পশ্চিমবঙ্গ সরকারের (Government of West Bengal) লক্ষ্মীর ভাণ্ডার (Lakshmir Bhandar), কৃষক বন্ধু (Krishakbandhu), কন্যাশ্রী প্রকল্প (kanyashree) হলো তিনটি মাস্টারস্ট্রোক। শুধু ভোট বৈতরণী পারই নয়, এই ৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে উপক্রিত হচ্ছেন কোটি কোটি মানুষ। এর সাথে পশ্চিমবঙ্গের অনুকরণে লাডলি বেহেন যোজনা, লাড়িকি বহিন যোজনা প্রভৃতি প্রকল্প চালু করে মহিলা ও মেয়েদের আর্থিক সাহায্য করছে, একাধিক রাজ্য সরকার। তবে বর্তমানে রাজ্যের আর্থিক অবস্থার জন্য এই প্রকল্প গুলোতে বরাদ্দ কমানোর সিদ্ধান্ত। যার ফলে নতুন আবেদন ও প্রকল্পের টাকা বাড়ানো নিয়ে সংশয় রয়েছে।
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কৃষক বন্ধু, কন্যাশ্রী প্রকল্পের বরাদ্দ কমলো
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা আনতে নতুন নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। এই নির্দেশিকার মাধ্যমে বিভিন্ন দফতরের প্রকল্পের জন্য খরচের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো রাজ্যের কোষাগারের উপর চাপ কমানো এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা। নবান্ন সূত্রে জানা গেছে, কিছু দফতর বাজেটের সীমা লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত খরচ করছিল। এই পরিস্থিতিতে আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। নিম্নে এই নির্দেশিকার বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
নতুন খরচের সীমা নির্ধারণ
রাজ্য সরকার বিভিন্ন দফতরের জন্য খরচের ঊর্ধ্বসীমা পুনর্নির্ধারণ করেছে। এই সীমা কমানোর ফলে কোষাগারের উপর চাপ কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। বড় দফতরগুলোর জন্য পূর্বের ৫ কোটি টাকার সীমা এখন ৩ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নের মতো দফতরের জন্য সীমা ১ কোটি টাকা নির্ধারিত হয়েছে। অন্যান্য দফতরের জন্য ৫০ লক্ষ থেকে ৭৫ লক্ষ টাকার মধ্যে সীমা ধার্য করা হয়েছে। এই নিয়ম কার্যকর হলে বাজেট ব্যবস্থাপনা আরও সুশৃঙ্খল হবে।
প্রধান দফতরের জন্য নতুন বাজেট সীমা
পুর্ত, সেচ, পঞ্চায়েত, স্বাস্থ্য ও নগরোন্নয়নের মতো প্রধান দফতরগুলোর জন্য খরচের সীমা ৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই দফতরগুলো রাজ্যের উন্নয়নমূলক কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পূর্বে এই দফতরগুলো ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ করতে পারত। নতুন সীমা কার্যকর হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় আরও কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এই পদক্ষেপ কোষাগারের সম্পদের অপচয় রোধ করবে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।
আরও পড়ুন, PNB ব্যাংকের গ্রাহকদের জন্য সুখবর। একাউন্ট থাকলে দেখুন!
আঞ্চলিক উন্নয়ন দফতরের খরচের সীমা
উত্তরবঙ্গ, সুন্দরবন এবং পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের জন্য খরচের সীমা ১ কোটি টাকা করা হয়েছে। পূর্বে এই দফতরগুলোর সীমা ছিল ৩ কোটি টাকা। এই কমানোর ফলে আঞ্চলিক উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ব্যয় আরও নিয়ন্ত্রিত হবে। সরকারের লক্ষ্য হলো এই অঞ্চলগুলোর উন্নয়ন অব্যাহত রাখা। তবে, বাজেটের সীমাবদ্ধতার কারণে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। এই নির্দেশিকা অঞ্চলভিত্তিক প্রকল্পে স্বচ্ছতা বাড়াবে।
অন্যান্য দফতরের জন্য নির্দিষ্ট সীমা
আবাসন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের জন্য বাজেট ৭৫ লক্ষ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাকি সব দফতরের জন্য সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই সীমা নির্ধারণের ফলে ছোট দফতরগুলোর খরচও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। প্রকল্পের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে আরও দক্ষতা আনা সম্ভব হবে। সরকারের এই পদক্ষেপ বাজেটের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করবে। এটি রাজ্যের আর্থিক স্বাস্থ্যের জন্য ইতিবাচক হবে।
কেন এই নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন?
