Dearness Allowance – পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারী কর্মীদের কেন্দ্রীয় হারে 37% DA দেওয়ার কথা দিলেন।

পশ্চিমবঙ্গে বকেয়া ডিএ বা Dearness Allowance আন্দোলন নিয়ে সরকারী কর্মী তথা যৌথ মঞ্চের বিক্ষোভ, অবস্থান ও অনশন অব্যহত। আর তারই মধ্যে সেই আগুনে কার্যত রসদ যোগালেন বিজেপি সভাপতি। রাজ্য সরকারী কর্মীদের আন্দোলন ও ধর্মঘট কে কার্যত সমর্থন করে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন। আর এর ফলে নতুন করে গুঞ্জন শুরু হয়েছে বকেয়া মহার্ঘ ভাতা নিয়ে।

Dearness Allowance (কেন্দ্রীয় হারে ডিএ মহার্ঘ ভাতা)

বেতন বৃদ্ধি, ডিএ, পে কমিশন, যা চাইছেন সরকারি কর্মীরা তাই পাবেন, শুধু ক্ষমতায় বসিয়ে দিন, ঘোষণা বিজেপি সভাপতি সুকান্তের, আর কি বললেন।
কেন্দ্রীয় হারে বকেয়া Dearness Allowance এর আবদার মিটিয়ে দেবে গেরুয়া শিবির। শুধু রাজ্যের ক্ষমতা তুলে দিতে হবে বিজেপির হাতে। আর তাহলেই একেবারে কেল্লাফতে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের। তারা পেতে থাকবেন কেন্দ্রীয় হারে Dearness Allowance হ্যাঁ, এরকমটাই ঘোষণা করে দিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।

বকেয়া ডিএ মেটানোর দাবিতে প্রথমে আইনি লড়াই শুরু করেছিল রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশ। সেই আইনি লড়াইয়ে হাইকোর্ট সরকারি কর্মচারীদের DA দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয়। কিন্তু সেখানে হাইকোর্টে পাল্টা রিভিউ পিটিশন করা হয় রাজ্য সরকারের তরফে। সেখানে রাজ্যের কোষাগারের পরিস্থিতি জানিয়ে বক্তব্য পেশ করা হয়। কিন্তু তারপরেও হাইকোর্ট সেই রায় বহাল রাখে। এরপরই রাজ্য সরকারের তরফে হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে স্পেশাল লিভ পিটিশন (Special Leave Petition) দাখিল করা হয়। সুপ্রিম কোর্টে সেই মামলা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।

এখনো পর্যন্ত সেই মামলা শুরু হয়নি। আগামী ১৫ মার্চ শীর্ষ আদালতে বকেয়া DA মামলার শুনানি হতে পারে। কিন্তু যখন সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে, ঠিক সেই সময়েই রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশের সংগঠন যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের তরফে একেবারে রাস্তায় নেমে কাজকর্ম লাটে তুলে দিয়ে ধরনা বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কলকাতায় মিছিল দিয়ে সূত্রপাত এই বিক্ষোভ আন্দোলনের। আর তারপরেই শহীদ মিনার চত্বরে দীর্ঘদিন ধরে বসে রয়েছে যৌথ মঞ্চের সদস্যরা। তাদের দাবি আর কিছুই নয়, কেন্দ্রীয় হারে ডিএ মেটাতেই হবে রাজ্য সরকারকে। ৩৯ শতাংশ DA দিতে হবে।

আর এই পরিস্থিতির মধ্যেই রাজ্য বাজেট পেশ হয়। সেই বাজেটে রাজ্য সরকার ৩ শতাংশ ডিএ ঘোষণা করে। যা মার্চ মাস থেকে মোট ৬ শতাংশ DA লাগু করে দেওয়া হয়। কিন্তু খুশি হতে পারেনি রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশ। সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্যজুড়ে সাধারণ, গরিব, আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্প চলছে। যার ফলে তারা উপকৃত হচ্ছেন। এক্ষুনি সরকারি কর্মচারীদের দাবি অনুযায়ী DA মেটানো রাজ্যের পক্ষে সম্ভব নয়। বিশেষ করে যখন কেন্দ্রীয় সরকার বহু প্রকল্পের টাকা রাজ্য সরকারকে দিচ্ছে না। বঞ্চনা চালিয়ে যাচ্ছে লাগাতার।

এই প্রসঙ্গে একাধিকবার বলা হলেও কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উচ্চবাচ্য করা হচ্ছে না। অথচ এবার দেখা গেল, কেন্দ্রীয় সরকার যে দল পরিচালনা করছে, সেই ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্যের সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ঘোষণা করে দিলেন, বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় এলে ৫ থেকে ১০ বছর সময়সীমার মধ্যে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের কেন্দ্রীয় হারে DA দেওয়া শুরু হয়ে যাবে।

কোথায় ঘোষণা করলেন?
বুধবার মায়াপুরে ইসকন মন্দিরের দোলযাত্রা অনুষ্ঠানে যোগদান করে তিনি এই কথা জানালেন। সুকান্ত আরো বললেন, মাথা কাটার তো কোনো দরকার নেই। চেয়ারটা ছেড়ে দিলেই হয়। আমাদের ৫ থেকে ১০ বছর সময় দিলেই কেন্দ্রীয় হারে DA দেব। পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের আমরা DA দিতে পারব, এখনও বলছি। আমাদের সেই সুযোগ দেওয়া হোক। মুখ্যমন্ত্রীর পদে থেকে Dearness Allowance দিতে পারব না কথা বলে উনি অপদার্থতার নজির সৃষ্টি করছেন। সেই অপদার্থ মুখ্যমন্ত্রীর আর ক্ষমতায় থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো।

এর মধ্যেই কলকাতায় যেখানে চাকরিপ্রার্থীরা আন্দোলন করছিলেন, সেখানেও সুকান্ত মজুমদার যান। সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, চাকরিপ্রার্থীদের জীবনে রাজ্য সরকারের কারণেই অসহনীয় অবস্থা হয়ে উঠেছে। আন্দোলনকারীদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা যোগ্য, চাকরি টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয়ে গিয়েছে। আমরা ক্ষমতায় এলে ওদেরও চাকরির ব্যবস্থা করব। বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন, কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বেতনক্রম সম্পূর্ণ আলাদা। ১০৫% DA দেওয়া হচ্ছে। আর কত চাই? আমার মুন্ডু কেটে ফেললেও এর থেকে বেশি পাওয়া যাবে না।

আর মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই বিরোধী রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিজেপির তরফে ঘোষণা করা শুরু হয়ে গিয়েছে, ক্ষমতায় এলেই কেন্দ্রীয় হারে Dearness Allowance দেবে তারা। এবার সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, কখন ঘোষণা করা হচ্ছে? যখন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে আসতে এখনো কমবেশি ৩ বছর সময় বাকি রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। তার আগে ২০২৩ সালের একেবারে প্রথম দিকেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্তর এই বক্তব্যকে ঘিরে জল্পনা তৈরি হয়েছে। তাহলে কি তারা Dearness Allowance ইস্যুতে রাজ্যের নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে দিতে চাইছেন?

আরও পড়ুন, এই ব্যাংকে একাউন্ট থাকলে আগামী 6 মাস টাকা তুলতে পারবেন না।

কারণ এটুকু তো স্পষ্ট যে, এখনো পর্যন্ত রাজ্যে এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি, যে সরকার ত্যাগ করে তৃণমূল সরকারের বাইরে চলে যাবে। সেই পরিস্থিতি রাজ্যে আসেনি, যেখানে একটি নির্বাচিত রাজ্য সরকারকে বলপূর্বক ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দেওয়া হবে। ফলে এই মুহূর্তে সুকান্তর এই বক্তব্য প্রসঙ্গে জোরালো চর্চায় যে বিষয়টি উঠে আসছে সেটি হল, অনেকেই বলছেন, বিরোধিতার কারণেই এই মন্তব্য করে দিয়েছেন। এক্ষুনি এই কথার কোনো ভিত্তি নেই। দিন কয়েক আগেই বিরোধী দলনেতা এবং বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী DA আন্দোলনকারীদের মঞ্চে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনিও তাদের পাশে রয়েছেন বলে জানান। Dearness Allowance আন্দোলনকারীদের এই কর্মসূচিতে তার সমর্থন রয়েছে। সেখানে দাঁড়িয়েই রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেন শুভেন্দু।

ছুটি বাতিল (Government Employee Leave Cancelled)

দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশের সংগঠন যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ বকেয়া Dearness Allowance মেটানোর দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। কখনো পেন ডাউন, কখনো কর্ম বিরতি, এবার আগামী ১০ মার্চ রাজ্য জুড়ে স্কুল কলেজ সহ সমস্ত সরকারি দপ্তরে ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। যদিও নবান্নের তরফে সেই ধর্মঘট কড়া হাতে মোকাবিলা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। যদি কোনো রাজ্য সরকারি কর্মচারী উপযুক্ত কারণ ছাড়া ওই দিন নিজের দপ্তরে উপস্থিত না থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। যদিও Dearness Allowance আন্দোলনরত সরকারি কর্মচারীরা বলছেন, তারা আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। যতক্ষণ না পর্যন্ত তাদের দাবি পূরণ হয়। আর এই পরিস্থিতির মধ্যেই বিজেপির তরফে ঘোষণা করে দেওয়া হলো, ক্ষমতায় এলেই কেন্দ্রীয় হারে Dearness Allowance দেওয়া শুরু হয়ে যাবে।
Written by Rajib Ghosh.

শেয়ার করুন: Sharing is Caring!

Leave a Comment