিলাদের জন্য বিশেষ রিজার্ভেশন এবং অগ্রাধিকারের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।
গ্যাস এজেন্সি ডিলারশিপ এর ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন?
Gas Agency Dealership ব্যবসা শুরু করার জন্য যদি আপনি আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে বিভিন্ন তেল কোম্পানির LPG Vitarak Chayan অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে হবে। IOCL (Indane), BPCL (Bharat Gas), HPCL (HP Gas) – এই তিনটি সংস্থা নতুন এজেন্সি দেওয়ার জন্য সংবাদপত্র ও তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে থাকে। এই সমস্ত বিজ্ঞাপনগুলি অবশ্যই আপনাকে নজরে রাখতে হবে।
আপনি এমন কোন বিজ্ঞাপন দেখতে পেলে এবং সেই এলাকায় আপনার ব্যবসা চালু করার সম্ভাবনা থাকলে ওই পোর্টালে গিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে আবেদন পত্র পূরণ করতে হবে এবং নিজের ব্যক্তিগত, শিক্ষাগত ও আর্থিক তথ্য পূরণ করে জমা করতে হবে। আবেদনপত্রের সঙ্গে অবশ্যই সপোর্টিভ বিভিন্ন ডকুমেন্ট অনলাইনেই স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে। এর পাশাপাশি আবেদন মূল্য হিসেবে আনরিফানডেবল আবেদন মূল্য অনলাইনে পেমেন্ট করতে হবে।
গ্যাস এজেন্সি ডিলার নির্বাচন
এক্ষেত্রে অবশ্যই আবেদনকারীদের মধ্যে থেকে লাকি ড্র এর মাধ্যমে আবেদনকারীদের বেছে নেওয়া হতে পারে। আবেদন জানালেই যে আপনাকেই সেই ডিলারশিপ দেওয়া হবে, এমনটা ভেবে নেওয়ার কোন কারণ নেই। প্রাথমিকভাবে যদি অনেক জন এই ব্যবসার জন্য আবেদন করে থাকেন, তাহলে লাকি ড্র বা লটারির মাধ্যমে একজন ব্যক্তিকে বেছে নেওয়া হবে এবং তার পর তার যাবতীয় ডকুমেন্ট ভেরিফাই করা হবে। এক্ষেত্রে স্বচ্ছভাবে সম্পূর্ণরূপে কম্পিউটারাইজ লটারির মাধ্যমে আবেদনকারীকে বেছে নেওয়া হয়। যে ব্যক্তি এক্ষেত্রে ডিলার হিসেবে নির্বাচিত হবেন, তার সমস্ত তথ্য যাচাইয়ের পর Letter of Intent ইস্যু করা হয়। এরপর এজেন্সি প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করা যেতে পারে।
পড়াশোনা, চাকরি বা সংসার চালানোর,পাশাপাশি ঘরে বসে সম্মানীয় কাজ করার দুর্দান্ত সুযোগ।
উপসংহার
LPG Vitarak Chayan থেকে সরকারি বিভিন্ন গ্যাস এজেন্সির পাশাপাশি বেসরকারি একাধিক কোম্পানি ডিলারশিপ অফার করে থাকে। তবে সে ক্ষেত্রে তাদের শর্ত এবং বিনিয়োগের পদ্ধতি সরকারি গ্যাস সিলিন্ডার এজেন্সির থেকে আলাদা হয়। যে কোন ব্যবসা শুরু করার আগে সেই ব্যবসা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য ভালোভাবে পড়ে তবেই সেই ব্যবসা শুরু করা উচিত এবং বিনিয়োগ করা উচিত। বর্তমান বেকারত্বের যুগে কোনরকম লোকসানের সম্ভাবনা ছাড়াই সরকারি ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে ইন্ডিয়ান গ্যাস এজেন্সি ডলারশিপ বা Gas Agency Dealership অন্যতম বিকল্প হতে পারে। এটি শুধুমাত্র একটি আয়ের উৎস নয় বরং একটি দায়িত্বপূর্ণ পেশা যা সাধারণ মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের একটি অংশ। তাই সততা এবং পরিশ্রমের সাহায্যে এই ব্যবসা শুরু করলে অবশ্যই এটি একজন যুবক বা যুবতীর ভবিষ্যৎ সফলভাবে গড়ে তুলতে পারে।