রাজ্য সরকার বর্তমানে একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলেছে। ১০০ দিনের কাজ, গ্রামীণ সড়ক এবং আবাসন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় তহবিল বন্ধ হওয়ায় রাজ্যকেই খরচ বহন করতে হচ্ছে। এছাড়া, ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ এবং ‘কন্যাশ্রী’-এর মতো জনপ্রিয় সামাজিক প্রকল্পগুলো কোষাগারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। এই প্রকল্পগুলো রাজ্যের সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ জরুরি হয়ে পড়েছে। সরকারের লক্ষ্য হলো কোষাগারের ভারসাম্য বজায় রাখা।
আরও পড়ুন, মেয়েরা ১১০০০ টাকা পর্যন্ত দিচ্ছে এই প্রকল্পে। যোগ্যতা, বয়স ও আবেদন পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিন
সামাজিক প্রকল্পের চাপ
‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ এবং ‘কন্যাশ্রী’ রাজ্যের সামাজিক কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই প্রকল্পগুলো নারী ক্ষমতায়ন এবং শিক্ষার প্রসারে সহায়ক। তবে, এগুলোর জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করতে হয়। এই খরচ কোষাগারের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। সরকার এই প্রকল্পগুলো অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু, আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে খরচ নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য।
প্রকল্পের অনুমোদন প্রক্রিয়া
নতুন নির্দেশিকায় প্রকল্পের ছাড়পত্রের জন্য কঠোর নিয়ম চালু করা হয়েছে। প্রতিটি প্রকল্পের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরের উপদেষ্টার অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়া প্রকল্পের ব্যয় এবং কার্যকারিতা পর্যালোচনা করবে। ফলে, অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানো সম্ভব হবে। এই নিয়ম আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা বাড়াবে। সরকারের এই পদক্ষেপ দীর্ঘমেয়াদে কোষাগারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।
বরাদ্দ কমার কারণে প্রকল্পের টাকা দেওয়া বন্ধ হবে না তো?
রাজ্য সরকারের নতুন নির্দেশিকায় খরচের ঊর্ধ্বসীমা কমানো হলেও প্রকল্প বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা কম। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো বাজেটের সঠিক ব্যবহার ও আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা, প্রকল্প বাতিল করা নয়। সরকার জনকল্যাণমূলক প্রকল্প যেমন ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ ও ‘কন্যাশ্রী’ অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রকল্পের ছাড়পত্রে উপদেষ্টার অনুমোদন বাধ্যতামূলক করায় অপ্রয়োজনীয় খরচ কমবে, তবে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো চলবে। কেন্দ্রীয় তহবিলের ঘাটতি মেটাতে রাজ্য নিজস্ব তহবিল ব্যবহার করছে। ফলে, বরাদ্দ কমলেও প্রকল্পের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন, লটারি জেতার ফর্মুলা আবিষ্কার করলেন দুই অধ্যাপক। এই লটারি জেতার গোপন সুত্র শিখলেই ১০০ শতাংশ জিতবেন
উপসংহার
রাজ্য সরকারের এই নতুন নির্দেশিকা আর্থিক ব্যবস্থাপনায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। খরচের সীমা নির্ধারণ এবং প্রকল্পের অনুমোদন প্রক্রিয়া কঠোর করার মাধ্যমে কোষাগারের উপর চাপ কমানো সম্ভব হবে। ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ এবং ‘কন্যাশ্রী’-এর মতো সামাজিক প্রকল্প অব্যাহত রাখতে এই নিয়ম সহায়ক হবে। তবে বরাদ্দ কমানোর কারণে নতুন আবেদন প্রক্রিয়া ধীর গতিতে হবে। এবং প্রকল্পের টাকা বাড়ানোর সম্ভাবনা কমতে পারে। তবে বিধান সভা ভটের আগে প্রকল্পের টাকা বাড়তে পারে বলেই শোনা যাচ্ছে।