টেট কেলেংকারী (TET Scam) নিয়ে মুখ খুললেন স্বয়ং বিচারপতি।
পশ্চিমবঙ্গে বহুচর্চিত একটি বিষয় হল টেট (WBSSC, WBBPE Primary TET). এখন বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, কোথাও শব্দটি কেউ শুনতে পেলে সব কাজ ছেড়ে আগেই বিষয়ের উপরে নজর চলে যায় তাদের। আর এই টেটের সাথে যে নামটি আরো প্রচলিত হয়ে গিয়েছে সেটি হল মহামান্য জাস্টিস অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
এই প্রথম মহামান্য জাস্টিস অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নিজেকে প্রকাশ করলেন মিডিয়ার সামনে। অনেকেরই প্রশ্ন উঠতে পারে একজন জাস্টিস কিভাবে নিজেকে মিডিয়ার সামনে নিয়ে আসেন? সেই বিষয়ে অবশ্য তিনি পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন, যে তিনি যেহেতু জাস্টিস সেহেতু তিনি অনায্য বা নিয়ম বহির্ভূত কোনো কাজ করবেন না। তিনি এই বিষয়ে জাস্টিস দের নিয়ে ব্যাঙ্গালোর আইন সম্পর্কে উল্লেখ করেন। এখানে বলা আছে যে জাস্টিস দেরও বাক স্বাধীনতার অধিকার থাকে তবে তা অবশ্যই আইন সম্পর্কিত হতে হবে।
তিনি জানালেন তাঁর শৈশব কালের কথা। অল্প বয়সেই পিতৃবিয়োগ হওয়ায় সংসারের বাড়তি চাপ যে পড়াশোনার প্রতি কতটা প্রভাব ফেলে তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন জাস্টিস অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সুতরাং সেই মায়ের সন্তান ছোট্ট অভিজিৎ থেকে আজকের মহামান্য বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় মহাশয় হয়ে ওঠা খুব একটা সহজ ছিল না। কারণ তার কথায় তিনি বলেন যে তিনি সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্মাননি। যা করেছেন সবই কিছু মানুষের আশীর্বাদ নিয়ে নিজের ক্ষমতায়, বুদ্ধিবলে এবং অভিজ্ঞতায়।
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন সম্পূর্ণ বাংলা মাধ্যমের ছাত্র। পড়াশোনা অতটা গুরুত্ব দিয়ে করেননি তিনি। হাজরা ল’কলেজে তার ল’জীবনের পড়াশোনা শুরু। তার কথা অনুযায়ী তিনি তেমন একটা পড়াশোনা করতেন না প্রথম দিকে। পরে ধীরে ধীরে কিছু পড়ুয়া বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে তিনি পড়াশোনা শুরু করেন।
জাস্টিস গঙ্গোপাধ্যায় মাধ্যমিক পাস করেন 1979 সালে। একে একে পড়াশোনার পরে তিনি ডব্লিউবিসিএস পাস করে অফিসার হিসেবে চাকরি নেন উত্তরবঙ্গে। তার কাজ ছিল পাট্টা বিলি করার বিষয়গুলি তদন্ত করা কিন্তু সেখানে বেশ কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের চাপে তিনি অবশেষে সম্মানের দিকে তাকিয়ে চাকরি ছেড়ে দিয়ে আবার ফিরে আসেন। এরপর থেকে তিনি রীতিমতো আইন বিষয়ে প্র্যাকটিস করতে শুরু করেন।
অত বড় চাকরি ছেড়ে যখন তিনি ল প্র্যাকটিস করতে শুরু করেন তখন তার আশা ছিল এমনই যে তিনি বললেন দিনে 500 টাকা হলেও তাঁর চলবে কিন্তু সম্মান আর সততা তার কাছে আসল। তবে সেই অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আজ নিজের অধ্যাবসায় বলে হয়ে উঠেছেন খুবই জনপ্রিয় একজন জাস্টিস অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
ভারতীয় ডাক বিভাগে বিপুল সংখ্যক কর্মী নিয়োগ। আবেদন অনলাইনে। জানুন বিস্তারিত।
