দিন দিন রাজ্যে Dearness Allowance তরজা বেড়েই চলেছে। সম্পূর্ণ ডিপার্ট্মেন্টাল ইস্যু থেকে এখন রাজনৈতিক ও সাধারণ বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। সাধারন মানুষ ও এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশ যে হারে DA দাবি করছেন, সেই হারেই সরকারকে ডিএ মেটাতে হবে। এই দাবী নিয়েই রাস্তায় বসে ধরনা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। কলকাতায় বিক্ষোভ মিছিল দিয়ে শুরু করেছিল সরকারি কর্মচারীদের একাংশের সংগঠন যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ। আর তারপর শহীদ মিনার চত্বরে বসে অবস্থান বিক্ষোভ চালাতে শুরু করে।
আর সেখান থেকেই একের পর এক লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করতে থাকে তারা। দীর্ঘদিন ধরেই বকেয়া Dearness Allowance এর দাবিতে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশ লড়াই আন্দোলন করছে। এতদিন সেই লড়াই আন্দোলন ছিল আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে। হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল তারা। হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে বকেয়া Dearness Allowance মেটানোর নির্দেশ দিলেও সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার। এখনো পর্যন্ত শুনানি শুরু হয়নি সুপ্রিম কোর্টে। আগামী ১৫ই মার্চ সেই DA মামলার শুনানি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। আর এরই মধ্যে রাস্তায় অনির্দিষ্ট কালের জন্য পথে বসেছেন কর্মীরা। তার সাথে কর্ম বিরতি। আর অফিসে গিয়েও কাজ করছেন না কর্মীদের একাংশ।
আর এর মধ্যেই সরকারি কর্মচারীদের একাংশের সংগঠন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের তরফে কখনো কর্মবিরতি, কখনো পেন ডাউন, কখনো বিক্ষোভ মিছিল, কখনো গণছুটি, এরকম একটার পর একটা আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হচ্ছে। পঞ্চায়েত ভোটের (Panchayat Election) আগে সরকারি কর্মচারীদের একাংশের সংগঠন সংগ্রামী মঞ্চের পক্ষ থেকে এই ধরনের আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া এক ধরনের কৌশল বলেই মনে করা হচ্ছে। আর এবার ভোট কর্মীরা Dearness Allowance না দিলে ভোটের ডিউটি করবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
আর যখন তাদের Dearness Allowance আন্দোলন চলছে, তার মধ্যেই রাজ্য বাজেট (State Budget) পেশ হয়। সেই বাজেটে রাজ্যের অর্থ দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৩ শতাংশ DA ঘোষণা করেন। মার্চ মাস থেকেই সেই DA লাগু হয়ে যাবে বলে জানান তিনি। তবে ৩৯% এর বদলে এই পরিমাণ Dearness Allowance এ একেবারেই সন্তুষ্ট নয় সরকারি কর্মচারীদের একাংশ। যারা রাস্তায় বসে আন্দোলন করছেন, নিজেদের দপ্তরের কাজকর্ম শিকেয় তুলে দিয়ে আবদার জানিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, তারা এই ৩ শতাংশ Dearness Allowance বা ডিএ তে একেবারেই খুশি হতে পারেননি।
আর এর পরই যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের পক্ষ থেকে ২০ এবং ২১ ফেব্রুয়ারি রাজ্যজুড়ে সরকারী কর্মচারীদের কর্মবিরতির (Full Day Strike) ডাক দেওয়া হয়। আর এই কর্মবিরতির ডাক দিতেই স্বাভাবিকভাবে রাজ্য সরকারের তরফে কড়া বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। সেখানে জানানো হয়েছে, এই দুইদিন কোনো জরুরী কারণ ছাড়া কোনো রাজ্য সরকারি কর্মচারী নিজের দপ্তরে উপস্থিত না থাকলে সেই ছুটিকে ব্রেক ইন সার্ভিস (Break in Service) বলে বিবেচনা করা হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে শোকজ করা হবে। শোকজ এর সঠিক জবাব না পাওয়া গেলে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
Dearness Allowance Agitation:
সরকারি কর্মচারীদের একাংশের এই ধরনের কর্মবিরতি প্রসঙ্গে তৃণমূল রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের চেয়ারম্যান মানস ভূঁইয়ার কথায়, বকেয়া Dearness Allowance এর দাবিতে সরকারি কর্মচারীদের একাংশ যে ধরনের আন্দোলন কর্মসূচি চালাচ্ছে, সেটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই ধরনের আন্দোলনের পিছনে সিপিআইএম, বিজেপি এবং কংগ্রেসের চক্রান্ত রয়েছে। পাশাপাশি, মানস ভূঁইয়া সরকারি কর্মচারীদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য বলেন। রাজ্যের আর্থিক সংস্থান ঠিক হয়ে গেলেই সরকারি কর্মচারীদের সমস্ত বকেয়া Dearness Allowance মিটিয়ে দেওয়া হবে। সরকার DA দেবে না এ কথা বলেনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহানুভূতিশীল। আদালতে কেস চলছে। গত ৩৪ বছরের সিপিআইএমের রাজত্বের পরে যে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার দেনা রয়েছে রাজ্যের, সেই চাপ নিয়েও সরকার রাজ্যের সাধারণ মানুষের জন্য বহু জনকল্যাণমূলক প্রকল্প রচনা করে বাস্তবায়িত করছে। যার ফলে রাজ্যবাসী উপকৃত হচ্ছেন।
মানস ভূঁইয়া এরপরেই পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন সরকারি কর্মীদের উদ্দেশ্যে, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে বঞ্চনা করছে। বিভিন্ন প্রকল্পের কেন্দ্রীয় বরাদ্দের টাকা আটকে দিয়েছে। একশ দিনের কাজের টাকা, আবাস যোজনার টাকা, জিএসটির প্রাপ্য টাকা কিছুই রাজ্যকে দেওয়া হচ্ছে না। রাজ্য সরকারি কর্মীরা যারা পথে বসে এই আন্দোলন কর্মসূচি চালাচ্ছে, তারা কি ভেবেছে, কেন্দ্রীয় সরকার কত টাকা রাজ্য সরকারকে দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে? কেন্দ্র রাজ্যের সমস্ত বকেয়া মিটিয়ে দিক, রাজ্যের আর্থিক অবস্থা স্বাভাবিক হোক, সকলের মতো কর্মীরাও পাওনা পেয়ে যাবে।
একদম বিনামূল্যে 1 বছর ভ্যালিডিটি ও 87GB ডেটা দিচ্ছে Jio, সীমিত সময়ের অফার।
স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির মধ্যেও সরকারের তরফে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৩ শতাংশ DA ঘোষণা করা হয়েছে। আর তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে একের পর এক কর্মসূচি ঘোষণা করে সমস্যা সৃষ্টি করতে চাইছেন সরকারি কর্মচারীদের একাংশ, এরকমটাও মনে করছেন অনেকে। আর এই মুহূর্তে এই ধরনের আন্দোলনের পিছনে সিপিআইএম, বিজেপির যে সম্পূর্ণ প্ররোচনা রয়েছে, সেই বিষয়টি তৃণমূলের তরফে তুলে ধরা হচ্ছে। এবার রাস্তায় নেমে কাজকর্ম শিকেয় তুলে দিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশের এই ধরনের আন্দোলন কতটা ফলপ্রসূ হয়, সেটা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
Written by Rajib Ghosh.