আজ সুপ্রীম কোর্টে SSC মামলার শুনানি ছিলো। এই শুনানিতে কি হলো, এবং পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিক টেট বা Primary TET 2014 মামলা নিয়েও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এলো, যাতে ঘুম উড়েছে প্রায় ৩৬০০০ প্রাথমিক শিক্ষকের। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের প্রাইমারী স্কুল বা হাইস্কুল, জেখানেই শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে, প্রত্যেকটি নিয়েই বিতর্ক হয়েছে। আর প্রত্যেক্টিতেই মামলা হয়েছে। যার জেরে মহা টেনশনে হাজার হাজার শিক্ষক ও চাকরিপ্রার্থী।
WBSSC Scam Supreme Court case status Update
গত ২২ এপ্রিল বেনিয়মের জেরে ২০১৬ সালের এসএসসির নিয়োগ (WBSSC Recruitment) প্যানেল বাতিল করেছে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court) চাকরি হারিয়ে পথে বসেছেন ২৫ হাজার ৭২৩ জন নিয়োগ পাওয়া প্রার্থী। তবে এর মধ্যে যারা যোগ্য ছিলেন তারা হাইকোর্টের সেই নির্দেশে চ্যালেঞ্জ করে যান সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court Of India). সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই সেই মামলার একটি শুনানি দিয়ে বলেছে যোগ্য এবং অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা আলাদা করা হবে। তাতে খানিকটা স্বস্তি পেয়েছেন তারা। আজ অর্থাৎ মঙ্গল বারের রায় কি হলো, জানতে খবরের শেষে দেখুন।
Primary TET 2014 Scam
তবে এবার চাকরি নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার্থীদের (Primary TET 2014) মধ্যে। কেননা সিবিআই এর তদন্ত করা রিপোর্টে প্রচুর বেনিয়ম দেখেছে আদালত এই বছরের পরীক্ষাতেও।
আর তার জেরে এই পরীক্ষা (Primary TET Exam) আদৌ বৈধ কিনা সে নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। ফলে আবারও চাকরি হারানোর আশঙ্কায় ভুগছেন রাজ্যের হাজার হাজার নিয়োগ পাওয়া প্রার্থী। ২০১৪ সালের প্রাইমারি টেট পরীক্ষা নিয়ে কেস উঠেছিল বিচারপতি রাজশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চে। সেই কেসের তদন্তের দায়ভার আদালত দেয় সিবিআই (CBI) এর ওপর। এরপর সিবিআই আদালতের কাছে তার রিপোর্ট পেশ করলে একগুচ্ছ দুর্নীতি উঠে আসে তাতে।
যেমন টেটের (Primary TET Result) ফলাফল সংক্রান্ত পর্ষদের ভুয়ো ওয়েবসাইটে নাম পাওয়া যায় অনেক চাকরি প্রার্থীর। অনেকে আবার ভুয়ো ইমেইলের মাধ্যমেও জমা করেছিলেন চাকরির জন্য টাকা। এই সবের ভিত্তিতে সেই প্রার্থীদের অযোগ্য বলা যায় কিনা তার বিচার করার জন্য আদালত বলেছিল সেই বছরের পরীক্ষার ওএমআর সিট (OMR Sheet) গুলি খুঁজে বের করতে। বস্তুত সেই সবেরও কোন হদিস পায়নি সিবিআই।
এরপর উত্তরপত্রের স্ক্যানড কপি আদালত চাইলে তাকে কেন্দ্র করে আবার সামনে আসে একাধিক দুর্নীতি। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের প্রাইমারি টেট (Primary TET) পরীক্ষার ভিত্তিতেই নিয়োগ হয় ২০১৬, ২০১৭, ২০২০ এবং ২০২২ সালে। এই সব বছরেই পর্ষদের উত্তরপত্রের স্ক্যানড প্রতিলিপি তৈরি করার দায়িত্বে ছিল এস বসুরায় এন্ড কোম্পানি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই কোম্পানিকে উত্তরপত্র স্ক্যান করার জন্য আদৌ কোনো টেন্ডারই দেয়নি পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ (WBBPE).
অবৈধভাবেই সেই সব OMR এর প্রতিলিপি তৈরি করা হয়েছিল। এখানেই দুর্নীতি (Primary TET Scam) শেষ নয়। সেই সময়ে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি ছিলেন মানিক ভট্টাচার্য। সিবিআইের রিপোর্টে দেখা গেছে উত্তরপত্র স্ক্যানের দায়িত্বে থাকা এস বসুরায় কোম্পানি ওএমআর প্রতিলিপি অফিশিয়াল ইমেইলে না পাঠিয়ে পাঠিয়েছিল মানিক ভট্টাচার্যের ব্যক্তিগত ইমেল মারফত। এই সবের জেরে ধোঁয়াশা গভীর হতে থাকে আদালতের সামনে।
এদিকে আবার প্রশ্ন উঠেছে অল বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং অ্যাচিভার্স অ্যাসোসিয়েশন (ABTTAA) এর ভূমিকা নিয়েও। সিবিআই এর জমা করা রিপোর্টের ভিত্তিতে দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে সেই সংস্থাতে। যার জেরে ধৃত হয়েছেন সেখানকার প্রেসিডেন্ট তাপস মন্ডল। রাজ্যের বহু কলেজের মালিকানা রয়েছে এই সংস্থার হাতে। সিবিআই এর দাবি, Primary TET নিয়োগে দুর্নীতি করে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে মোট ৪ কোটি ১২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা এজেন্ট মারফত তাপস মণ্ডল।
এই Primary TET দুর্নীতির ক্ষেত্রে কুন্তল ঘোষের সঙ্গে আঁতাত ছিল তাপসের। যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে আর তার পরিবর্তে ফেল করা প্রার্থীদের পাশ করিয়ে দেওয়া হয়েছে চাকরি। এই ভাবেই দেদার দুর্নীতি করেছেন তারা। এখন এই সব সূত্রের ভিত্তিতে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে ২০১৪ সালের টেট নিয়োগ প্রক্রিয়া (Primary TET 2014 Recruitment) নিয়ে। আদৌ এই নিয়োগ বৈধ তো?
যদিও সেই সবের উপযুক্ত প্রমাণ এখনোও সিবিআই পেশ না করতে পারায় চূড়ান্তভাবে কিছুই বলতে পারছেনা আদালত। আর যতদিন এরকম চলবে ততদিন রায় দেওয়াও সম্ভব নয় মামলার। তবে আদালতের মন্তব্য, “সত্যিটা ঠিকই প্রমাণিত হবে। আর তাতে যদি এই সব কুকর্মের স্বপক্ষে প্রমাণ মেলে তবে শুধু ২০১৪ এরই নয়, ২০১৬, ২০১৭, ২০২০ এবং ২০২২ এর নিয়োগ সমস্ত টেটের নিয়োগ (Primary TET) বাতিল করবে হাইকোর্ট?
ফলে এসএসসির (WBSSC) থেকেও বেশি চাকরি যাওয়ার প্রাইমারী টেট তথা ২০১৭ সাল থেকে নিয়োগ হওয়া সমস্ত প্রাথমিক শিক্ষকদের ক্ষেত্রে। আগামী জুন মাসে এই Primary TET মামলার শুনানি করবে হাইকোর্ট। দেখা যাক তখন কি বিচার আসে। আর এই নিয়ে ইতিমধ্যেই চিন্তার ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে বর্তমান সকল প্রাথমিক শিক্ষকদের। এবারে এই বিপুল পরিমাণ নিয়োগ বাতিল হলে রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার কি হবে সেই নিয়ে চিন্তায় অনেকে।
SSC মামলার আজকের আপডেট
আজ সুপ্রিম কোর্টে SSC মামলার শুনানি ছিলো। কিন্তু সময়ের অভাবে এই মামলার শুনানি আজ হলো না। মঙ্গলবার এই মামলার শুনানি হবে। সুপ্রিম কোর্টের মহামান্য প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় আজ জানিয়েছেন, মঙ্গলবার মামলাটির শুনানি হতে চলেছে। আর আরও একদিন অপেক্ষা করতে হবে এই মামলার আপডেট পাওয়ার। সঙ্গে থাকুন।
SSC মামলার আপডেট, ৭ই মে ২০২৪
আজকের শুনানিতে SSC মামলা নিয়ে অবশেষে সুপ্রিমকোর্টে নিজের অবস্থান নির্দিষ্ট করলো রাজ্য সরকার তথা মধ্য শিক্ষা পর্ষদ (WBBSE). আজ পর্ষদের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, হাইকোর্টের এই রায়ের ফলে ১৭ থেকে ১৮ হাজার কার্যত যোগ্য শিক্ষক ভুক্তভোগী। যাদের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। যোগ্য এবং অযোগ্য বাছাই করা সম্ভব হলে, এঁদের চাকরিতে বহাল রাখা হোক। মাথা ব্যাথা হচ্ছে বলে পুরো মাথা কেটে দেবো, এটা হতে পারে না। সবার চাকরি চলে গেলে হটাত করে শিক্ষক পাবো কোথায়?
এদিকে প্যানেল বহির্ভূত শিক্ষকদের যে ১২% সুদ সহ বেতন ফেরতের নির্দেশ দিয়েছে, তার বিপক্ষেও সরব হলেন SSC এর আইনজীবী জয়দীপ গুপ্ত। তার যুক্তি, বেতন ফেরতের নির্দেশ যুক্তিযুক্ত নয়। এই ক্ষেত্রে আদালত বিভাজন করে দিয়েছেন বলে তিনি দাবী করেন।
বিরতির পর ফের এজলাসে মামলা শুরু হয়, এবং মাম্লাকারীর আইনজীবী জানান, যে OMR শীট উদ্ধার হয়েছে তা, ৬৫ বি এভিডেন্স আইন অনুযায়ী কোনও আইনি বৈধতা নেই।
এদিকে চাকরিহারাদের আইনজীবী প্রতীক ধরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রমাণ নেই অথচ এক কথায় ২৬ হাজার চাকরি চলে গেল! আরো বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
Written by Nabadip Saha.
চাকরিজীবীরা PF Balance কিভাবে চেক করবেন? প্রতিমাসে টাকা ঢুকেছে কিনা, সুদ কত? এইভাবে চেক করুন