পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মী ও পেনশনভোগীদের বেতন বৃদ্ধি ও পেনশন ও মহার্ঘ ভাতা (Dearness Allowance) নিয়ে একাধিক নির্দেশিকা প্রকাশ করলো পশ্চিমবঙ্গ অর্থ দপ্তর তথা West Bengal Finance Department. এছাড়া একাধিক দপ্তরের চুক্তি ভিত্তিক কর্মীদের ও বহুদিন পর বেতনবৃদ্ধির বিজ্ঞপ্তি (Salary Hike) প্রকাশিত হলো। যার জেরে বকেয়া ডিএ নিয়ে বহু অভিযোগ থাকলেও সুপ্রিম কোর্টে ডিএ মামলা শুনানি সংক্রান্ত আপডেট এসেছে। সেই সাথে সরকারি কর্মী ও পেনশন গ্রাহকদের বেতন ও পেনশন প্রক্রিয়া আরও সুষ্ঠু ও দ্রুত করার লক্ষ্যেও একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কর্মচারী সুবিধা (Employee Benefits) সংক্রান্ত একাধিক আপডেট বিস্তারিত জেনে নিন।
সরকারি কর্মীদের পেনশন ও বেতন বৃদ্ধি
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মী, চুক্তিভিত্তিক কর্মী ও পেনশনভোগীদের একাধিক বিষয় নিয়ে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কর্মচারী সুবিধা ও সুবিধাব্যবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। এসব সুবিধার মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীরা যেমন তাদের আর্থিক সুরক্ষা পাচ্ছেন, তেমনি তাদের কাজের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, গতিশীলতা এবং দ্রুততর সেবা নিশ্চিত হচ্ছে।
১. সুপ্রিম কোর্টে মহার্ঘ ভাতা মামলার শুনানি
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ডিএ বৃদ্ধি (Dearness Allowance) সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হতে যাচ্ছে আগামী ১৪ মে। রাজ্য সরকারি কর্মীদের দাবি, সরকার তাদের AICPI হারে ডিএ বৃদ্ধি (DA Hike) বাস্তবায়ন করেনি এবং আদালত নির্দেশ দেওয়ার পরও রাজ্য সরকার সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে রিভিউ পিটিশন করেছে।
বকেয়া DA পরিশোধের দাবি
সরকারি কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের বকেয়া DA না পাওয়ার কারণে তাদের আর্থিক বঞ্চনা ক্রমে চরমে উঠছে বলে দাবি উঠছে। এদিকে বছরের পর বছর আদালতে মামলা ঝুলে রয়েছে। এদিকে কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মীদের একপ্রস্থ ডিএ ঘোষণা হলেও, পশ্চিমবঙ্গের কর্মীরা ব্রাত্য। আর কেন্দ্র ও রাজ্যের সঙ্গে ডিএ এর ফারাক ক্রমে ক্রমে বেড়েই চলেছে।
এই মামলার রায় যদি রাজ্য সরকারের পক্ষে আসে, তাহলে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীরা রাজ্যের ইচ্ছেমতো ডিএ ঘোষণা হবে। আর সরকারি কর্মীদের পক্ষে গেলে কেন্দ্রীয় মূল্যবৃদ্ধি সূচক হারে বকেয়া DA পাবেন। তাই আগামী ১৪ই মে এই মামলার শুনানির দিন কর্মীদের ভবিষ্যৎ কোনদিকে যায়, সেই অপেক্ষায় চেয়ে রয়েছেন লাখ লাখ সরকারি কর্মচারী। যদিও সেই ২০১৬ সাল থেকে মামলা চললেও বস্তুত দাবি অনুযায়ী দিএ মিলছে না। শুধু মিলছে তারিখ পে তারিখ। তবুও আদালতের উপর আস্থা রেখে অপেক্ষায় রয়েছেন সকলে।
আরও পড়ুন, পশ্চিমবঙ্গে জরুরী পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মীদের ছুটি বাতিল। কোন কোন ছুটি ভেস্তে গেল?
২. ডিজিটাল স্যালারি ও পেনশন ব্যবস্থা
পশ্চিমবঙ্গ সরকার সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও অবসরকালীন ভাতা ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিশোধের উদ্যোগ নিয়েছে। এই নতুন ব্যবস্থা অনুসারে, সরকারি কর্মচারীরা এখন থেকে ডিজিটাল বিলের পদ্ধতিতে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মাসিক Salary এবং Pension পাবেন। যদিও IOSMS ও HRMS Portal এর মাধ্যমে অনেক আগের থেকেই এই ব্যবস্থা চালু হয়েছিলো। তবে বিভিন্ন দপ্তরে ম্যানুয়াল পদ্ধতি চালু থাকার ফলে একবার এরিয়ার আটকে গেলে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হতো। যেমন ROPA 2019 এর এরিয়ার এখনও অনেক কর্মীরা পাননি। নতুন পদ্ধতির ফলে এই দেরি আর হবে না। এই পদ্ধতির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো:
- প্রযুক্তির ব্যবহার: স্যালারি ও পেনশন পরিশোধের কাজ ডিজিটাল মাধ্যমে হবে
- সময় সাশ্রয়ী: এর ফলে সময় এবং শ্রমের সাশ্রয় করবে।
- স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতা: ডিজিটাল সিস্টেমের মাধ্যমে কর্মচারীদের পেমেন্টে বিলম্বের হার কমবে।
- এই উদ্যোগের ফলে সরকারের প্রতি কর্মচারীদের আস্থা বাড়বে
- পেমেন্টের ক্ষেত্রে কোনরূপ অনিয়ম বা ভুলের সম্ভাবনা থাকবে না
- এতে কর্মচারীদের সুরক্ষা ও সুবিধা বৃদ্ধি পাবে।
৩. চুক্তিভিত্তিক ড্রাইভারদের ৩৮ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন বৃদ্ধি
পশ্চিমবঙ্গ সরকার কিছু বিশেষ শ্রেণির সরকারি কর্মচারীর জন্য একসাথে সর্বোচ্চ ৩৮ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতনবৃদ্ধি ঘোষণা করেছে। বিশেষত, কিছু চুক্তিভিত্তিক ও উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের জন্য এই বেতনবৃদ্ধি ঘোষণা করা হয়েছে।
- পুরসভা, পর্ষদ বা অন্যান্য সরকারি দফতরে নিযুক্ত চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের বেতন ১৩৫০০ টাকা থেকে ১৬০০০ টাকা করা হয়েছে।
- সরকারি চুক্তিভিত্তিক গাড়ির চালক বা ড্রাইভারদের বেতন অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বৃদ্ধি পাবে।
ড্রাইভারদের বেতন বৃদ্ধির হার
- প্রথম ৫ বছর: বেতন থাকবে ১৬,০০০ টাকা
- ৫ বছরের অভিজ্ঞতা: বেতন হবে ২০,০০০ টাকা
- ১০ বছরের অভিজ্ঞতা: বেতন হবে ২৫,০০০ টাকা
- ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা: বেতন হবে ৩১,০০০ টাকা
- ২০ বছরের অভিজ্ঞতা: সর্বোচ্চ বেতন ৩৮,০০০ টাকা
বেতনবৃদ্ধির উদ্দেশ্য
এই বেতনবৃদ্ধি সরকারি কর্মচারীদের আর্থিক অবস্থান উন্নত করবে, যা তাদের কাজের প্রতি আরও বেশি উৎসাহিত করবে। যদিও দাবি অনুযায়ী সুযোগ সুবিধা বাড়েনি বলে আক্ষেপ, কর্মীদের একাংশের মধ্যে।
বেতনের নতুন স্তর:
উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা তাদের পুরানো বেতনের সাথে এই নতুন বৃদ্ধি পাবেন, যা তাদের মাসিক আয়ের একটি বড় অংশ হিসেবে কাজ করবে। রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপ কর্মচারীদের আর্থিক সুরক্ষা বৃদ্ধি করবে এবং সরকারি দফতরগুলোর কর্মক্ষমতা ও মনোবল আরও উন্নত করবে।
আরও পড়ুন, পোস্ট অফিসে 2 লাখ রাখলে 6 লাখ টাকা পাবেন! নতুন স্কিম সম্পর্কে জেনে নিন।
উপসংহার
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে যে উদ্যোগগুলো নেওয়া হয়েছে, তা সরকারি কর্মচারী, পেনশনভোগী এবং চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের জন্য অত্যন্ত লাভজনক। বিশেষ করে DA মামলার শুনানি, ডিজিটাল স্যালারি ও Pension ব্যবস্থা এবং বেতনবৃদ্ধি এই তিনটি পদক্ষেপ কর্মচারীদের জীবনে একটি বড় পরিবর্তন নিয়ে আসবে। এর মাধ্যমে শুধু কর্মচারীদের আর্থিক পরিস্থিতি উন্নত হবে না, বরং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজের গতি এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে। রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগগুলি কর্মচারীদের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা ও যত্নের পরিচয় দেয়, যা রাজ্যের প্রশাসনিক দক্ষতাকেও আরও শক্তিশালী করবে।