নয়া দুইনতুন প্রকল্প ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর, বিরাট সুবিধা পাবেন বাংলার মানুষ, বিস্তারিত জানুন।
বাংলায় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল সরকার রাজ্যবাসীর জন্য একের পর এক জনমুখী সামাজিক নতুন প্রকল্প রচনা এবং বাস্তবায়িত করে চলেছে। সেই সমস্ত প্রকল্পের ফলে রাজ্যের সাধারণ, মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ যথেষ্টই উপকৃত হয়েছেন। যার ফল একাধিকবার নির্বাচনের বাক্সে প্রতিফলিত হয়েছে।
কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, ঐক্যশ্রী, লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, সমব্যথী, শিশুসাথী, তফসিলি জাতি/ উপজাতিদের জন্য পেনশন, লোকসংগীত শিল্পীদের নির্দিষ্ট ভাতা, যুবশ্রী, সবুজসাথী, খাদ্যসাথী, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মতো নতুন প্রকল্পের রাজ্যের নির্দিষ্ট পরিমাণ বরাদ্দসহ একাধিক প্রকল্প মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত। সম্প্রতি দুয়ারে সরকার কর্মসূচির মাধ্যমে এই নতুন প্রকল্পগুলি মানুষের দোরগোড়ায় পৌছে দেওয়ার যে প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে তা সর্বস্তরেই প্রশংসিত।
এবার সেই প্রকল্পগুলিতে রাজ্যের সমস্ত মানুষ সঠিকভাবে উপকৃত হচ্ছেন কিনা, সবাই এই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন কিনা, সেই দিকে লক্ষ্য রাখতেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে একদিকে সরকারি প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন, অন্যদিকে পঞ্চায়েত ভোটে যাতে রাজ্যের মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসের পাশেই থাকে, সেইদিকে নজর দিয়ে দুটি নতুন কর্মসূচির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও দুটি কর্মসূচি দলীয় স্তরে অর্থাৎ তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মসূচি।
তবুও যেহেতু শাসক দল তৃণমূল, তাই এই কর্মসূচি দুটির মাধ্যমে দলীয় স্তরের নেতা, কর্মী, সাংসদ, বিধায়ক, সমস্ত স্তরের জনপ্রতিনিধি, জেলা সভাপতি, জেলা সভাধিপতি, পঞ্চায়েত সমিতির সভাধিপতি, অঞ্চল প্রধানসহ সকলেই রাজ্যের সমস্ত এলাকার মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনসংযোগ করবেন এবং সরকারি প্রকল্প সম্বন্ধে অবহিত করবেন। এবার জেনে নেওয়া যাক, কর্মসূচি দুটি কি কি এবং তার বাস্তবে রূপায়ণ সম্পর্কে দলের তরফে কি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে:
মমতার নতুন প্রকল্পঃ
তৃণমূল কংগ্রেসের এই কর্মসূচি দুটির নাম হল দিদির সুরক্ষা কবজ এবং দিদির দূত।
প্রথমেই দিদির সুরক্ষা কবজ কর্মসূচি সম্বন্ধে একটু জেনে নেওয়া যাক:
২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের পরে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর দিদিকে বলো কর্মসূচির সূচনা করেছিলেন। সেই দিদিকে বলো কর্মসূচির মাধ্যমে সারা রাজ্য জুড়ে সমস্ত মানুষ তাদের যেকোনো ধরনের অভাব অভিযোগের কথা সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দিতে পারতেন এবং পরবর্তীতে সেই সমস্ত সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা হতো।
ঠিক একই ধাঁচে এবার দিদির সুরক্ষা কবজ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের রাজ্যস্তরের নেতা থেকে শুরু করে সাংসদ, বিধায়ক, জেলা সভাধিপতি, জেলা সভাপতি সহ সমস্ত নেতৃত্ব দলের ঠিক করে দেওয়া তালিকা অনুযায়ী রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ করবেন। সেখানে মধ্যাহ্নভোজ এবং নৈশভোজ করবেন। রাত্রিযাপন করবেন। সরকারি সমস্ত নতুন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করবেন।
সরকারি প্রকল্প বা আগামীর নতুন প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা দেখা দিলে স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে সেই অভাব অভিযোগ শুনে তা সমাধান করার চেষ্টা করবেন। দলের তরফে কোন নেতৃত্ব, কোন গ্রামে, কবে যাবেন, কতদিন থাকবেন, কিভাবে কর্মসূচি পালন করবেন, সমস্তটাই দলের তরফে নির্দিষ্ট জনপ্রতিনিধি বা নেতাকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
গ্রামে গিয়ে দলীয় নেতারা যে সমস্ত অভাব অভিযোগ শুনে রিপোর্ট তৈরি করবেন, সেই রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে জমা দেবেন। মূলত এটা দলীয় কর্মসূচি।