দীর্ঘ 10 বছরের অধিককাল ধরে এসএসসির (WBSSC, WBBPE Primary TET) হয়ে মামলা লড়েছেন। তাই শিক্ষা বিষয়ক যেকোন আইন সম্পর্কে যে তিনি অধিক অভিজ্ঞ সেটা বলা বাহুল্য। তিনি বলেন একসময় তিনি ও বেকার ছিলেন। বিকার যন্ত্রণা যে কতটা বেদনাদায়ক, তা তিনি উপলব্ধি করতে পারেন। বেকারদের যন্ত্রণায় চোখের জলে ভিজে যাওয়া বালিশের অভিজ্ঞতা তার নিজের ক্ষেত্রেও রয়েছে।
আইন বিষয়ে স্বচ্ছতা রাখতে তিনি সদা সতর্ক। এদিক ওদিক দেখলেই (WBSSC, WBBPE Primary TET) সাথে সাথে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়ে দেন জাস্টিস অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় মহাশয়। তিনি বার বার উল্লেখ করেন রাজ্যের শিক্ষা নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। তিনি আরো বলেছেন, যারা অসৎ উপায়ে চাকরি পেয়েছেন (WBSSC, WBBPE Primary TET) তাদের চাকরি চলে যাবে, কেউ আটকাতে পারবেনা।
তিনি বলেন, অন্য যে কোন চাকরির সাথে শিক্ষকতাকে (WBSSC, WBBPE Primary TET) মিলালে চলবেনা। শিক্ষক হলেন ন্যায় গড়ার কারিগর। এই শিক্ষক নিয়োগে যদি দুর্নীতি হয় তাহলে সেই সকল দুর্নীতিবাজ শিক্ষকেরা ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা শেখানোর ব্যাপারে আগ্রহী কি করে হবেন? তারা শেখাবেন কি করে টুকতে হয়।
সম্প্রতি তার নির্দেশেই টেট পরীক্ষায় ৭টি প্রশ্নের ভুল মামলায় তার তাই বলেই আজ ডাক পেয়েছেন ১৮৭ জন টেট পাস করা পরীক্ষার্থী। তিনি এই বিষয়ে বলেন এই ১৮৭ জনের চাকরি ন্যায্য চাকরি। পুজোর আগে এই চাকরি এদের প্রত্যেকের পরিবারে কত খুশির জোয়ার এনে দেবে, তা তিনি অনুভব করতে পেরেছেন। বছরেও পুজোর আগে প্রায় ১২০০ জনের চাকরি মিলেছিল এভাবেই।
এই মহামানব জাস্টিস অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সাধারণ মানুষের মনে একটা বিশ্বাস (WBSSC, WBBPE Primary TET) আবার জাগিয়ে তুলেছেন যে, ন্যায় এবং সত্য এখনো ভারতবর্ষের বিরাজমান। তার জন্যই এক শিক্ষিকা তার বিগত ২৫ বছরের বেতন ১০ শতাংশ সুদ সমেত ফেরত পেয়েছেন। তিনি নজিরবিহীন রায় ঘোষণা করেন। সত্য কে হাতিয়ার করে ন্যায় বিচার করাই তার একমাত্র লক্ষ্য।
প্রাইমারী টেট নিয়ে অবশেষে জল্পনার অবসান, হবু শিক্ষকদের সুখবর।
তিনি আরও একটি বেশ ভালো কথা বলেছেন। সরকারি দপ্তরের অফিসারেরা যেন খারাপ ব্যবহার করবেন এটাই তাদের স্বভাব পরিচয়। তবে তিনি বলেছেন, যদি কেউ লুকায়িত ক্যামেরায় এই দৃশ্য ভিডিও করে মামলা করেন তাহলে সেই অফিসারের চাকরি (WBSSC, WBBPE Primary TET) পর্যন্ত চলে যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, রাগ মানুষের হতে পারে। তাই রেগে গিয়ে কিছু বললে পরবর্তীতে ক্ষমা প্রার্থনা করে নেওয়াই শ্রেয়।
তিনি অনেকটা মজার ছলেই বলেন, “আগে বাড়িতে পুলিশ এলে তিনি আতঙ্কিত হতেন এই ভেবে যে তিনি আবার কি দোষ করলেন? কেন পুলিশ এল? এখনো আতঙ্কিত হন তবে এটা ভেবে যে পুলিশ কেন এলোনা।” এটাই তার সবথেকে বড় পাওনা। তার বড় আক্ষেপ, দেশের বিচার ব্যবস্থার পরিকাঠামোর দিকে সরকারের নজর দেওয়া উচিত।
এমন একটি মানুষ মহামান্য বিচারপতি জাস্টিস অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যিনি সততার সত্তিকারের প্রতীক। তার যুক্তিসম্পন্ন সত্যের পথে থেকে রায় (WBSSC, WBBPE Primary TET) অনেক মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে।মানুষের মনে এক নতুন আশা জাগিয়েছে দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি। এমন খবর পেতে আমাদের সাথে থাকুন। ধন্যবাদ।
Written by Mukta Barai.