পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের মোট ১২টি রাজ্যে চলছে SIR (Special Intensive Revision) প্রক্রিয়া। আর বুথ স্তরে এই কাজটি করছেন BLO Officer রা। গত ১২ই নভেম্বর ২০২৫ তারিখে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের চিফ ইলেক্টোরাল অফিসারের দপ্তর (CEO) থেকে রাজ্যের প্রাইমারি ও হাইস্কুলের জেলা পরিদর্শকদের (DI) কাছে একটি অত্যন্ত জরুরী নির্দেশ এর ই-মেইল এসেছে। যেখানে SIR এর কাজে নিযুক্ত সকল অধিকারিক থেকে বুথ লেভেল অফিসারদের (BLO) দায়িত্ব ও কাজের সময়সীমা (Time Table) স্পষ্টভাবে লিখিত রয়েছে। যার ফলে একদিকে ফর্ম জমা ও তোলার কাজের সাথে অ্যাপ এ এন্ট্রির সমস্যার মধ্যে আবার নতুন দায়িত্বে কার্যত দিশেহারা শিক্ষক ও শিক্ষিকারা।
ECI New Guidelines for BLO Officers for SIR
নির্বাচন কমিশনের (Election Commission) সাম্প্রতিক ঘোষণা অনুসারে, BLO শিক্ষকদের SIR এর কাজের সুবিধার্থে আগামী ৩১ জানুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত On Duty দেওয়া হয়েছে, তার সাথে এই সমস্ত শিক্ষকদের স্কুল থেকে যেন স্কুলে আসতে বাধ্য না করে, সেটাও SI দের দেখতে বলা হয়েছে। এটি মূলত ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধনের (SIR) অংশ, যা ৪ নভেম্বর ২০২৫ থেকে শুরু হয়েছে। গত ১২ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন অফিসারের অফিস (CEO) থেকে এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। যার ফলে শিক্ষকরা স্কুলের ছুটির সময়ও নির্বাচন তালিকা সংশোধনের কাজে ব্যস্ত থাকবেন। এই সময়কালে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ এবং যাচাইয়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। ফলে, স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার মধ্যেই শিক্ষকদের জন্য বাড়তি চাপ বাড়লো।
ভোটার তালিকা সংশোধনে বাড়ি বাড়ি যেতে হবে
এসআইআর ২০২৬ এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ঘরে ঘরে সার্ভে করা। এবং আদৌ সেই ভোটারের অস্তিত্ব আছে কিনা, সেটা পরীক্ষা করা। কিন্তু অনেক জায়গা থেকে অভিযোগ আসছে BLO অফিসারেরা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন না। কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক ভোটারদের বাড়িতে যেতে হবে, ভোটার রা ফর্ম পূরণ করতে না পারলে, তাদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবেও অনুপস্থিত ভোটারদের জন্য নোটিশ জারি করতে হবে এবং ফর্ম সংগ্রহের ম্যানুয়াল রেকর্ড রাখতে হবে। এছাড়া BLO App এ সব তথ্য আপডেট করা বাধ্যতামূলক, যার মধ্যে ফটো আপলোডও অন্তর্ভুক্ত। তবে প্রশ্ন উঠছে, যে ভোটারের বাড়িই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তাকে কিভাবে যাচাই করতে হবে, আর নোটিশই বা কার কাছে দেবে?
ফর্ম জমা দেওয়ার পর কি করতে হবে?