এবার জেনে নেওয়া যাক, দিদির দূত কর্মসূচি সম্বন্ধে:
প্রথম পর্যায়ে, দিদির সুরক্ষা কবজ কর্মসূচির সূচনা পর্বে দলের উচ্চ স্তরের নেতারা গ্রামীন এলাকায় গিয়ে জনসংযোগ করে পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের তরফে বার্তা দেবেন। ঠিক তারপরেই দিদির দূত কর্মসূচির সূচনা হবে। রাজ্যের গ্রাম পঞ্চায়েত, পুরসভা এলাকার সমস্ত বুথ থেকে ৪ থেকে ৫ জন করে দলীয় কর্মী নিয়ে এক একটি গ্রুপ তৈরি করা হবে। প্রতিটি গ্রুপের উপর দায়িত্ব থাকবে অন্ততপক্ষে সেই এলাকার ১০টি বাড়িতে গিয়ে মানুষের সঙ্গে সরকারি নতুন প্রকল্প নিয়ে কথা বলা।
কোনো অভিযোগ থাকলে তা মন দিয়ে শোনা। পরবর্তীতে সেই অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পৌঁছে দেওয়া। প্রতিটি বুথ থেকে যে সমস্ত দলীয় কর্মীদের দিদির দূত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তাদের হাতে একটি রিস্টব্যান্ড থাকবে, দিদির দূত ব্যাজ থাকবে এবং যে বাড়িতে তারা যাবেন, সেই বাড়িতে দিদির সুরক্ষা কবজ এর লোগো দরজায় লাগিয়ে দিয়ে আসবেন। স্বচ্ছ ভাবমূর্তির যে সমস্ত কর্মীরা দিদির দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের কাজ হবে প্রতিটি সরকারি নতুন প্রকল্প সম্বন্ধে মানুষের সামনে কথা বলা।
এছাড়াও যে বাড়িতে যাবেন তাদের দিদির দূত অ্যাপ ডাউনলোড করে দেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবেন। যাতে সেই ব্যক্তি দিদির দূত অ্যাপের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের মতামত জানাতে পারেন।
প্রথমেই কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, ঐক্যশ্রী, যুবশ্রী, সবুজ সাথী প্রকল্প সহ নতুন প্রকল্পগুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন দিদির দূতরা। এগুলি মূলত শিক্ষাক্ষেত্র এবং যুবক-যুবতীদের সহযোগিতার জন্য বাস্তবায়িত করা হচ্ছে।
মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য বিরাট ঘোষণা করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
দ্বিতীয় পর্যায়ে, লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, সমব্যথী, শিশুসাথী প্রকল্পগুলি নিয়ে বিস্তারিতভাবে মানুষের কাছে তুলে ধরা হবে এবং কোনো অভিযোগ থাকলে তা সংগ্রহ করবেন দিদির দূতরা। মূলত এই প্রকল্পগুলি সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবার ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং মহিলাদের আর্থিক ভাতা প্রদান সংক্রান্ত প্রকল্প।
তৃতীয় পর্যায়ে, রাজ্য সরকারের আবাস যোজনা এবং তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় রাজ্য সরকারের নির্দিষ্ট বরাদ্দ সম্পর্কে অবহিত করা এবং কোনো অভাব অভিযোগ থাকলে তা সংগ্রহ করা।
চতুর্থ পর্যায়ে, তফসিলি জাতি, উপজাতিদের বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য রাজ্য সরকার প্রদত্ত পেনশন নিয়ে অবহিত করা এবং মতামত সংগ্রহ করা।
পঞ্চম পর্যায়ে, লোকসংগীত শিল্পী, যাত্রাশিল্পী সহ-সংস্কৃতিক ক্ষেত্রের আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শিল্পীদের রাজ্য সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাতা প্রদান সংক্রান্ত বিষয়ে অবহিত করা এবং মতামত সংগ্রহ করা।
আগামীকাল থেকে Mid Day Meal এ স্কুলে প্রতিদিন ডিম ও মাংস দেবে, সন্তানকে স্কুলে পাঠান, ক্লিক করুন।
ষষ্ঠ পর্যায়ে, পঞ্চায়েত এলাকায় গ্রামীণ পরিকাঠামো, উন্নয়ন, পানীয় জল এবং নিকাশি ব্যবস্থা, স্থানীয় ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি সহ পঞ্চায়েত ব্যবস্থা সম্পর্কে অবহিত করা এবং মানুষের মতামত সংগ্রহ করা।
আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত এই কর্মসূচির শুরুর আগে প্রস্তুতি চলছে। দিদির দূতদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
১১ই জানুয়ারি থেকে দিদির সুরক্ষা কবজ এবং দিদির দূত এই দুটো কর্মসূচি রাজ্যজুড়ে শুরু হয়ে যাবে। ১১ই জানুয়ারি থেকে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত তৃণমূলের তরফে এই কর্মসূচি রাজ্য জুড়ে চলবে।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই নতুন প্রকল্প দুয়ারে সরকারের মতোই সাড়া দেবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা।
Written by Rajib Ghosh.