বর্তমানে সমস্ত সঞ্চয় প্রকল্পের মধ্যে পোষ্ট অফিসের জাতীয় সঞ্চয়পত্র বা NSC ও কিষাণ বিকাশ পত্র (Kisan Vikash Patra), সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা দেশের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রকল্প। এই প্রকল্পে সুদ যেমন বেশি, তেমনি কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্প বিধায় সমস্ত জনগনের আস্থা ও নিরাপত্তার প্রতীক। কিন্তু সেই পোস্ট অফিসের এই সঞ্চয় প্রকল্পে যদি মেয়াদ উত্তীর্ণ বা Matured হয়ে যাওয়ার পরও টাকা না পাওয়া যায়, বা গ্রাহকদের টাকা দিতে টালবাহানা করে, সেক্ষেত্রে ভোগান্তি ও আক্ষেপের সীমা থাকে না। আর সেই ঘটনাই সাম্প্রতিক বিভিন্ন যায়গায় ঘটেছে। যার ফলে স্বভাবতই চিন্তা বেড়েছে বিনিয়োগকারী তথা পোস্ট অফিসের গ্রাহকদের মধ্যে।
Unable to withdraw money in Post Office Kisan Vikash Patra and NSC Scheme
চাঞ্চল্যকর কান্ড! পোস্ট অফিসে জাতীয় সঞ্চয়পত্র বা NSC Scheme ও কিষাণ বিকাশ পত্র (Kisan Vikash Patra) প্রকল্পে টাকা জমা করেছিলেন। টাকা ম্যাচিওরড হয়ে হাতে পেয়ে যাবার কথা। সেখানে জানানো হচ্ছে টাকা নাকি দেওয়া যাবেনা। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্য। যার জেরে পোস্ট অফিসের গ্রাহকদের একাংশের চিন্তা ও হয়রানি বেড়েছে। বিস্তারিত জেনে নিন।
দক্ষিণ কলকাতার এক পোস্ট অফিসে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এরকম একটি ঘটনা নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা রাজ্যে। আপনারও কি পোস্ট অফিসে অ্যাকাউন্ট আছে? তবে সাবধান! এমন দুর্নীতি ঘটতে পারে আপনার সাথেও। বিপদ এড়াতে চাইলে খবরটি মন দিয়ে পড়ে সতর্ক হয়ে যান।
Kisan Vikash Patra in Post office
কিষান বিকাশপত্র কিনেছিলেন নারায়ণ দাস। মেয়াদ শেষে তিনি Kisan Vikash Patra ও জাতীয় সঞ্চয় প্রকল্পের নথি নিয়ে পোস্টাল এজেন্ট মারফত ডাকঘরে যোগাযোগ করেন। কিন্তু ডাকঘরের থেকে তাঁকে জানানো হয়, তাঁর টাকা পাওয়া যাবে না! পোস্ট অফিস কর্তৃপক্ষ জানান, অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যার কারণে টাকা প্রদান সম্ভব হচ্ছে না। তাঁকে আরও জানানো হয় যে, সমস্যা সমাধানে দুই থেকে তিন মাসও লাগতে পারে।
নারায়ণ দাস হতভম্ব হয়ে পোস্টাল এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, যিনি আরও উদ্বেগজনক তথ্য দেন। তাঁর পরিচিত এক গ্রাহক গত বছর পুজোর সময় ১০ বছরের ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট (NSC) জমা করেছিলেন, কিন্তু এখনও টাকা পাননি। ফলে সেভিংস অ্যাকাউন্টের সুদ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে গ্রাহকদের, যদিও স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের ঘোষিত লোভনীয় হারের সুদ (Post Office Interest rate) মিলছে না।
আরও পড়ুন, নতুন প্রকল্পে ৬০০০ টাকা পাবেন, পুরুষ মহিলা সকলেই আবেদন করুন।