SIR Form জমা নেওয়া ও আপডেটের পরও কিন্তু কাজ শেষ হচ্ছে না। ড্রাফট রোল প্রকাশের পর ৯ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে ৮ জানুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত দাবি-আপত্তির পর্যায় চলবে। এই সময়ে BLO অফিসারকে ভোটারদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে এবং সমস্যা সমাধান করতে হবে। তারপর ৯ ডিসেম্বর থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত শুনানি এবং যাচাইয়ের কাজে অফিসে উপস্থিত হয়ে করতে হবে। এই পর্যায়ে অফিস টাইমের বাইরেও কাজ করার প্রয়োজন হতে পারে। স্কুল ছুটি থাকলেও SIR এর কাজে তাদের নিযুক্ত থাকতে হবে।
বাধ্যতামূলক ফটো যাচাই
নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী ফটো যাচাইয়ের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। ভোটারদের দেওয়া ফটো যদি অস্পষ্ট বা মুখ স্পষ্ট না হয়, তাহলে বাড়িতে গিয়ে অ্যাপ দিয়ে নতুন ছবি তুলতে হবে। ডিসেম্বরের পর থেকে AI সফটওয়্যার ব্যবহার করে নকল বা ডুপ্লিকেট ফটো শনাক্ত করা হবে। ফটোর সত্যতা নিশ্চিত করা BLO Officer এর দ্বায়িত্ব। তাই কেউ যেন ভুল ফটো না দেয় সেটি দেখতে হবে। অন্যথায় শাস্তির সম্ভাবনা আছে। এই ব্যবস্থা নকল ভোটার প্রতিরোধে সাহায্য করবে।
আরও পড়ুন, আপনার SIR Enumeration Form অনলাইনে BLO জমা করেছে কিনা, এনুমারেশন ফর্মের স্ট্যাটাস দেখে নিন এইভাবে।
BLO App এর প্রচুর সার্ভার সমস্যা
এত কম সময়ে কাজের মধ্যে BLO Officer দের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো BLO App এ প্রচুর সার্ভার সমস্যা। এই রকম অ্যাপ দিয়ে ১ মাসের মধ্যে কিভাবে প্রত্যেকে ১২০০ এরও বেশি ভোটারের তথ্য আপডেট করবেন, সেই চিন্তায় ঘুম ছুটেছে অনেকে। অনেকেই সারাদিন এলাকায় কাজ করে, রাতভর অ্যাপ এ এন্ট্রি করছেন। যদি গভীর রাতে সার্ভার তা একটু ভালো পাওয়া যায়! তবে রাতেও, বার বার লগ আউট হয়ে যাচ্ছে, দিনে বার বার আপডেট আসছে, একেক সময়ে একেক রকম অপশন দেখাচ্ছে। কখনো ডেটা দেখাচ্ছে, কখনো ডেটা দেখাচ্ছে না, কখনো স্ক্যান হচ্ছে কখনও তালিকায় থাকা ভোটার কেও No record Found দেখাচ্ছে।
আরও পড়ুন, স্টেট ব্যাংকে প্রতিমাসে মাত্র ৩০০০ টাকা জমিয়ে, মেয়াদ শেষে পাবেন প্রায় ১১ লাখ টাকা।
আর ২০০২ সালের ভোটার তালিকার এন্ট্রিতে প্রচুর বানান ভুল ও অসম্পূর্ণ ডেটা আপলোড হয়েছে, যেটি ম্যাপিং করতে আরও বিভ্রান্ত হচ্ছে। এক কথায় এত বড় গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজে এই ধরনের অপেশাদারি অ্যাপ ম্যানেজমেন্ট দিয়ে কাজ করানো প্রায় ৮০০০০ BLO অফিসারদের আরও সমস্যায় ফেলে দিয়েছে। আর সব কিছুর মধ্যে এতো তাড়াহুড়ো, কি সত্যিই প্রয়োজন ছিলো, প্রশ্ন উঠছে সামাজিক মাধ্যমে।
উপসংহার
সব শেষে সাধারণ মানুষদের স্বার্থে এই SIR প্রক্রিয়ায় সাধারণ মানুষ থেকে নির্বাচনের কাজে যুক্ত সকলের প্রচেষ্টায় এই ভোটার তালিকা নির্ভুল হবে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করা সম্ভব। তাই দেশের প্রতিটি নাগরিকদের এই কাজে সহজগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়াই কাম্য। নির্বাচন তালিকা সংশোধন সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় কমিশনের সাথে যোগাযোগ করুন। এভাবে সবাই মিলে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাই।