পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনের দামামা বেজে উঠলো। প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই পঞ্চায়েতের আসন পুনর্বিন্যাস অর্থাৎ ডিলিমিটেশনের প্রক্রিয়া শেষ করার পরে খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। বুধবার এই খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়। জানা গিয়েছে, রাজ্য নির্বাচন কমিশন (State Election Commission) আগামী বছর ফেব্রুয়ারি অথবা এপ্রিল মাসে পঞ্চায়েত নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারে।
পঞ্চায়েত নির্বাচন এর Delimitation প্রক্রিয়ায় গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন বেশ কিছুটা বেড়ে গিয়েছে। পাশাপাশি পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের আসন বৃদ্ধি হয়েছে। আসন সংরক্ষণ এবং পঞ্চায়েতের আসন পুনর্বিন্যাস নিয়ে ২০ টি জেলার খসড়া তালিকা প্রকাশ হয়ে গিয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে এই খসড়া তালিকা প্রকাশ করার পর এই তালিকায় কোনো রাজনৈতিক দলের আপত্তি এবং মতামত থাকলে আগামী ২ নভেম্বরের মধ্যে জেলাশাসক বা নির্বাচন কমিশনের কাছে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিযোগ জানানো যাবে।
তারপরেই নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ নাগাদ ২০ জেলার আসন বিন্যাস এবং আসনের সংরক্ষণ নিয়ে চূড়ান্ত তালিকা নির্বাচন কমিশন প্রকাশ করবে।
২০১৮ সালের তুলনায় রাজ্যের গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন বেড়ে ৬২ হাজার ৩৬২ হয়েছে। পাশাপাশি পঞ্চায়েত সমিতির আসন বেড়ে ৯২১৭ এবং জেলা পরিষদের আসন বেড়ে হয়েছে ৯২৮টি।
নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করার পরে ডিসেম্বর মাস জুড়ে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সহ-সভাপতি এবং জেলা পরিষদের সভাধিপতি এবং সহ-সভাধিপতির পদ সংরক্ষণের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। নিয়ম অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনের পঞ্চায়েত নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি করার ২২ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয়।
পঞ্চায়েত নির্বাচন বা পঞ্চায়েত ভোট কবে হবে?
জানা গিয়েছে, জানুয়ারি মাস নাগাদ কমিশন পঞ্চায়েত নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারে। সেক্ষেত্রে জানুয়ারিতে বিজ্ঞপ্তি জারি হলে ফেব্রুয়ারিতেও পঞ্চায়েত ভোট সম্পন্ন হতে পারে। দিনলিপি নিয়েও কোনো অসুবিধা থাকার কথা নয়। কিন্তু ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত মাধ্যমিক পরীক্ষা রয়েছে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা রয়েছে ১৪ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত।
সবথেকে লাভজনক 5টি সরকারি সঞ্চয় প্রকল্প, একবার বিনিয়োগে ঝড়ের গতিতে বাড়বে টাকা।
সেই সময় পরীক্ষা চলার কারণে মাইক বাজানোয় নিষেধাজ্ঞা থাকবে। যার জেরে প্রচারে অসুবিধা হতে পারে। তাই ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন না হলে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পরে এপ্রিল মাসে পঞ্চায়েত ভোট হতে পারে বলে জানা গিয়েছে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের (Panchayat Election) প্রস্তুতি শুরু হয়ে যেতেই সম্ভাব্য দিনক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। এবার পঞ্চায়েত ভোট কয়টি দফায় হতে পারে? ২০১৮ সালে সারা রাজ্যে এক দফায় পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছিল। সেই সময় তৃণমূল কংগ্রেস ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের প্রায় ৩৪ শতাংশ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছিল।
এই বিষয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকেও বক্তব্য উঠে এসেছে। বিজেপির সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, দীর্ঘ দেড়- দু’বছর ধরে পৌরসভাগুলোর নির্বাচন বাকি রেখে রাজ্য সরকার নিজেদের সুবিধামতো সময়ে নির্বাচন করালো। এবার পঞ্চায়েত ভোটের ক্ষেত্রেও তাই করতে চাইছে। মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে ফেব্রুয়ারি মাসেই রাজ্য পঞ্চায়েত ভোট হবে। তার কারণ সিবিআই, ইডি যদি আরো বেশি সক্রিয় হয় তাহলে পরিস্থিতি তৃণমূলের পক্ষে খারাপ হতে পারে। তাই তার আগেই তৃণমূল নির্বাচন করে নিতে চাইছে।
আরও 3টি সরকারি ব্যাংকের লাইসেন্স বাতিল করলো RBI, আপনার একেউন্ট নেই তো? মোবাইলের মেসেজ চেক করুন।
রাজ্য নির্বাচন কমিশন পঞ্চায়েত ভোট রাজ্য পুলিশ দিয়েই করাতে চাইছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে নির্বাচন করানোর পক্ষে। বিজেপির পক্ষ থেকে একাধিকবার পঞ্চায়েত ভোট কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে করাতে হবে বলে দাবি করা হয়েছে। এই বিষয়ে বিজেপির দিলীপ ঘোষ বলেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশন সরকারের কথামত চলছে। তাদের নিজের কোনো অস্তিত্ব নেই। সরকার যা বলবে কমিশন তাই করবে। কলকাতা পৌরসভার নির্বাচনে জোর করে ভোট লুঠ করে নেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটেও তৃণমূল তাই করতে চাইছে। তা না হলে জিততে পারবে না তৃণমূল।
প্রসঙ্গত, হাওড়া পৌরসভার ৫০ টি ওয়ার্ড কে ৬৬ টি ওয়ার্ডে পরিণত করার প্রক্রিয়া চলছে। সে ক্ষেত্রে ২০২৩ সালে হাওড়া পৌরসভার ভোট হতে পারে। চলতি বছরে হাওড়া পুরসভার নির্বাচন থাকলেও তা করানো সম্ভব হয়নি।
ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের অধিকাংশ যে রাজনৈতিক দলের দখলে থাকবে, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে সেই দল যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে নির্বাচনে লড়াই করতে পারবে।
তাই ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের দখল নেওয়ার জন্য লড়াইয়ের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইছে সব রাজনৈতিক দল। গত পঞ্চায়েত নির্বাচন মে মাসে হলেও এবার যে পঞ্চায়েত নির্বাচন যে এগিয়ে আসতে পারে সেই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়। তিনি বিভিন্ন প্রশাসনিক বৈঠকে নির্দেশ দিয়েছিলেন বকেয়া কাজ তাড়াতাড়ি করতে হবে। পঞ্চায়েত নির্বাচন যেকোনো সময় ঘোষণা হয়ে যেতে পারে।
তাছাড়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান, গ্রীষ্মের দাবদাহের মধ্যে নির্বাচন করানোর যে অসুবিধা রয়েছে, সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন করে তুলনামূলক আবহাওয়া যখন একটু ভালো থাকবে, বিশেষ করে ঠান্ডার আমেজ থাকবে, সেই সময়ে ভোট করলে ভোটকর্মী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ভোটের কাজ করা সহ প্রচারের ক্ষেত্রে সুবিধা হবে।
প্রতি পরিবারে একটি করে স্মার্টফোন দিতে চলেছে সরকার, কিভাবে পাবেন।
কলকাতা পুরসভার নির্বাচন শীতের সময় হয়েছে। তারপরেও রাজ্যের অন্যান্য পুরসভার নির্বাচনগুলো গ্রীষ্মের অনেক আগেই সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে। এবারও পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে এখনো পর্যন্ত সেই পথেই হাঁটতে পারে কমিশন, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।
Written by Rajib Ghosh.