এই সমস্যা শুধুমাত্র দক্ষিণ শহরতলির পোস্ট অফিসে সীমাবদ্ধ নয়। রাজ্যজুড়ে হাজার হাজার গ্রাহক একই সমস্যায় জর্জরিত। মাসের পর মাস ধরে নিজেদের সঞ্চিত অর্থ আটকে আছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে, এখন অনেকেই পোস্ট অফিসে টাকা রাখতে ভয় পাচ্ছেন। বিয়ে, চিকিৎসা বা জরুরি কোনও কাজে যাঁদের টাকা দরকার, তাঁরা পোস্ট অফিসের এই সমস্যার কারণে বিপাকে পড়ছেন।
এদিকে গতকাল অর্থাৎ সোমবার বারাসাত কদম্বগাছী পোস্ট অফিসে ও টাকা দিতে না পারায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন গ্রাহকদের একাংশ। স্থানীয়দের থেকে জানা গেছে, এই পোস্ট অফিসে নাকি বহু গ্রাহকের টাকা দিতে পারছিলেন না সংশ্লিষ্ট পোস্ট মাস্টার। বিস্তারিত তথ্য ক্রমশ প্রকাশ্য। অন্যদিকে জলপাইগুড়ি, কামারপুকুর প্রভৃতি পোস্ট অফিসে টাকার যোগান অমিল থাকায় গ্রাহকেরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
যোগাযোগ ভবন সূত্রে খবর, ২০১৫ সাল নাগাদ পোস্ট অফিসগুলিতে কোর ব্যাংকিং সিস্টেম (সিবিএস) চালু হয়। দীর্ঘদিন ধরে ধাপে ধাপে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। সেই সময় যাঁরা সঞ্চয় প্রকল্প কিনেছিলেন, তাঁদের নথি সিবিএস ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করার দায়িত্ব ডাককর্মীদের উপর ছিল। পোস্ট অফিসের পরিভাষায় একে বলা হয় ‘মাইগ্রেশন’। অনেক ক্ষেত্রেই সেই কাজ সম্পন্ন হয়নি। ফলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ (Digital India Mission) উদ্যোগের আওতায় অনেক সঞ্চয় প্রকল্পের নথি এখনও ডিজিটাল ব্যবস্থার বাইরে রয়ে গিয়েছে। বিশেষত, ১০ বছরের এনএসসি বা কিষান বিকাশপত্র যাঁরা কিনেছিলেন, তাঁদের সমস্যাটি বেশি প্রকট হয়েছে। পর্যাপ্ত নথি সরবরাহ না হওয়ায় তাঁদের টাকা দেওয়া যাচ্ছে না।
ছোট পোস্ট অফিস বা সাব পোস্ট অফিসে গ্রাহকের আবেদন জমা পড়ার পর ফাইল হেড পোস্ট অফিসে যাচ্ছে। সেখান থেকে অনুমোদনের জন্য তা ডিভিশনে পাঠানো হচ্ছে। ডিভিশন থেকে ছাড়পত্র পেলে হেড পোস্ট অফিস হয়ে টাকা ছাড়ার অনুমোদন নিচুতলায় পৌঁছচ্ছে। এই গোটা প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন, স্টেট ব্যাংক গ্রাহকদের নতুন সঞ্চয় পত্র। অমৃত বৃষ্টি ফিক্সড ডিপোজিটে 444 দিনে পাবেন সর্বোচ্চ সুদ
গ্রাহকদের দাবি, ফাইল কবে কোথায় যাবে, তা সম্পূর্ণরূপে পোস্ট অফিসগুলির উপর নির্ভর করছে। ফলে সঠিক সময়মতো অর্থ প্রদান সম্ভব হচ্ছে না। যোগযোগ ভবনের কর্তারা জানিয়েছেন, হাজার হাজার অভিযোগের সমাধানে তাঁরা ব্যস্ত রয়েছেন। চিফ পোস্টমাস্টার জেনারেলের অফিস থেকে সমস্যাগুলির দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তবে কবে নাগাদ সমস্যা মিটবে, তা অনিশ্চিত।
যাই হোক, গ্রাহকদের অর্থ আটকে যাওয়ার এই সমস্যার দ্রুত সমাধান প্রয়োজন। পোস্ট অফিসগুলির দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ এবং কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ একান্ত জরুরি। সঠিক নথি সংরক্ষণ ও ডিজিটালাইজেশনের প্রক্রিয়ায় সঠিক নজরদারি না থাকলে ভবিষ্যতে আরও অনেক গ্রাহক এই ধরনের সমস্যায় পড়বেন।
Written by Nabadip Saha.
আরও পড়ুন, পোস্ট অফিসের এই স্কিমে প্রতিমাসে আয় করুন ২০,০০০ টাকা!