রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (Dearness Allowance) নিয়ে দীর্ঘদিনের আইনি লড়াইয়ে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের রায় (Supreme Court of India) এক নতুন মোড় এনেছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারকে আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে কর্মীদের বকেয়া ২৫% ডিএ মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই রায় রাজ্যের সরকারি কর্মীদের মধ্যে আশার আলো জাগালেও, কীভাবে এই বকেয়া টাকা পরিশোধ করা হবে, তা নিয়ে জল্পনা ও উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে। সরকারের তরফে এখনও কোনও স্পষ্ট বার্তা না আসায় কর্মীদের মনে অনিশ্চয়তা ঘনীভূত হচ্ছে।
মহার্ঘ ভাতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, রাজ্য সরকারকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে বকেয়া ২৫% ডিএ পরিশোধ করতে হবে। এই রায় রাজ্যের লক্ষ লক্ষ সরকারি কর্মীদের জন্য একটি বড় জয় হিসেবে দেখা হচ্ছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ-র দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। তবে, এই টাকা কীভাবে এবং কখন দেওয়া হবে, তা নিয়ে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেনি রাজ্য সরকার। এই অবস্থায় কর্মীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট কোনও মন্তব্য করেননি। উত্তরবঙ্গ সফরের পথে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নে তিনি শুধু বলেছেন, “আদালতের বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না। আমরা আইন মেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।” তাঁর এই বক্তব্য কর্মীদের মধ্যে আরও উদ্বেগ বাড়িয়েছে। অনেকে মনে করছেন, সরকার হয়তো আইনি জটিলতার আড়ালে বকেয়া ডিএ পরিশোধে টালবাহানা করতে পারে। আবার রিভিউ পিটিশন করে কাল বিলম্ব করতে পারে।
আরও পড়ুন, ৩০০ টাকা কমে গেল রান্নার গ্যাসের দাম। কিভাবে এই সুবিধা পাবেন জেনে নিন
সরকারি কর্মীদের আশঙ্কা
রাজ্য সরকারি কর্মীদের একটি বড় অংশের অভিযোগ, সরকার ডিএ প্রদানে ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব করছে। তাঁদের আশঙ্কা, রাজ্য সরকার আবারও আইনি পথের আশ্রয় নিয়ে এই রায় কার্যকর করতে দেরি করতে পারে। এরই মধ্যে ডিএ মামলার অন্যতম কর্মী সংগঠন কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ নবান্নে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে, যা সরকার গ্রহণ করেছে। এই নোটিশে ডিএ পরিশোধের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপের দাবি জানানো হয়েছে।
বকেয়া মহার্ঘ ভাতা কিভাবে পাবেন?
সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার বকেয়া ডিএ পরিশোধের জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করছে। জানা গেছে, এই টাকা কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যাকাউন্টে (PF Account) জমা দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে। তবে, এই পরিকল্পনা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হয়নি। সময়সীমা নিয়েও কোনও স্পষ্টতা নেই, যা কর্মীদের মধ্যে হতাশা বাড়াচ্ছে। অনেক কর্মী মনে করছেন, এই ধরনের পরিকল্পনা সরকারের আর্থিক সংকট মোকাবিলার কৌশল হতে পারে, যাতে তাৎক্ষণিকভাবে নগদ অর্থ প্রদানের চাপ কমানো যায়।
কর্মীদের দাবি ও বর্তমান ডিএ
রাজ্য সরকারি কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ এর দাবি জানিয়ে আসছেন। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা ৫৫% ডিএ পাচ্ছেন, যেখানে রাজ্যের কর্মীদের জন্য এই হার মাত্র ১৮%। সম্প্রতি রাজ্যের বাজেট অধিবেশনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৪% ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা (DA Hike) করেছেন, কিন্তু এটি কর্মীদের দাবির তুলনায় অনেক কম। এছাড়া, কর্মীরা সপ্তম বেতন কমিশন গঠনের দাবিও তুলেছেন, কারণ তারা এখনও ষষ্ঠ বেতন কমিশনের অধীনে বেতন ও ডিএ পাচ্ছেন। এদিকে কেন্দ্র সরকার ও অন্যান্য রাজ্য সরকার ৭ম বেতন কমিশন পেরিয়ে ৮ম বেতন কমিশন গঠনের পরিকল্পনা করছে।
একই সাথে আন্দোলন ও আইনি লড়াই
কেন্দ্রের সঙ্গে সমহারে ডিএ এর দাবিতে রাজ্যের কর্মীরা বহু বছর ধরে আন্দোলন ও আইনি লড়াই চালিয়ে আসছেন। একাধিকবার আদালতে জয় পেলেও, বকেয়া ডিএ- এর টাকা এখনও হাতে পাননি। কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, মাঝে মাঝে কিছু শতাংশ DA ঘোষণা করে কর্মীদের ক্ষোভ প্রশমিত করার চেষ্টা করছেন। এই পরিস্থিতিতে, কর্মীদের মধ্যে হতাশা ও আশঙ্কা ক্রমশ বাড়ছে। তারা প্রতিবাদ বিক্ষোভের পাশাপাশি আইনি পথে চাপ সৃষ্টি করে চলেছেন।
আরও পড়ুন, ২০০০ টাকা পেনশন বৃদ্ধি! হঠাৎ বড় সুখবর দিল রাজ্য সরকার
উপসংহার
সুপ্রিম কোর্টের রায় রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য একটি আশার আলো হলেও, সরকারের নীরবতা ও স্পষ্ট পরিকল্পনার অভাব তাদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। পিএফ অ্যাকাউন্টে ডিএ (Dearness Allowance) জমা দেওয়ার পরিকল্পনা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। কর্মীরা এখন অপেক্ষায় রয়েছেন সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের। এই ব্যাপারে পরবর্তী আপডেট পেতে EK24 News ফলো করুন।